সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের দূর্ণীতিবাজ অর্থপেডিকস সার্জন ডাঃ কামরুজ্জামানকে রাজকীয় কায়দায় বিদায়ী সংবর্ধনা প্রতিবাদে মানববন্ধনের কর্মসুচি
রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা :
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের বহুল আলোচিত দূর্ণীতিবাজ অর্থোপেডিকস সার্জন অধ্যাপক ডা: এএইচএমএস কামরুজ্জামানকে রাজকীয় কায়দায় বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবাদে সাতক্ষীরার সাধারণ মানুষ সোমবার সকাল ১০ টায় মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল গেটে মানববন্ধন কর্মসুচির ডাক দিয়েছেন।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে. ২০১৫ সালের মে মাস থেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থাকার সুবাদে ও যোগ্য ছাত্র ডাঃ রুহুল কুদ্দুস ওই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ হওয়ায় সপ্তাহে একদিন কলেজ করতেন অর্থোপেডিকস সার্জেন্ট ড্যাব নেতা ডাঃ এএইচএমএস কামরুজ্জামান। ডাঃ রুহুল কুদ্দুসের শিকক্ষ হওয়ায় তাদের সমর্থক ১০ থেকে ১২ জন চিকিৎসক সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন মেডিকেলে কাজ করে বাকী সময় বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে সময় পার করতেন। ডাঃ কামরুজ্জামানের কথামত কাজ না করতে রাজী হওয়ায় নাক, কান ও গলার রোগ বিশেষজ্ঞা ডাঃ জাহিদ হাসানকে বরিশাল জোনে বদলী করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী জানান, ড্যাব নেতা হয়েও সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রীূ ডাঃ আ.ফ,ম রুহুল হকের মেয়ের বিয়ের সমন্বয়কারি ছিলেন অর্থোপেডিকস সার্জন অধ্যাপক ডা: এএইচএমএস কামরুজ্জামান। সাবেক মন্ত্রীর জামাতার নামও ডাঃ কামরুজ্জামান। এ সম্পর্কটাকে ভাঙিয়ে ডাঃ কামরুজ্জামান নিজেকে প্রধান করে ডাঃ রুহুল কুদ্দুস, ডাঃ সৈয়দ আমান, ডাঃ নাজমুস সাকিব ও ডাঃ অভিজিতকে নিয়ে নাম কা ওয়াস্তে একটি ক্রয় কমিটি গঠণ করেন। ওই কমিটির মধ্যেমে তিনি হাতিল ফার্ণিচার কোম্পানীর সঙ্গে গোপন চুক্তি মাফিক মেডিকেল কলেজের ৫০ লাখ টাকার ল্যাব যন্ত্রপাতি, এসি মেশিন ও আসবাবপত্র কিনে ওই অধ্যক্ষ চলে যাওয়ার পর ইনটেক অবস্থায় অন্যত্র বিক্রি করেন ডাঃ কামরুজ্জ্ামান। এ ছাড়া ওই হাতিল কোম্পানীর কাছ থেকে কমিশন বাবদ তিনি লুটেছেন বহু টাকা।
চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি লিফটম্যান, পরিচ্ছন্ন কর্মী, নিরাপত্তা প্রহরীসহ ১৩টি পদে ৩৩ জনের যে নিয়োগ তালিকা প্রকাশ করা হয় সেই কমিটির সভাপতি ছিলেন ডাঃ কামরুজ্জামান। ৩৩ জনের মধ্যে তার তিন আত্মীয় সুজন, শেখ বিলাল ও সবুজসহ ১৯ জনকে নতুন নিয়োগ দিয়ে তিনি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা লুটপাট করেছেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে। কোন টেণ্ডার ছাড়াই তার একঠিকাদার বন্ধুকে দিয়ে ডাঃ কামরুজ্জামান মেডিকেল কলেজের লেক খনন করে বহু টাকা লুটপাট করেছেন। নতুন নিয়োগকৃত ছয়জন কর্মীকে মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য করে ছাটাই করায় নূরজাহান বাদি হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও দুদকে অভিযোগ করেন চলতি বছরের ১৪ মার্চ। ৫ম ব্যাচে তার বিভাগে প্রথম হওয়া ছাত্র আল মুকিতকে ফেল করিয়ে নিজের স্বেচ্ছাচারিতার নিদর্শণ সৃষ্টি করেন বলে ডাঃ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। করোনাকালিন সময়ে কলেজে না এসেও যাবতীয় বাড়তি সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন ডাঃ কামরুজ্জামান।
বিভিন্ন ক্রয় কমিটির সভাপতি হওয়ার সুবাদে ডাঃ রুহুল কুদ্দুসকে ম্যানেজ করে ডাঃ কামরুজ্জামান অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
গত ৩১ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব সারওয়ার মুর্শিদ চৌধুরীর নির্দেশে গত ১০ আগষ্ট সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তদন্ত করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির সদস্যদের সামনে যাতে কেউ মুখ খুলতে না পারে সেজন্য ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী মোতায়ন করা হয় ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এমন একজন দূর্ণীতিবাজ ডাঃ কামরুজ্জামানেক অবসরে যাওয়া নিয়ে মেডিকেল কলেজের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শামছুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মেডিকেল কলেজের এক্সাম হলে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টায় বহু টাকা খরচ করে রাজকীয় কায়দায় বিদায়ী সংবর্ধনা জানানো হবে এটা মেনে নেওয়া হবে না। প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসুচির সাথে কালো পাতাক দেখানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ডাঃ রুহুল কুদ্দুস ও ডাঃ কামরুজ্জামান ইতিপূর্বে সাংবাদিকদের বলেছেন যে, তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনয়িমের অভিযোগ করে যে বা যারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বা দুদকে অভিযোগ করেছেন তাদের অভিযোগ যে উদ্দেশ্য প্রণোদিত তা তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণিত হবে। তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারিদের মুখোশ উন্মোচিত হবে।