রোজা পর্যন্ত দেশে কোনো খাদ্যসংকট হবে না: মন্ত্রিপরিষদ সচিব
অনলাইন ডেস্ক :
আগামী রোজা পর্যন্ত দেশে কোনো খাদ্যসংকট হবে না বলে জানিয়েছেন বিদায়ী মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) সচিব কমিটির বৈঠক শেষে সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগামী জুন পর্যন্ত খাদ্যের মজুতে কোনো ঘাটতি হবে না।
১৬ লাখ টনেরও বেশি খাদ্য মজুত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সুতরাং আমরা একটা স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতিতে রয়েছি।’
ওএমএস কর্মসূচির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওএমএসসহ বিভিন্ন যে খাদ্য সহায়তা করা হচ্ছে, সেগুলো চলবে। অর্থাৎ কম দামে খাদ্য সহায়তাগুলো বন্ধ হচ্ছে না।
কোনো অসুবিধা না হওয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী রোজা পর্যন্ত আমাদের কোনো খাদ্য সংকট হবে না। বিশেষ করে কৃষি সচিব এ নিয়ে গত ছয় মাস ধরে সমন্বয় করছেন। তাতে এই বোরো মৌসুম শেষ হয়ে গেলে আগামী মে মাস পর্যন্ত খাদ্য উদ্বৃদ্ধ থাকবে। যে খাদ্য মজুত আছে, তা ছাড়াও এবারে আমনের ফলন ভালো হয়েছে। খরা দীর্ঘায়িত হওয়ায় সুবিধা হচ্ছে যে নিম্নাঞ্চলেও আমন চাষ করা গেছে।’
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সূর্যের আলো বেশি থাকাতে আলোকসংশ্লেষণ ভালো ছিল। তাই ফসল ভালো হয়েছে। ধানে খুব একটা চিটা দেখিনি।
গমের সংকট নিয়ে তিনি বলেন, ‘গমের উৎপাদন আমাদের দেশের পরিবেশগত না। এটি হলো সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ১২টি দেশের। এসব দেশে যে গম উৎপাদন হয়, তার বিকল্প বের করা কঠিন। আমরা প্রায় ৫৮ থেকে ৫৯ লাখ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন করেছি। এটির খাদ্যমূল্য আরও বেশি। আর গম আনারও চেষ্টা চলছে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘গত ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমাদের সব সচিবের বৈঠক হয়েছে, আজ তারই একটি ফলোআপ বৈঠক হলো। আমাদের সব সচিবের কাছ থেকে ব্যয় সংকোচনের বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। যেমন- এন্টারটেইনমেন্ট বাবদ কত ব্যয় কমল, বিদ্যুৎ বাবদ কত কমল, তারপর পেট্রলের দাম কতটা কমছে, তার একটি পর্যালোচনা করেছি।’
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘জুন থেকে এ পর্যন্ত বিদ্যুতে প্রায় ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত খরচ কমানো সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তো প্রায় ৬০ শতাংশের বেশি কমে এসেছে। আর জ্বালানি খাতেও ৪০ শতাংশ খরচ কমেছে। বৈঠকে তা তুলে ধরা হয়েছে। সবাই তা চর্চা করছেন। এটিই আমাদের কাছে সবচেয়ে আদর্শ বলে মনে হয়েছে।’
কোন্ মন্ত্রণালয়ে সর্বোচ্চ সাশ্রয় হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বেশি সাশ্রয় করেছে। যা ৬০ শতাংশ। এরপর বিনোদন সাশ্রয় হয়েছে।
তিনি জানান, এরপর বিশ্বজুড়ে যে এ আর্থিক মন্দা চলছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তাদের প্রকল্প এ, বি ক্যাটাগরি করে দিয়েছে। সেই ক্যাটাগরিকে কঠোরভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে।
বৈদেশিক ঋণকে সঠিকভাবে কাজে লাগতে অনুরোধ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের জন্য ভালো হবে। যখন আমরা বৈদেশিক ঋণ নিই, তখন একটি বার্ষিক প্রজেকশন (প্রক্ষেপণ) দেখাতে হয়। যেমন- এই প্রকল্প বাস্তবায়নে আমাদের ৪০০ মিলিয়ন ডলার লাগবে। এখন আমরা যখন ৪০০ মিলিয়নের রিকুইজেশন দিয়ে দিই, তা খরচ করতে না পারলেও আমাদের ব্যবস্থাপনা খরচ কম আসে না। আমরা যদি ২০০ মিলিয়ন ডলারও খরচ করি, তখন ব্যবস্থাপনা খরচ দিতে হয় ৪০০ মিলিয়নেরই। যে কারণে এদিকটিতে বেশি নজর দেয়া হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সচিবদের বৈঠকে ২৪ দফা নির্দেশনায় যে কোনো সংকটের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। সেই সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি কোনো রাজনৈতিক বিষয় না। কোনো কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেলে; একমাস বা দুইমাস, সেটির জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।