যশোরের নওয়াপাড়া কতৃপক্ষের উদাসীনতা ভৈরব নদের বেহাল দশা
স্টাফ রিপোর্টার:
কতৃপক্ষের উদাসীনতা ভৈরব নদের বেহাল দশা বন্ধ হয়ে গেছে নদের স্বাভাবিক স্রোতধারা। অব্যাহত দখল-দূষণ, অপরিকল্পিত নদী ড্রেজিং, বিআইডব্লিউটিএর উদাসীনতা, অপরিকল্পিত ঘাট নির্মাণ ও ঘাট মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতায় প্রাণ যায় যায় অবস্থা ভৈরব নদের। ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে নদের স্বাভাবিক স্রোতধারা। পলিজমে ভরাট হয়ে আসছে নদের তলদেশ। দুই তীরেই জাগতে শুরু করেছে চর।
ফলে ভৈরব নদের ওপর নির্ভরশীল যশোরের শিল্প ও বন্দর নগরী নওয়াপাড়া ঘিরেও বাড়ছে শঙ্কা। দখলদারদ ও স্বেচ্ছাচারী ঘাট মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএকে নদ বাঁচাতে অচিরেই কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের দাবি তুলেছেন সচেতন মহল।
সরেজমিন দেখা গেছে, নওয়াপাড়া নদীবন্দরের ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় অর্ধ কিলোমিটারজুড়ে নদীর দুই তৃতীয়াংশ চর জমে ভরাট হয়েছে। এ ছাড়া নদীবন্দরের নওয়াপাড়া জুট মিল সংলগ্ন এলাকা, বেঙ্গল খেয়াঘাট থেকে নওয়াপাড়া মাছ বাজার পর্যন্ত, নওয়াপাড়া গ্লোব ঘাট, তালতলা ঘাট সংলগ্ন এলাকায় অধিক পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে নদীতে খেয়া পারাপারেও চরম বিড়ম্বনা দেখা দিয়েছে।
বিআইডব্লিটিএ সূত্র জানা যায়, গত ২০২১ সালের ২৪ জুলাই থেকে বিআইডব্লিউটিএ-এর প্রকৌশল (সংস্কার) বিভাগের আওতায় ভৈরব নদ সংস্কার তথা ড্রেজিং শুরু হয়। বিআইডব্লিউটিএ’র দুইটি ড্রেজার মেশিন ভৈরব নদে এ খননকাজ শুরু করে। অভিযোগ রয়েছে, শুরু থেকেই লোক দেখানো ড্রেজিং কার্যক্রম চালায় বিআইডব্লিউটিএ এবং একটি ড্রেজার বছরব্যাপীই বন্ধ থাকতে দেখা যায়।
অপর মেশিনটি দিয়ে দায়সারা ড্রেজিং কার্যক্রম চালানো হয়, যা নদীবন্দরের কোনো কাজেই আসেনি। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিআইডব্লিউটিএ’র প্রকৌশল (সংস্কার) বিভাগের আওতায় ভৈরব নদ সংস্কারের নামে চলা ড্রেজিং কার্যক্রমে দু-চারজন বালু ব্যবসায়ীর স্বার্থরক্ষা ছাড়া বন্দরের কোনো কাজে আসেনি। বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএর ওই মেশিনটিও খুলনা অংশে কাজ করছে। ফলে ভৈরব নদের নওয়াপাড়া অংশের দশা আরও শোচনীয় হয়ে দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে নওয়াপাড়া হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফাল্গুন মণ্ডল বলেন, ভৈরব নদকে ঘিরে হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন, মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন ও ব্রোকার ইউনিয়নের ৫০ হাজারের অধিক শ্রমিক ও তাদের পরিবার প্রত্যক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে। এই নদীনির্ভর শত শত ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবার। তিনি দাবি করেন, এ নদকে ঘিরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ লক্ষাধিক মানুষ টিকে আছে।
কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ এ বন্দরের ক্ষেত্রে বরাবরই চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে আসছে, ফলে নদীটি ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে গেছে। আমরা একের পর এক আন্দোলন-সংগ্রাম করে এলেও সে বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ইতিমধ্যেই আমরা নদী খননসহ গাইড ওয়াল নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়টি নিয়ে নওয়াপাড়ার বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা হলে তারা জানান,
শিল্প ও বন্দর নগরী নওয়াপাড়াকে টিকিয়ে রাখতে হলে জরুরিভাবে নদীকে দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা ও ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করে নদীর স্বাভাবিক স্রোতধারা ফিরিয়ে আনতে হবে।
অভয়নগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীর বলেন, ভৈরব নদ না বাঁচলে ধ্বংস হয়ে যাবে নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ী মোকাম। পথে বসবে হাজার হাজার পরিবার। তিনি জানান নদ বাঁচাতে বন্দর ব্যবহারকারী, স্থানীয় সচেতন মহল, জনপ্রতিনিধি নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে সাথে আলোচনা সাপেক্ষে পরিকল্পিতভাবে নদী খননের পাশাপাশি কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা হবে।
নওয়াপাড়া সার, খাদ্য, শস্য ও কয়লা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) সহ-সভাপতি শাহ জালাল হোসেন বলেন, এ মোকামে প্রতিনিয়ত ২০০ থেকে ৩০০ ছোট বড় জাহাজ কার্গো, বার্জ, সার, গম, ভুট্টা, সিমেন্ট, ভুষিমাল ও কয়লা নোঙর করে থাকে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই বন্দরে পণ্য উঠানামা করে। ড্রেজিং না করলে ধ্বংস হয়ে যাবে ব্যবসায়ী মোকাম। বেকার হয়ে পড়বে ৩৫ হাজার হ্যান্ডলিং শ্রমিক। পথে বসবে ব্যবসায়ীরা।
এ ব্যাপারে নওয়াপাড়া নদীবন্দরের সহকারী পরিচালক মাসুদ পারভেজ নদী দখল, দূষণ ও নদী ভরাট হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ভৈরব নদকে রক্ষা ও শ্রমিক ব্যবসায়ীদের নানামুখী সুযোগ সৃষ্টিতে বৃহৎ পরিকল্পনা নিয়ে ইতিমধ্যে বিআডব্লিউটিএ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ পরিকল্পনা গৃহীত হলে নওয়াপাড়া নদীবন্দর তার হারানো যৌবন ফিরে পাবে বলে তিনি দাবি করে বলেন, নওয়াপাড়া নদীবন্দর রক্ষায় সম্প্রতি অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে যা চলমান থাকবে।
Please follow and like us: