কালিগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আশ্রয়ন প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ শেষ হওয়ার আগেই শ্রমিকদের ২১ মেট্রিক টন গম এর দফা রফা
রঘুনাথ খাঁ:
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আশ্রয়ন প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ শেষ হওয়ার আগেই বরাদ্দকৃত কাজের বিনিময়ে খাদ্যের ২১ মেট্রিক টন গমের দফা রফা হয়ে গেছে। মঙ্গলবার দুপুরে ওই গম কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলামের দাবিপত্র অনুযায়ি ডিও সংগ্রহ করে মাল তুলেছেন পাটকেলঘাটার দিদারুল ইসলাম।
কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ধলবাড়িয়া, রতনপুর ও নলতা ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আশ্রয়ন প্রকল্পের মাটি ভরাটি কাজের জন্য যথাক্রমে ইউপি সদস্য মোস্তফা, বাবু ও আব্দুল মজিদকে প্রকল্প সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ তিনটি প্রকল্পের মাটি ভরাটের জন্য ২১ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ করা হয়। কাজ শেষ হওয়ার পর শ্রমিকদের ওই গম পাওয়ার কথা।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে আশ্রয়ন প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, তিনটি প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ দুই মাস আগে শুরু হলেও শেষ হয়নি।
কালিগঞ্জ খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সূত্রে জানা গেছে মঙ্গলবার দুপুরে ওই তিনটি প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ বাবদ ২১ মেট্রিক টন গম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলামের দাবিপত্রের মাধ্যমে পাটকেলঘাটার ধানদিয়ার দিদারুল ইসলাম ওই গমের ডিও পেয়ে মঙ্গলবার খাদ্যগুদাম থেকে গম ছাড় করিয়েছেন।
রতনপুর ইউনিয়নের আশ্রয়ন প্রকল্পের সভাপতি গোয়ালপোতা গ্রামের বাবু জানান, কয়েকদিন ভারতে থেকে গত ৬ অক্টোবর দেশে ফেরায় তার প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে খুব শীঘ্র শেষ হয়ে যাবে দাবি করে তিনি বলেন, বরাদ্দকৃত গম কাজ শেষ হওয়ার আগে তুলে নেওয়া হয়েছে এটা তার জানা নেই। কারো ডিও লেটারের পক্ষে তিনি কোথাও সাক্ষরও করেননি।
নলতা ইউপি সদস্য সন্নাসীর চকের আব্দুল মজিদ বলেন, বৃষ্টির কারণে তার প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়নি। তিনি নামমাত্র সভাপতি হয়েছেন উলেখ করে বলেন, যা কিছু করেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। গম তুলে নেওয়ার ব্যাপারে তিনি কোথায় ডিও লেটারের পক্ষে সাক্ষর করেননি বলে দাবি করেন।
ধলবাড়িয়া ইউপি সদস্য গান্ধুলিয়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা বলেন, মাটি ভরাট না হলেও খুব শীঘ্র হয়ে যাবে। মাটি ভরাটের কাজ শেষ হওয়ার আগে কিভাবে নিয়ম বহির্ভুতভাবে গম বিক্রি হয়ে গেল সে সম্পর্কে তিনি কোন কথা বলতে চাননি।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নবাসির অভিযোগ, কাজের বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্পে শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দকৃত গম বিক্রির কোন সূযোগ নেই। এরপরও বিক্রি হচ্ছে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খ্দকার রবিউল ইসলাম বৃহষ্পতিবার বদলী হয়ে যাওয়ার আগেই মঙ্গলবার দাবিপত্র দিয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে পাটকেলঘাটার দিদারুলকে ডিও ছাড় করানোর ব্যবস্থা করলেন এটা তাদের বোধগম্য হলো না। এটা আইনের পরিপন্থি বলে জানান তারা।
পাটকেলঘাটার ধানদিয়ার দিদারুল ইসলাম নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নিজেকে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বন্ধু দাবি করে বলেন, প্রকল্প সভাপতিরা (পিআইসি)সাক্ষর করার ফলে তার পক্ষে ডিও দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ি উপজেলা নির্বাহ কর্মকর্তা দাবিপত্র দিয়েছেন।
কালিগঞ্জের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কলারোয়ার খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাহিদ আলম বলেন, তিনি দিদারুলের পক্ষে ডিও ছাড় সংক্রান্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা পেয়ে তিনটি ইউনিয়নের তিনটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাটি ভরাট বাবদ মঙ্গলবার ২১ মেট্রিক টন গম ছাড় করেছেন।
কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলান বুধবার দুপুরে এ প্রতিবেদককে জানান, এই মুহুর্তে তার স্মরণে হাতের কাছে কাগজপত্র নেই। পরে এ সংক্রান্ত কাগজপত্র সরবরাহ করা যাবে বা বিষয়টি জানানো যাবে।