বুধহাটা বিবিএম কলেজিয়েট স্কুলের নানা অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বুধহাটা বিবিএম কলেজিয়েট স্কুলের নানা অনিয়মের প্রতিকার ও ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে সভাপতি নির্বাচনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বুধহাটা বিবিএম কলেজিয়েট স্কুলের অভিভাবক ও নির্বাচিত সদস্যরা। রবিবার বেলা ১২টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এস, এম, এ সাঈদ ।
বুধহাটা বিবিএম কলেজিয়েট স্কুলের অভিভাবক ও নির্বাচিত সদস্যদের পক্ষে কলেজ শাখার নির্বাচিত সদস্য আতিকুল ইসলাম ও মোঃ আব্দুল লতিফ, স্কুল শাখার নির্বাচিত সদস্য এস, এম, এ সাঈদ, স্কুল শাখার নির্বাচিত সদস্য মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, নির্বাচিত সংরক্ষিত সদস্য মোছাঃ নাছিমা খাতুন সাংবাদিকদর উদ্দেশ্যে বলেন, সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ বুধহাটা বিবিএম (বাহাদুরপুর ভূবন মোহন) কলেজিয়েট স্কুল। স্বাধীনতা পূর্ব ১৯১৫ সালে এটি স্থাপিত হয়। শতবর্ষী এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এক সময় অত্র উপজেলার শ্রেষ্ঠতম বিদ্যাপিঠ হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ, বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল, অবকাঠামো সহ সামগ্রীক দিক ছিল খুবই প্রশংসিত। সাবেক অধ্যক্ষ চিত্তরঞ্জন ঘোষের সময়ে স্কুলের সামগ্রিক দিক ছিল উত্তরোত্তর উন্নতির দিকে। কিন্তু তার অবসর জনিত কারনে সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক আবু দাউদ প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে স্কুলটি তার অতীত ঐতিহ্য হারাতে শুরু করে। তার অদক্ষতা ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সাথে অনৈতিক যোগসাজসের কারনে এখানকার শিক্ষার পরিবেশে ধ্বস নেমেছে। শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ, ডোনার সদস্য নিয়োগ এবং মার্কেট বরাদ্ধে অনিয়ম ও অর্থ বানিজ্য, চাকুরীর মেয়াদ শেষ হলেও অধ্যক্ষ নিয়োগ না করে উক্ত প্রধান শিক্ষকের চাকুরির মেয়াদ বৃদ্ধি করা, ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে সভাপতির পছন্দের লোক ছাড়া অন্যদের প্রার্থী হতে না দেয়া, কারসাজির মাধ্যমে নির্বাচন হতে না দিয়ে কুট কৌশলে কমিটি গঠন, সভাপতির অবৈধ হস্তক্ষেপ ও বল প্রয়োগ, নির্বাচিত সদস্যদের মতামতকে আমলে না নেয়া এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে সভাপতি নির্বাচিত না হওয়া সহ নানা কারনে স্কুলটি আজ ধ্বংসের দ্বাপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।
একজন প্রধান শিক্ষকের যেসব গুণাবলী ও দক্ষতা থাকা দরকার তার অধিকাংশই নেই বর্তমান প্রধান শিক্ষক আবু দাউদ এর মধ্যে। এখানে নিয়মিত ক্লাস ও ক্লাস মনিটরিং না হওয়া, হোস্টেল ব্যবস্থা চালু রাখতে না পারা ও শিক্ষার অতীত সুন্দর পরিবেশ ধরে রাখতে না পারায় ছাত্রছাত্রী ভর্তি সংখ্যা ও পরীক্ষার ফলাফল দিনে দিনে অবনতির দিকে যাচ্ছে। শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে ভালো ব্যবহার না করা, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এ বি এম মোস্তাকিম এর সাথে অনৈতিক যোগসাজসে চলার কারনে এখানকার শিক্ষার পরিবেশে ও সামগ্রীক উন্নয়নে ধ্বস নেমেছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, এখানকার এসএমসি সভাপতি আশাশুনি উপজেলা চেয়ারম্যান এ বি এম মোস্তাকিম ও প্রধান শিক্ষক আবু দাউদ এর পারস্পারিক যোগসাজসের মাধ্যমে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ, ডোনার সদস্য নিয়োগ ও মার্কেট বরাদ্ধে নানা অনিয়ম-দূর্নিতি ও মোটা অংকের অর্থ বানিজ্য করা হয়েছে। স্কুলের বাংলা বিষয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক সিরাজুল ইসলামকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে, সাইফুল্লাহকে লাইব্রেরিয়ান পদে, মিঠুন মন্ডলকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে, সুজয় দাশকে ল্যাব এ্যাসিসটেন্ট পদে এবং শুভ সাধুকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে নিয়োগ দিয়ে অর্ধকোটি টাকার বেশি অর্থ বানিজ্য করা হয়েছে, যার সুষ্ঠ তদন্ত হওয়া দরকার।
অন্য প্রশ্নের জবাবে এস, এম, এ সাঈদ বলেন, ডোনার সদস্য নিয়োগে ১৮০ দিন আগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, মাইকিং, বিদ্যালয়ে নোটিশ প্রদানের নিয়ম থাকলেও তা যথাযথ অনুসরন না করে নামমাত্র কারসাজির বিজ্ঞপ্তি প্রদানের মাধ্যমে অন্যদেরকে বিরত রেখে সভাপতি মোস্তাকিমের পছন্দের লোক ইসমাইল হোসেন, তার ভাই আব্দুস সালাম ও পুত্র পিয়াস এর নামে হাতে হাতে স্কুলে আবেদন জমা দিয়ে ইসমাইল হোসেনকে ডোনার সদস্য করা হয়েছে, যা সম্পূর্ন অবৈধ ও অনিয়মতান্ত্রিক। এই সদস্য পদ বাতিল হওয়া আবশ্যক। উল্লেখ্য এই ডোনার সদস্য নিয়োগের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে সহকারী জজ আদালতে দেং ২৯৫/২২ নং একটি মামলা রুজু হয়েছে।
তারা অভিযোগ করে বলেন, ২০১৯-২০২০-২০২১ অর্থবছরে স্কুলের জায়গায় নির্মিত ১০০টি দোকানঘর অনিয়ম দুর্নীতি ও অর্থ বানিজ্যের মাধ্যমে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে সাধারন ব্যবসায়ীদের মাঝে দোকান বরাদ্ধ না দিয়ে কমিটির সদস্যদের নামে বেনামে কম মূল্যে বরাদ্ধ পাইয়ে দিয়ে বেশি দামে বিক্রি করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অর্থ বানিজ্য করা হয়েছে। এই বরাদ্ধের মধ্যে সভাপতি মোস্তাকিম, প্রধান শিক্ষক আবু দাউদ, ডোনার সদস্য ইসমাইল ও পূর্বের কমিটির অভিভাবক সদস্য সিরাজুল ইসলাম প্রত্যেকে তাদের নামে বেনামে ৩টি করে দোকান ঘর প্রতিটি ২-৩ লক্ষ টাকায় বরাদ্ধ নিয়ে ৭-৮ লক্ষ টাকায় অন্যের কাছে বরাদ্ধ হস্তান্তর করেছে। অন্যান্য দোকানগুলোও গোপন আঁতাতের মাধ্যমে কম দামে বরাদ্ধ দিয়ে বরাদ্ধপ্রাপ্তরে কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। যাতে করে স্থানীয় সাধারণ ব্যবসায়ীরা তাদের ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বি ত হয়েছে। নিয়মতান্ত্রিভাবে এগুলো টেন্ডার দেয়া হলে স্কুল ফান্ডে যে মোটা অংকের টাকা জমা হতো কারসাজির কারনে তা কমিটির সভাপতি, প্রধান শিক্ষক সহ কমিটির প্রভাবশালী সদস্যদের পকেটস্থ হয়েছে। তাই এই অবৈধ অর্থ বানিজ্যের সুষ্ঠ তদন্ত ও কার্যকরী ব্যবস্থা চায় সচেতন মহল।
ইতোমধ্যে এই বিদ্যাপিঠের প্রধান শিক্ষক আবু দাউদ এর চাকুরীর মেয়াদ শেষ হয়েছে। কলেজিয়েট স্কুলে অধ্যক্ষ নিয়োগের বিধান থাকলেও তা না করে নিজের পদকে বহাল রাখা ও লুটপাটের পথকে সুগম রাখার লক্ষ্যে সভাপতি মোস্তাকিম অনিয়মতান্ত্রিকভাবে উক্ত আবু দাউদ এর চাকুরীরি মেয়াদ আরও ২ বছর বৃদ্ধি করিয়েছেন। ফলে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে পাওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করছিল তা অপূর্ণই রয়ে গেল। তাই আপনাদের মাধ্যমে আমরা এই অবৈধ মেয়াদ বৃদ্ধি বাতিল করা সহ বিধি অনুযায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ চাই।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তারা বলেন, অবাক করার বিষয় হলো উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্কাকিম যাতে বার বার সভাপতি নির্বাচিত হতে পারেন সে লক্ষ্যে এই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নির্বাচনে তার (মোস্তাকিম) পছন্দের তথা নিজ লোক ছাড়া অন্য কাউকে প্রার্থী হতে দেয়া হয় না। নানা রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন ও চাপ প্রয়োগ করে অন্যদের মনোনয়ন ফরম ক্রয় ও জমা প্রদান থেকে বিরত রাখা হয়। তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে কেউ মনোনয়ন ফরম জমা দিলেও সংশ্লিষ্টদের আঁতাতের মাধ্যমে বাছাই কার্যকমে ঐ মনোনয়ন ফরম বাতিল বলে ঘোষণা দেয়া হয়। আর এজন্য বাছাইয়ের দিন তাদেরকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে উপস্থিত হতেও দেয়া হয় না। উদাহরণ স্বরুপ: বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনে অভিভাবক সদস্য প্রার্থী (সাবেক নির্বাচিত অভিভবাক সদস্য) আমিনুর রহমান ও আহছান হাবীবকে মোস্তাকিমের ক্যাডার বাহিনী বাছাই কার্যকমে উপস্থিত হতে দেয়নি। গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন হতে না দিয়ে এভাবে বল প্রয়োগ ও কারসাজির মাধ্যমে কমিটির সদস্য নির্বাচন করে এবিএম মোস্তাকিম বার বার সভাপতি নির্বাচিত হয়ে স্কুলকে ধ্বংসের দ্বারপ্রন্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যার অবসান হওয়া প্রয়োজন।
শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সকল চাপ উপেক্ষা করে এই বিদ্যাপিঠের সদ্য সমাপ্ত অভিভাবক সদস্য নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম ও বুধহাটা ইউপি চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক (ডাবলু) মনোনীত দু’টি প্যানেল প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে। নির্বাচনে ডাবলু প্যানেলের সদস্যরা নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। মোস্তাকিম প্যানেলের চরম ভরাডুবি হওয়ায় নিজের সভাপতি পদ ধরে রাখার মানসে ইতোমধ্যে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সভাপতি মোস্তাকিম তার আস্থাভাজন অবৈধ প্রধান শিক্ষক আবু দাউদকে দিয়ে তার কারসাজির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সদ্য নির্বাচিত আভিভাবক সদস্যদের কোন মতামতকে তিনি আমলে নিচ্ছেন না। নানা কুটকৌশলে তিনি আবারও মোস্তাকিম সাহেবকে সভাপতি করার নীল নঁকশা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই আমরা নির্বাচিত সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে সভাপতি নির্বাচন চাই।
শোনা যাচ্ছে, মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব অধ্যাপক ডা. আ. ফ. ম রুহুল হক মহোদয় জনাব এবিএম মোস্তাকিম কে পূনরায় সভাপতি করার জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন। এই খবরে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও আমাদের নির্বাচিত সদস্যদের দাবী- এমপি মহোদয় একজন জ্ঞানী গুনী সৎজন ব্যক্তি, তিনি এই জেলার মানুষের অভিভাবক, অতীত ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তিনি নিজে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হউন অথবা নির্বাচিত সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে সভাপতি নির্বাচিক হউক। অন্যথায় গন আন্দোলন ও স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ আরও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।