সাতক্ষীরায় সেলুন মালিক চিত্তরঞ্জন আত্মহনন নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর কাহিনী
রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা :
সাতক্ষীরা সদরের তেতুলতলার চিত্তরঞ্জন আত্মহননের ঘটনার নেপথ্যে বেরিয়ে এসেছে নানা চাঞ্চল্যকর কাহিনী। ঘটনারনাটের গুরুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে এলাকার সচেতন মহল।
সাতক্ষীরা সদরের বাউখোলা গ্রামের শফিকুল ঢালীর মেয়ে মুক্তা খাতুন জানান, তিন মাস ধরে তার সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্রই উত্যক্ত করতো একই গ্রাম বকচরার শাহজাহান,মাউল ও মাহামুদুল। সহযোগিতার জন্য বলা হতো সেলুন মালিক চিত্তরঞ্জন রায় কে। চিত্তরঞ্জন রায়কে জানানোয় তিনি এর প্রতিবাদ করেছেন কয়েকবার। রাজী না হওয়ায় গত ৩ নভেম্বর দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে চিত্তরঞ্জনের সেলুনে যেে হাটে গরু কিনতে যাওয়া স্বামী সাইমুন ও শ্বাশুড়ি রানী খাতুনের সঙ্গে কথা বলার জন্য মোবাইল ফোন চাওয়ার একপর্যায়ে তাকে ধাক্কা মেরে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয় বকচরা গ্রামের ছাদরা সরদারের ছেলে মাহামুদুল।
এ সময় মাহামুদুল দোকানের মধ্যে তার উপর ঝাপিয়ে পড়লে চিত্তরঞ্জন বাধা দেয়। এরপরপরই মাহামুদুল সেলুনের দরজা লাগিয়ে বাইর থেকে শিকল তুলে দিয়ে ওই গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে শাহানাজ সরদার, লুৎফর রহমানের ছেলে মাউলকে ডেকে আনে। তার সঙ্গে চিত্তরঞ্জনের অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে তাকে ও চিত্তরঞ্জনকে মারপিটসহ চরম অপমান করা হয়। বৃহষ্পতিবার রাতে বকচরা বাইপাস মোড়ের চিন্নাই হোটেলের সামনে শাহানাজ, মাউল ও মাহামুদুল মোবাইল ফোনে চিত্তকে ডেকে নিয়ে যায়। তাকে পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে শাহানাজ।
এ সময় মাউল ও মাহামুদুল চিত্তর কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলা হয়। শনিবার গভীর রাতে ঘাসমারা ঔষধ খেয়ে মারা যায় চিত্তরঞ্জন। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে রবিবার সকালে বকচরার ইউপি সদস্য মুকুল হোসেন মোবাইল ফোনে ডেকে আনেন তার বাবা ও মাকে। মুকুল হোসেন তাদেরকে কোথাও কোন কথা বলার সূযোগ না দিয়ে কোন প্রকার দেনমোহরের টাকা পরিশোধ ছাড়াই তালাকনামায় সাক্ষর করিয়ে ঘর থেকে বের করে দেন।
সাক্ষর না দিলে খুন জখমের হুমকি দেন ওই মেম্মর। একপর্যায়ে তারা অসহায় হয়ে বাড়িতে চলে আসেন। স্বামী সাইমুনকে যৌতুক হিসেবে দেওয়া একটি সোনার আংটি ও ইজিবাইক কেনার সময় নেওয়া নগদ ২৪ হাজার টাকা পরে ফেরৎ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। গত ১২ নভেম্বর এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর তড়িঘড়ি করে আংটি ফেরৎ দেওয়া হয়।
নগদ টাকা কবে ফেরৎ দেওয়া হবে তা তারা জানেন না। এমনকি ইউপি সদস্যের হুমকি ধামকিতে তারা থানায় অথবা আদালতে মামলা করতে ভয় পাচ্ছেন। অভিযোগ করে মুক্তা খাতুন বলেন, অভিভাবকের মত তার পাশে দাঁড়াতে যেয়ে মেম্বর মুকুল হোসেন, মাহামুদুল, মাউল ও শাহাজানের ষড়যন্ত্রে চিত্ কাকাকে অকালে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হলো। অসহায় হয়ে গেল তার পরিবার। এমনকি বদনাম রটিয়ে দেনমোহর ছাড়াই তালাকনামায় সাক্ষর করিয়ে তার জীবনটাকে নষ্ট করে দেওয়া হলো।
এদিকে বকচরা গ্রামের শাহাদাৎ হোসেন ও মালেক মালী জানান, ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিচার ও শালিসের নামে মুকুল হোসেনের সিদ্ধান্ত মেনে না নিলে তাকে নানাভাবে হেনস্থা করা হয়। জোরপূর্বক তালাকনামায় সাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়। এ নিয়ে প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বুধবার সন্ধ্যায় বকচরা গ্রামের ইউপি সদস্য মুকুল হোসেন বলেন, তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। মুক্তা খাতুনের বাপের বাড়ির এলাকার ইউপি সদস্যের সঙ্গে কথা বলেই তালাকনামা প্রস্তুত করা হয়েছে।