সাতক্ষীরায় পুলিশ পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে দুজনকে গণধোলাই

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা :

গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে চাঁদাবাজির পর জনতা গণধোলাই দিয়ে দুজনকে পুলিশে সোপর্দ করেছে। রবিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভাদড়া গোডাউন মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযোগ, পুলিশ পরিকল্পিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত আসাদুজ্জামান সরদার ওরফে সুমনকে ধরে নিয়ে তাকেসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে চাদাবাজের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠিয়েছে।

সাতক্ষীরা আদালত চত্বরে সোমবার বিকেলে ভাদড়া গ্রামের আহাদ আলীর ছেলে আসাদুজ্জামান ওরফে সুমন জানান, রবিবার বিকেলে তিনি ও কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে তিনটি মোটর সাইকেলে ভাই সাগরের জন্য আখড়াখোলায় যাচ্ছিলেন। এদের মধ্যে তার চাচাত ভাই রেজাউলসহ তাকে বহনকারি মোটর সাইকেলটি পিছিয়ে পড়ে।

বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তারা ছয়ঘরিয়া মোড়ের পাশে ফাকা জায়গায় পৌছালে কাথণ্ডা বাজারের আব্দুল মাজেদের ছেলে তিনটি মাদক মামলার আসামী আবু মুছা ও শহরের রসুলপুরের মহব্বত সরদারের ছেলে শামীম সরদার একটি কালো রঙএর ডিসকভার ১২৫ মোটর সাইকেল থেকে নেমে নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে গাড়ি থামাতে বলে। এরপর তাদের দেহ তল­াশি করে তারা। তাদের ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটির পিছনে টাকা জমা দেওয়ার রসিদ সাটা ছিলো। এরপর ওই দুইজন গাড়ির কাগজপত্র নেই বলে তার কাছে থাকা ২৫ হাজার টাকা নিয়ে যায়। বিষয়টি তারা তাৎক্ষণিক স্থানীয় ইউপি সদস্য ডাঃ মঞ্জুরুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে জানিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।

ডাঃ মঞ্জুরুল আলম বলেন, কালো রঙ এর ডিসকভার মোটর সাইকেল নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়দান করে টাকা আত্মসাৎকারি শামীম ও মুছা কাথণ্ডা বাজারে যাওয়ার সময় সুমন ও স্থানীয় লোকজন তাদেরকে চিন্তে পেরে মোটর সাইকেলের গতিরোধ করেন। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ জনতা তাদেরকে গণধোলাই দিয়ে আটকে রাখে।

এ সময় ওই দুই চাঁদাবাজ গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক আব্দুল মাজেদ এর লোক বলে মোবাইল ফোনে কথা বলিয়ে দেন।রাত সাতটার দিকে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রাজীব ও সদর থানার উপপরিদর্শক মিনহŸাজ এর কাছে সোপর্দ করেন। এ সময় পুলিশ জানা বোঝার জন্য সুমনকেও তাদের সঙ্গে নিয়ে যায়। শামীম ও মুছাকেÍাত ১০ টার দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।

সুমনের অভিযোগ, পুলিশ ওই দুইচাঁদাবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে প্রধান আসামী করে ১০জনের নাম উলে­খ করে সদর থানায় ৫৮ নং মামলা দিয়েছে। মামলায় মুছা ও শামীমের ব্যবহৃত যে মোটর সাইকলটি অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে সেটি মূলত সদর হাসপাতালের মনিরুল ইসলামের মোটর সাইকেল গ্যারেজে রয়েছে।

এমনকি এ নিয়ে যাতে তারা প্রতিবাদ না করতে পারেন সেজন্য মামলার তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক শিমুল হোসেনের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। রাতে গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে তার দুচোখ বেধে হাটু ও পায়ের তলায় পেটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সুমন।

এ ব্যাপারে আবু মুছা ও শামীম সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ প্রতিবেদককে সোমবার সকালে জানান, তাদের ব্যবহৃত ডিসকভার মোটর সাইকেলটি হাসপাতালের গ্যারেজে রয়েছে। এটি ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে তাদের একটি হাং মোটর সাইকেল হামলাকারিরা নিয়ে গেছে। মাদক ব্যবসায়ি আজগার আলীকে দুই বছর আগে ভাদড়া মোড়ে মাদকসহ ইজিবাইক থেকে গোয়েন্দা পুলিশে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করায় প্রতিশোধ নিতে আজগার আলী ও তার লোকজন এ হামলা চালিয়েছে।

এ ব্যাপারে গোয়েন্দা পুলিশের সাতক্ষীরা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে উপপরিদর্শক আব্দুল মাজেদ বলেন, ঘটনার বাস্তবতা অনুযায়ি থানায় মামলা হয়েছে। মামলার তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। সুমনকে পুলিশ হেফাজতে সুমনকে মারপিটের কথা অস্বীকার করেন তিনি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)