দেবহাটায় ছাত্রলীগ নেতাকে অস্ত্রকান্ডে ফাঁসিয়ে ভারতে পালালেন মূলহোতা আব্দুল্যাহ
স্টাফ রিপোর্টার:
র্যাবের অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেবহাটার ছাত্রলীগ নেতা জিল্লুর রহমান জীবন (২৭) গ্রেফতার হওয়ার ঘটনাটি রীতিমতো উপজেলা জুড়ে ‘টক অব দ্য টাউন’-এ পরিনত হয়েছে। রবিবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার উত্তর পারুলিয়া সেকেন্দ্রা মোড় সংলগ্ন পরিত্যক্ত সখিনা ব্রিকসের পাশ থেকে ম্যগজিন ও গুলিবিহীন একটি পিস্তলসহ তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। তিনি সেকেন্দ্রা এলাকার প্রভাষক আব্দুল কাদেরের ছেলে এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। এরআগে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছয় বছর উপজেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সোমবার অস্ত্র আইনে মামলা (নং-১৭) দায়ের শেষে তাকে দেবহাটা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে র্যাব।
তাকে গ্রেফতারের পর থেকে উপজেলার সর্বমহলে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা। উঠতি বয়সে অন্যান্যদের মতো কিছুটা দুষ্টুমি প্রায়ই পরিলক্ষিত হলেও, নম্র ও ভদ্র স্বভাবের এই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অস্ত্র করাবারের অভিযোগ অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠেনি। তাছাড়া ছাত্রলীগ নেতা জীবনকে অস্ত্রকান্ডে ফাঁসানো হয়েছে বলে শুরু থেকেই দাবী করে আসছিল তার পরিবার। এক্ষেত্রে দায়ী হিসেবে ‘আব্দুল্যাহ’ বলে অপর আরেক যুবকের নাম বারবারই গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরছিল জীবনের স্বজনরা। জীবনকে র্যাব সদস্যরা গ্রেফতারের পর সোমবার সকালেই নাকি সীমান্ত টপকে ভারতে পালিয়ে গেছে আব্দুল্যাহ। সেখান থেকে জীবনের পরিবারকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে মূলহোতা আব্দুল্যাহ এঘটনার দায় স্বীকার করে নিয়েছে।
কিন্তু কে এই আব্দুল্যাহ? দেবহাটার প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল গণি’র কোল্ড স্টোরেজের এক সময়কার স্বল্প বেতনের কর্মচারী আব্দুল্যাহ সরদার। সে চাঁদপুর মাদরাসার বীপরীত দিকের আফসার আলীর ছেলে। কয়েক বছর আগেও মাটির দোঁ-চালা কুঁড়ে ঘরে বসবাসরত আব্দুল্যাহর সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরাতো রোজ। কিন্তু অস্ত্রব্যবসা সহ নানা ধরনের অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন এবং মানুষের সাথে প্রতারণা করে তাদের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সম্প্রতি মানুষের চোখে নিজেকে বড়সড় ব্যবসায়ী সাজিয়ে তুলেছেন আব্দুল্যাহ।
গ্রেফতার হওয়া ছাত্রলীগ নেতা জীবনের বড়বোন শান্তা মারিয়া জানান, রবিবার বিকেল থেকে তার ভাই বাড়িতেই অবস্থান করছিল। সন্ধ্যার দিকে আব্দুল্যাহ জীবনকে ফোন করে বাড়ি থেকে ডেকে নেয়। কথোপকথনে আব্দুল্যাহ জীবনকে বলে, ঢাকা থেকে তার কয়েকজন বন্ধু এসেছে, তাদের সাথে জীবনের দেখা করাবে। কথোপকথন শেষে বাড়ি থেকে পায়ে হেটে কিছুটা দূরে পৌঁছানোর পরই র্যাব সদস্যদের দেখে অস্ত্রটি ফেলে আব্দুল্যাহ পালিয়ে যায়, এবং সেই ফেলে যাওয়া অস্ত্রকান্ডে জীবনকে গ্রেফতার করা হয় বলে দাবী করেন তিনি।
শান্তা মারিয়া আরও বলেন, সকালে ভারতে পালিয়ে গিয়ে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করেছিল আব্দুল্যাহ। জীবনকে অস্ত্রকান্ডে ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করানোর জন্য আব্দুল্যাহ মুঠোফোনে দায় স্বীকার করেছে। অবৈধ অস্ত্র দেয়ার নাম করে ঢাকার কয়েকজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল আব্দুল্যাহ। পরে প্রতারিত ব্যাক্তিরা তাদের অর্থ আদায়ের ব্যাপারে সেখানকার ছাত্রলীগ নেতাদের মাধ্যমে দেবহাটার ছাত্রলীগ নেতা জীবনসহ কয়েকজনের সহায়তা চেয়েছিলেন। এনিয়ে কিছুদিন আগে আব্দুল্যাহর সাথে গোলযোগ বাঁধে ছাত্রলীগ নেতা জীবন সহ বেশ কয়েকজনের। বিষয়টি দুজনের মধ্যে মৌখিকভাবে কিছুটা শিথিল হলেও মনে মনে ক্ষিপ্ত আব্দুল্যাহ সেই থেকেই ছাত্রলীগ নেতা জীবনকে ফাঁসাতে ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছিল বলেও অভিযোগ জীবনের বোন শান্তা মারিয়ার।