শেরপুরে হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ, ওষুধ সংকট
নিউজ ডেস্ক:
শেরপুরে হঠাৎ করে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকেই। বুধবার (২ নভেম্বর) শেরপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২৮ জন ডায়রিয়ার রোগী। এছাড়া বহির্বিভাগে এক সপ্তাহে অন্তত সহস্রাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। আক্রান্ত রোগীদের পাতলা পায়খানার পাশাপাশি বমির প্রবণতা রয়েছে। ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ওষুধ ও স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, শেরপুর জেলা হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১৬টি সিট থাকলেও স্বাভাবিকভাবে ২০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে পারেন। তবে গত এক সপ্তাহ থেকে হঠাৎ করে শেরপুর পৌর এলাকাসহ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। আক্রান্তদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুরাও রয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও পল্লী চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নিয়ে কিছু লোক সুস্থ হলেও অনেককেই আসতে হচ্ছে হাসপাতালে। এক সপ্তাহে প্রায় ছয় শতাধিক ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। গতকাল বুধবার ২৪ ঘণ্টায় ১২৮ জন রোগী শেরপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর জেলা হাসপাতালের বহির্বিভাগে এক সপ্তাহে অন্তত সহস্রাধিক রোগী চিকিৎসা নেন।
হঠাৎ করে আশঙ্কাজনকভাবে ডায়রিয়া রোগী বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কোনো জায়গা খালি নেই। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদের হাসপাতালের মেঝেতে ও চলাচলের রাস্তা এবং সিঁড়ির নিচে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে এতো রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। জেলা হাসপাতালে দেখা দিয়েছে স্যালাইনসহ ওষুধ সংকট। তাই হাসপাতালের বাইরে থেকে স্যালাইন ও ওষুধ ক্রয় করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের।
রোগীর এক স্বজন জানান, সদর উপজেলার কামারেরচরে তার বাড়ির পাশে এক শিশু ডায়রিয়ায় মারা গেছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে এমন তথ্য নেই বলে জানান কর্মকর্তারা।
রোগী মোহাম্মাদ হামিদুর রহমান বলেন, প্রথমে ২-৩বার টয়লেটে যাই। এরপর অনর্গল পাতলা পায়খানা হতে থাকে। পরে হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করি।
সফিক মিয়া নামে এক রোগী বলেন, আমার পাতলা পায়খানা শুরু হওয়ার পর শরীর দুর্বল হয়ে যায়। পরে হাসপাতালে ভর্তি হই। এখানে এসে ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনি।
মুন্সীচরের অসুস্থ শিশুর বাবা আলমগীর মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামে ডায়রিয়ায় এক শিশু মারা গেছে। আমার ছেলেটাও ডায়রিয়া হওয়ায় ভয়ে আমি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি।
আব্দুর রহিম নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমার স্ত্রী তিন বার পায়খানা করার পর ডায়রিয়া শুরু হয়। তাই আমি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। তিন দিন ধরে তার চিকিৎসা চলছে। এখন কিছুটা সুস্থ ।
ফজিলা বেগম এক নারী বলেন, আমার এক রোগীকে ভর্তি করেছি। কিন্তু কোনো সিট নাই। ওষুধ নাই। অনেক কষ্ট হচ্ছে।
রোগীর স্বজন উম্মে কুলসুম বলেন, হাসপাতালে অনেক রোগী ভর্তি হয়েছে। জায়গা নাই। তাই মেঝেতে রাখছি, এখন পর্যন্ত রোগী সিটে তুলতে পারিনি। হাসপাতাল থেকে স্যালাইন দিয়েছিল। এখন আবার কিনতে বলছে।
শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ মৌসুমী ইসলাম বলেন, ডায়রিয়ার চিকিৎসায় ২-৩ মাসে যে ওষুধ লাগতো, এখন একদিনেই তা লাগছে। তাই ওষুধ ও স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে।
শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. জসিম উদ্দিন বলেন, গত কয়েক দিনে অন্তত ৫-৬ গুণ রোগী ভর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ওষুধ ও স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা পার্শ্ববর্তী উপজেলা, জেলা ও ময়মনসিংহ থেকে ওষুধ এবং স্যালাইন নিয়ে এসে সংকট সামাল দিচ্ছি। জনগণের অসচেতনতায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জনগণকে সচেতন করতে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।