সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে তরুণদের অনীহা, সংকটে মিয়ানমার জান্তা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

সেনাবাহিনীতে নতুন করে সৈন্য নিয়োগের চেষ্টা করছে মিয়ানমার। তবে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সাড়া। নগদ অর্থসহ নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়েও সেনাবাহিনীতে নতুন জনবল পাচ্ছে না মিয়ানমার জান্তা। ফলে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে সৈন্য সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম ইরাবতী নিউজ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন করে সেনাবাহিনীতে নিয়োগের জন্য দেশজুড়ে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন ও বেতারেও এ নিয়ে বিভিন্ন স্লোগানসহ জোর প্রচারণা চালানো হচ্ছে। অত্যন্ত কম সংখ্যক আবেদনপত্র জমা পড়ায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন জমা দেয়ার সময়সীমাও দুইদফা বাড়ানো হয়েছে।

মূলত, সামরিক অভ্যুত্থানের সময় বহু সামরিক কর্মকর্তা ও সেনা সদস্য সেনাবাহিনী থেকে ইস্তফা দেন। সম্প্রতি বিদ্রোহীদের সাথে সংঘর্ষে প্রায় ২০ হাজার সেনাসদস্য নিহত ও প্রায় ৭ হাজার গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। ফলে জরুরি ভিত্তিতে সৈন্য নিয়োগের প্রয়োজন পড়েছে জান্তাবাহিনীর। তবে জান্তার অংশ হতে আগ্রহী নয় দেশটির তরুণ সমাজ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিয়ানমারের কিছু সেনাসদস্যের বরাতে ইরাবতী জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রত্যেক ব্যাটালিয়নকে নতুন সৈন্যদের নিয়োগের জন্য ৫ লাখ কিয়াত (মিয়ানমারের মুদ্রা) করে দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও খুব একটা সাড়া মেলেনি। পরে এপ্রিলে অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে তা ১৫ লাখ কিয়াত করা হলেও পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি ঘটেনি। অনেক ক্ষেত্রে ২০ থেকে ৩০ লাখ কিয়াত নগদ দিয়েও তরুণদের আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে যোগদানের বয়স সীমা ১৮ থেকে ২৫ বছর। শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে দেশটির শিক্ষার মান অনুযায়ী অন্তত সিক্স গ্রেড পর্যন্ত এবং সেই সাথে পূর্বে কোনো প্রকার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকা যাবে না। তবে সেনাবাহিনীতে জনবল সংকট কাটাতে ঋণখেলাপি ও মাদকসহ নানা অপরাধের সাথে জড়িতদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। বলা হচ্ছে, ঋণখেলাপিদের ঋণ পরিশোধ ও অপরাধ মওকুফের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের সেনাবাহিনীতে ভর্তি করানো হচ্ছে।

এ নিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাবেক ক্যাপ্টেন লিন হিয়েত অং বলেন, প্রতি মাসে অন্তত ১ জন করে হলেও সৈন্য নিয়োগ দেয়ার নির্দেশ রয়েছে ব্যাটালিয়ন কমান্ডারদের ওপর। এ ক্ষেত্রে তারা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ঋণগ্রস্তদের বাছাই করে এবং ঋণ পরিশোধ করে দেয়ার বিনিময়ে সেনাবাহিনীতে নাম লিখিয়ে নেয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে পালন করার কথা দৃশ্যত এমন ১৩টি শর্ত সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

গ্লোবাল ফায়ার–পাওয়ার ওয়েবসাইট অনুসারে, ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীতে সৈন্য সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ১৫ হাজার। ২০২১ সালের প্রথম দিকে সেই সংখ্যা ছিল ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখের মধ্যে। যার মধ্যে ১ লাখ সৈন্য সরাসরি যুদ্ধ জড়িত হয়ে পড়ায় সেই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় মাত্র ২ লাখের কাছাকাছি।

বিশ্লেষকদের মতে, গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা জান্তাবাহিনীকে ভালোভাবে নেয়নি মিয়ানমারের নাগরিকরা। জান্তা বিরোধী বিক্ষোভের সময় কয়েক হাজার সাধারণ মানুষকে হত্যা করার ঘটনায়ও ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের ওপর জান্তাবাহিনীর চালানো অত্যাচার ও লুটপাট এখনও ভোলেনি তারা। এরই মধ্যে এখনও মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে। সাধারণ মানুষের সহযোগিতাতেই জান্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে বিদ্রোহীরা। বর্তমানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রতি দেশটির নাগরিকদেরই সমর্থন খুবই কম। এরই ফল স্বরূপ সেনাবাহিনীতে যুক্ত হতে চাইছে না কেউই। মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে যুক্ত হতে কার্যত লজ্জাবোধ করছে মিয়ানমারের তরুণ সমাজ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)