সুপেয় পানির দাবিতে শ্যামনগরে ওয়াটার মার্চ ও মানববন্ধন
অনাথ মন্ডল, শ্যামনগরঃ
বাংলাদেশের উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য সুপেয় পানির সর্বজনীন, ন্যায্য ও টেকসই প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে সরকারি বরাদ্দ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির সাথে সাথে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বন্ধ করা, এলাকাভিত্তিক বড় বড় পুকুর, খাল, জলাশয় খনন করে তাতে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা, খাসজমিতে মিঠা পানির আধার তৈরি করার দাবি জানিয়েছে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের যুব, নারী, পুরুষ, পানি সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ২০২২ উপলক্ষে ১৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের সামনে ‘পানি অধিকার মানবাধিকার, উপকূলীয় সকল মানুষের পানি অধিকার নিশ্চিত কর’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান, লিডার্স, একশনএইড বাংলাদেশ, উপজেলা যুব ফোরাম এবং সিডো আয়োজিত উপকূলজুড়ে পানি অধিকার প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণকারীরা এই দাবি জানান।
শ্যামনগর উপজেলা যুব ফোরামের সভাপতি মোঃ মোমিনুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাষ্টার নজরুল ইসলাম।
এসময় উপস্থিত ছিলেন শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুমন, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন জলবাযু সহনশীল ফোরামের সভাপতি ও ত্রিপাণি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ধনঞ্জয় কুমার মিস্ত্রী, এ্যাকশন এইড শ্যামনগর উপজেলার ম্যানেজার মোসলেম উদ্দীন লস্কর, পিপীলিকা ইয়থটিমের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক উম্মে হুমায়রা, লিডার্স এর মোঃ শওকত হোসেন, পরিতোষ কুমার বৈদ্য প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, পানির অধিকার মানবাধিকারের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বাংলাদেশে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর পানি অধিকার সুরক্ষা করা না গেলে অন্যান্য মৌলিক মানবাধিকারও তাতে ক্ষুন্ন হবে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে পানির সংকট নতুন নয়। সুপেয় পানির সংকট উপকূলীয় ঝুঁকিগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি। বিশেষ করে সমুদ্র তীরবর্তী অবস্থান, সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত এবং অপরিকল্পিত ব্যবহারসহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা কারণে হুমকির সম্মুখীন উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর পানি অধিকার। একদিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে পানির উৎসগুলোর লবণাক্ততা, অন্যদিকে ভূ-নিম্মস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় অনেক গভীর নলকূপেও পানি উঠছে না।
বক্তারা আরো বলেন, সুপেয় পানির সংকটের কারণে উপকূলের মানুষ অন্যান্য নানা সমস্যায় পড়ছেন। খাবার পানি, রান্নাবান্নাসহ দৈনন্দিন কাজে লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে অনেকেই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। নারীদের ক্ষেত্রে খিঁচুনি, জরায়ুর সমস্যাসহ গর্ভবতী নারীদের বিবিধ ঝুঁকি বাড়ছে। দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে অতিরিক্ত শ্রমঘন্টা ব্যয় হচ্ছে, আবার নিপীড়নের শিকারও হচ্ছেন অনেকেই। পানি কিনে খেতে গিয়ে পরিবারগুলোতে অর্থনৈতিক চাপ বাড়ছে। এবছর শীত শুরুর সাথে সাথে পানির সংকট আরো ঘনীভুত হচ্ছে। তাই উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে জরুরিভাবে কার্যকর ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর সুপেয় পানি সংকটকে জরুরি বিবেচনায় নিতে জন্য নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ তথা সুপেয় পানি অধিকার নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের উপর বক্তারা গুরুত্বারোপ করেন।
Please follow and like us: