ইট ভাটায় সংবাদ সংগ্রহ করতে যেয়ে সাংবাদিক লাঞ্ছিত থানায় অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিনিধি :
সাতক্ষীরা বিনের পোতা খেজুরডাঙ্গা এলাকায় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। অবাধে পোড়ানো হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত কাঠ ও টায়ার। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। স্বাস্থ্য-ঝুঁকিতে পড়ছে জনসাধারণ। এসব রোঁধে প্রশাসনিক তৎপরতা না থাকাকে দায়ী করছেন জলবায়ু পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির তথ্যমতে, জেলায় ১শ’৪০টি ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু সদর উপজেলাতেই আছে অর্ধ-শতাধিক।
গতকাল ২৫/১২/২০২২ আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে সাংবাদিক কামরুল হাসান গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সরজমিনে গিয়ে দেখেন, এইচ বি ব্রিকসের স্বত্বা অধিকারী শওকত আলীর ইটভাটাই পড়ানো হচ্ছে ফলজ কাঠ ও টায়ারের গুঁড়া এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাইয়ে অনুমোদন ছাড়াই স্কেভেটর দিয়ে বেতনা নদীর ওয়াপদার মাটি কেটে গভীর খনন করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ভাটা মালিক শওকতের কাছে জানতে চাইলে, তিনি প্রতিবেদকের কোন কথার জবাব না দিয়ে তাকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন। এবং তাকে মারতে উদ্যত হন। ভাটা মালিক শওকত আলী আস্ফালন করে বলেন তুই যদি কোন পত্র পত্রিকার রিপোর্ট করিস তাহলে তোর সাংবাদিকতার স্বাদ মিটিয়ে দেব প্রকাশ্যে জীবন নাশের হুমকি দেন। এ বিষয়ে সাংবাদিক কামরুল হাসান জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন বলে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদেরকে জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত বেতনা নদী ও তালার কপোতাক্ষ নদীর দু’ধারে ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে অর্ধ-শতাধিক ইটভাটা। ইট ও ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর কোন আইনই এসব ভাটাগুলোতে মানা হয়না। পুড়ছে কয়লার বদলে কাঠ। জেলার অধিকাংশ ভাটা ঝিকঝাক কিলন পদ্ধতির ব্যবহার নেই। এদের মধ্যে অধিকাংশ ভাটা পুরনো ফিড পদ্ধতির। কালো ধোয়ায় বিপন্ন পরিবেশ তয়াক্কা করছে না হাইকোর্টের নির্দেশনা। অধিকাংশ ভাটা মালিক হয়েছেন লেবার শ্রমিক থেকে ভাটা মালিক বনেছেন, হয়ে উঠেছেন ভূমি দস্যু কালো টাকার মালিক।
তথ্য অনুসন্ধানে আরো জানা যায় খেজুরডাঙ্গা এলাকার মৃত তকিবারের ছেলে শওকাত আলী ও তার ভাই লেয়াকাত আলী হায়দার আলী এরা অতীতে ইটভাটার লেবার শ্রমিকের কাজ করেছেন। হঠাৎ করেই আঙ্গুল ফুলিয়ে কলাগাছ বনেছেন তারা, বাংলায় একটা প্রবাদ আছে গায়ে মানে না আপনি মোড়ল। ঠিক তাদের চরিত্র তারা তুলে ধরেছেন গণমাধ্যম কর্মী কে লাঞ্ছিত করে। এসকল নিবন্ধন অনুমোদনহীন ইটভাটা কি ভাবে কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে এই প্রসঙ্গে
ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলামের মুঠোফোনে জানতে চাইলে, তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
পরিবেশ বিপন্নের জন্য অনেকাংশে দায়ী অবৈধভাবে পরিচালিত এসব ইটভাটা। আর তদারকির জন্য প্রশাসনের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন জলবায়ু পরিষদের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জেলা জলবায়ু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাধব দত্ত বলেন, সাতক্ষীরায় দেড় শতাধিক ভাটা রয়েছে। এর কিছু বৈধ,কিছু অবৈধ। ভাটায় কাঠ পোড়ানোর ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে, সেটা খুবই ভয়ানক বিষয়। আমরা পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে আছি। তার মধ্যে ভাটায় যে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে, সেটি রোঁধে প্রশাসন নির্বিকার। করোনাকালে আমরা শ্বাসকষ্টে ভুগেছি।
প্রতিবেশ-পরিবেশ যদি বজায় রাখা না যায়, তবে সবচেয়ে ক্ষতি হবে মানুষের। পরিবেশ অধিদপ্তর যদি কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, প্রশাসন যদি ব্যবস্থা না নেয়, তবে আমাদের আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প থাকবেনা।
লোকবল সংকটের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেনা বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম।
তিনি জানান, আমরা উদ্যোগ নেব। তবে আমাদের লোকবল খুবই কম। ট্রান্সপোর্ট নেই। জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটও খুবই কম। তারপরেও আমরা ভাটা মালিকদের নোটিশ করেছি। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অধিদপ্তর থেকে ম্যাজিস্ট্রেট আসবে। তখন আমরা ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।