রক্তযোদ্ধা রাজ বাবুর গল্প
জহর হাসান সাগর :
২০১৭ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবী কাজে নিয়োজিত সাতক্ষীরা জেলার কৃতি সন্তান ( রাজ বাবু )। একজন মুমূর্ষ রোগীর জীবন বেঁচে যাবে এক ব্যাগ রক্তে সাথে একটি পরিবারের সকলের হাসিমুখ ও প্রাণভরে দোয়া। এই আত্মতৃপ্তি থেকেই জীবন রক্ষার জন্য রক্তের সন্ধানে ছুটে চলেছেন দিন রাত, কারও কল পেলেই অস্থির হয়ে পড়েন রাজ বাবু । একের পর এক কল করতে থাকেন রক্তদাতাদের নাম্বারে, রক্তের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ঘুম হয় না তার। এই অস্থিরতা মানবপ্রেম, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। কারণ রক্তের অভাবে যেন কোনো মুমূর্ষু রোগীর জীবন থমকে না দাঁড়ায়। কোভিড-১৯ করোনার সময় থেমে ছিলনা রাজ বাবুর স্বেচ্ছাসেবী কর্মকান্ড, প্রতিনিয়ত ডোনার নিয়ে যাতায়াত করতো হসপিটালে।ও করোনা কালিন সময়ে অক্সিজেন সেবা প্রদান। সেই থেকে এখন পর্যন্ত থেমে নেই রাজ বাবুর স্বেচ্ছাসেবী কাজ। বর্তমানে তিনি ২০২০সালে দুইটা সেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্ঠীত করেন (মানব কল্যাণ ব্লাড ফাউন্ডেশন সাতক্ষীরা) ও( রক্তের স্পন্দন ৬৪ জেলা ) …ও সহ নেত্রকোণা ব্লাড ফাউন্ডেশন রক্তের সন্ধানে রাজশাহী ও পাটকেলঘাটা ব্লাড ব্যাংক ও রক্তের সন্ধান সংগঠনের সহ প্রতিষ্ঠাতা।
২০১৭ সালের ৬৪ জেলা রক্তযোদ্ধা পরিবারে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য হিসেবে কাজ করা শুরু করেন তিনি। পরে ২০১৭ সালে ৬৪ জেলার রক্তযোদ্ধা পরিবার নামক এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির (সাধারণ সম্পাদক ) ও খুলনা বিভাগ ও কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান। রক্তের স্পন্দন ৬৪ জেলা ও মানব কল্যাণ ব্লাড ফাউন্ডেশন সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পরিষদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রক্তের স্পন্দন ৬৪ জেলা ও মানব কল্যাণ ব্লাড ফাউন্ডেশন সাতক্ষীরা সংগঠনটি ভালোবাসার পরিবার বাংলাদেশের মধ্যে সর্ব বৃহত্তম একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসাবে ভূমিকা পালন করতে চাই । ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে আসছে। আমার চাওয়া সারাদেশে এই স্বেচ্ছাসেবী এর কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ুক, রক্তদানকে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
রক্তের প্রয়োজনে নিজ জেলা সহ বিভিন্ন জায়গার মানুষের জন্য কাজ করেন রাজ বাবু । তিনি জানান, এই কাজের জন্য প্রথমে তার পরিবার পছন্দ করত না কিন্তু এখন তাকে পরিবার সবসময় সাপোর্ট দেয়। এমনকি কারও রক্তের প্রয়োজন হলে তার মা সন্তানের ফোন নাম্বার দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। এটিকে পরিবারের বড় সমর্থন হিসেবে দেখছেন তিনি।
অন্যদের রক্তদানে উৎসাহিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, অন্যদের উৎসাহিত করার জন্য আমরা প্রথমে রক্তদানের উপকারিতাগুলো রক্তদাতাদের সামনে তুলে ধরি। একজন মানুষের রক্তের প্রয়োজন, তারা রক্ত পাচ্ছে না- এ অবস্থায় মানুষের কষ্টগুলো তাদের সামনে যখন তুলে ধরি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে, একজন সচেতন ছাত্র হিসেবে অবশ্যই তারা রক্তদানে উৎসাহিত হয়। অনেকেই নিয়মিত রক্তদান করে এবং অনেকেই আর্তমানবতার সেবায় সরাসরি কাজ করার জন্য আমাদের প্লাটফর্মে যুক্ত হয়।
রক্ত নিয়ে কাজ করার অনুভূতি জানতে চাইলে রাজ বাবু বলেন, রক্ত নিয়ে কাজ করার তাকে অনেক বাধা,অনেক মানুষের গালি, স্থানীয় এলাকার লোকজনের কাছে অনেক সমচেলনায় সম্মুখীন হতে হয়েছে আমার। কিন্তু আমি থেমে নেই রক্ত নিয়ে কাজ করা অনুভূতি অতুলনীয়। একজন মা, একজন বাবা অথবা একজন সন্তান যখন হাসপাতালের বিছানায় রক্তের জন্য হাহাকার করছে, পরিবারের সদস্যরা খুঁজে হয়রান কিন্তু রক্তদাতা পাওয়া যাচ্ছে না- এ অবস্থায় রক্তদাতা খুঁজে দিয়ে তাদের সাহায্য যারা করে তারাই শুধু এর আনন্দটা অনূভুতিটা বুঝতে পারবে। যতদিন বাঁচি মানুষের পাশে দাঁড়াবো এবং সেই সাথে মুমূর্ষ রোগীর রক্ত দানে এগিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।
সে সকলের কাছে দোয়াপ্রার্থী যেনো সব সময় মানুষের পাশে থাকতে পারে।
Please follow and like us: