রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে কী খাবেন?
অনলাইন ডেস্ক :
রক্তস্বল্পতা একটি জটিল সমস্যা। অনেকেই এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। যাপিত জীবনে শৃংখলার অভাব, খাবারে অরুচি, নিয়মমাফিক খাবার গ্রহণ না করাসহ নানা কারণে শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে আয়রন একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান হিসেবে কাজ করে। যা শরীরে অক্সিজেন পরিবহণে সাহায্য করে। খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন থাকলে তা শরীরে আয়রনের (লৌহ) অভাবজনিত এনিমিয়া (রক্তস্বল্পতা) প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্য আয়রনের প্রয়োজন। যেমন- শক্তি উৎপাদন, বৃদ্ধি এবং হরমোন তৈরি। আয়রন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
লোহিত রক্ত কনিকায় হিমোগ্লোবিন থাকে, যা কোষে অক্সিজেন পরিবহণে কাজ করে। শরীরের ৬৫ ভাগ আয়রন হিমোগ্লোবিনে থাকে। সামান্য পরিমাণ আয়রন মায়োগ্লোবিনে পেশি কলায় থাকে। মায়োগ্লোবিন মাংসপেশিতে অক্সিজেন সরবরাহ ও শরীরের স্বাভাবিক কাজের জন্য প্রয়োজন।
খাবারে আয়রনের প্রকারভেদ
আমরা খাবার থেকে দু’ধরনের আয়রন পেয়ে থাকি, যেমন- হিম-আয়রন এবং নন-হিম আয়রন। শরীরে এ দু’ধরনের আয়রন শোষণেও পার্থক্য রয়েছে।
প্রাণিজ খাবার যেমন- গরুর মাংস, মুরগির মাংস এবং মাছে হিম-আয়রন রয়েছে। সাধারণত হিম আয়রন নন-হিম আয়রন অপেক্ষা কম গ্রহণ করা হয়। কিন্তু হিম-আয়রন আমাদের শরীর খুব সহজে শোষণ করতে পারে।
উদ্ভিজ্জ উৎস থেকেই কেবল নন-হিম আয়রন পাওয়া যায়। খাবারে নন-হিম আয়রনের পরিমাণ হিম-আয়রণ অপেক্ষা বেশি থাকে। শরীর নন-হিম আয়রন ভালোভাবে শোষণ করতে পারে না।
ভেজিটেরিয়ানদের (নিরামিষভোজী) মাঝে নন ভেজিটেরিয়ান অপেক্ষা অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
হিম ও নন-হিম উভয় ধরনের আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা নিচে দেয়া হল-
* যকৃত * মাংস (চর্বি ও চামড়া ছাড়া) * সামুদ্রিক খাবার * মসুর ডাল ও মটরশুটি * শুকনা ফল যেমন- আলু-বোখারা, ডুমুর ও কিশমিশ * বাদাম
* শিমের বিচি * ডিম * সয়াবিন * গুড়।
এছাড়া গাঢ় সবুজ রঙের শাকসবজি আয়রনের খুব ভালো উৎস।
* পালং শাক * ব্রোকলি * কচু শাক * লাল শাক।
কীভাবে আয়রনের শোষণ বৃদ্ধি করা যায়
ভিটামিন-সি বা অ্যাসকরবিক এসিড আয়রন শোষণে সাহায্য করে।
সকালের নাস্তায় আয়রন সমৃদ্ধ শস্য জাতীয় খাবার খাওয়ার পর কমলার রস বা লেবু পানি গ্রহণে আয়রনের শোষণ বৃদ্ধি পায়। কিছু খাবার ও পানীয় আয়রন শোষণে বাধা সৃষ্টি করে।
টেনিন : চায়ে টেনিন নামক এক ধরনের যৌগ থাকে। টেনিন আমাদের শরীরে আয়রন শোষণের হার হ্রাস করে। তাই খাবার গ্রহণের পর চা পান না করলে ভালো।
ফাইটেট : খাদ্য শস্য, শিম এবং বাদামে ফাইটেট নামক এক ধরনের যৌগ থাকে। এই ফাইটেট সমৃদ্ধ খাবার অতিরিক্ত খাওয়া হলে তা লৌহ শোষণে বাধার সৃষ্টি করে।
চাহিদা : প্রতিদিনের আয়রনের চাহিদা বয়স, লিঙ্গ এবং শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়।
* মহিলাদের ক্ষেত্রে- (১৯-৫০ বছর) পরিমাণ-১৮ সম/ফধু
* পুরুষদের ক্ষেত্রে- (১৯-৫০ বছর) পরিমাণ-৮ সম/ফধু
* গর্ভবতী মহিলাদের ২৭ সম/ফধু যা চাহিদার ওপর ভিত্তি করে বৃদ্ধি পায়।
* যেসব মায়েরা বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে ৯ সম/ফধু.
সাধারণত খাবারে পর্যাপ্ত আয়রন সমৃদ্ধ খাদ্য থাকলে আয়রনের দৈহিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
* শরীরে আয়রনের অভাব দেখা দিলে তখন যকৃতে সঞ্চিত লৌহ সেই অভাব পূরণে সাহায্য করে। যদি লৌহের সঞ্চয় নিঃশেষ হয়ে যায় তখন হিমোগ্লোবিন তৈরি হতে পারে না। একে আয়রনের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতা বলে।
সাধারণত রক্তের সিরাম ফেরিটিন (serum ferritin) এবং হিমোগ্লোবিন পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তস্বল্পতা নিশ্চিত করা যায়।
লৌহের অভাবজনিত এনিমিয়ায় যে সমস্যাগুলো দেখা দেয়
* ক্লান্তি * মাথা ঘোরা * ত্বকের রং ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া * চুল পড়ে যাওয়া * খিটখিটেভাব * দুর্বলতা * অস্থির লাগা * নখ স্ফীত ও ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া।
কাদের ক্ষেত্রে এনিমিয়ার ঝুঁকি বেশি
* সন্তান ধারণে সক্ষম মহিলাদের * গর্ভাবস্থায় * খাদ্য তালিকায় আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের অভাব হলে * ঘন ঘন রক্ত দান করা * শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষত যারা অপরিণত অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করে * পরিপাকতন্ত্রের রোগ
* বৃদ্ধ বয়সে * নিরামিষভোজীদের ক্ষেত্রে।