জলবায়ু বিপর্যয় থেকে সুন্দরবন ও উপক‚ল সুরক্ষায় কাজ করছে সরকার
মাহফিজুল ইসলাম আককাজ :
জাতীয় সংলাপে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুন্দরবন ও উপকূল রক্ষায় কাজ করছে সরকার। দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের সুরক্ষা, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণসহ বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে জলবায়ু ক্ষতিপুরণ আদায়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বুধবার (২৬ অক্টোবর) জাতীয় সংসদ ভবনস্থ পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে ‘দক্ষিণ-পশ্চিম উপক‚লে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ‘লিডার্স’ এবং নাগরিক সংগঠন ‘সুন্দরবন ও উপক‚ল সুরক্ষা আন্দোলন’ আয়োজিত সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন ও উপক‚ল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র।
সংলাপে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাতক্ষীরা সদর-২ আসনের সংসদ সদস্য নৌ-কমান্ডো ০০০১ বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ও রুবিনা আক্তার এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করবেন লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মÐল। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)’র সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, কার্ক ইন একশন প্রতিনিধি মাটিলদা টিনা বদ্য, মানুষের জন্য ফাউÐেশনের আহসান ওয়াহিদ, স্ক্যান বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল, সিসিডিবি’র শেখ আব্দুল আলীম, অক্সফামের মাহবুব-উল হাসান, সুইস কন্ট্রাক্টের মো. শাহিদুজ্জামান পুলক, ওয়াল্ড কনসার্স বাংলাদেশের মসী মÐল, ফেইথ ইন একশানের নির্বাহী পরিচালক নৃপেন ক্সবদ্য, সাতক্ষীরার নাগরিক নেতা আনিসুর রহিম, পশুর রিভার ওয়াটারকিপার মো. নূর আলম শেখ, সাতক্ষীরার ভূক্তভোগী মাধবী রানী মÐল, বাগেরহাটের আজাদুল হক প্রমূখ।
সংলাপে পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, জলবায়ুপরিবর্তনের কারণে সুন্দরবনসহ উপক‚লীয় এলাকার ঝুঁকি নিরুপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ঝুঁকি মোকাবেলায় বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে মনিটারিং জোরদার করা হয়েছে। সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের বিকাশে সুনির্দ্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি এ সকল বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোকে কাজ করার আহŸান জানান। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রকল্প গ্রহণে সতর্ক হওয়ার আহŸান জানান পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। তিনি বলেন, বিগত দিনে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প নিলেও সেই সকল প্রকল্প জনজীবনে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় ভ‚মিকা রাখতে পারছে না। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী ভ‚ক্তভোগী জনগণের মতামতের ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সুন্দরবন রক্ষায় আন্তরিক। তবে সরকারের এই কাজে জনগণের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারের প্রকল্প গ্রহণে কারসাজির অভিযোগ উত্থাপন করেন সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। তিনি বলেন, নদী খনন ও জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হলেও তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আবার বিশেষ ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার জন্য বিশেষ ভাবে প্রকল্পের ডিপিপি দেওয়া হয়। এমনকি মন্ত্রীদের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকারি কর্মকর্তাদের অনীহা দেখা যায়। উপক‚লীয় অঞ্চলের উন্নয়নে পৃথক বোর্ড গঠনের প্রস্তাবের উপর গুরুত্বারোপ করে সংসদ সদস্য ক্সসয়দা রুবিনা আক্তার বলেন, উপক‚লীয় অঞ্চলকে উন্নয়নে বড় বাঁধা সমন্বয়হীনতা। এ জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয় বাড়ানোর পাশাপাশি পৃথক একটি সংস্থা গঠন করা জরুরী।
উপক‚লীয় জনগণের নিরাপদ খাবার পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধানে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে সরকার প্রকল্প নিয়েছে বলে জানান তিনি। বাপা সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, উপক‚লীয় এলাকায় মানবিক বিপর্যয় রোধ করতে হলে পরিবেশ ও প্রকৃতিকে বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবে অনুধাবন করতে হবে। স্থানীয় মানুষের সম্পৃক্ততায় একটি টেকসই, সমন্বিত ও বিভিন্ন মেয়াদী প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায় করতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক পরিমÐলে আমাদের ন্যায্য দাবিসমূহ আদায়ে যুক্তিযুক্ত ও শক্ত অবস্থান তুলে ধরার জন্য পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বাড়ানোর আহŸান জানান তিনি।
সংলাপে উত্থাপিত সুপারিশে বলা হয়, জলবায়ু ঝুঁকি, দারিদ্র্য ও বিপদাপন্নতার মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার অধীন উপক‚ল সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির (বিশেষ করে নগদ ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি) আওতা ও পরিধি বাড়াতে হবে। উপকুলীয় এলাকায় একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আদলে একটি বাড়ি একটি সেল্টার কার্যক্রম শুরু করতে হবে। ওই এলাকার সাইক্লোন শেল্টারগুলো সংস্কার এবং নারী ও শিশুবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে। উপক‚লীয় সকল মানুষের খাবার পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধান করতে হবে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে উপক‚ল উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে। ঝড়-জলোচ্ছাস, নদীভাঙ্গন ও ভূমিক্ষয় ঠেকাতে ব্যাপকহারে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি গ্রহণ এবং সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার পাশাপাশি উপকুলের রক্ষাকবচ সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।