অঙ্গদান করে তিন ব্যক্তির প্রাণ বাঁচালেন চীনা নারী
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সম্প্রতি বিয়ে করেছিলেন চীনা নারী ঝ্যাং। কিন্তু বিয়ের পরদিন স্ট্রোকে তিনি মারা যান। তবে তিনি আগে থেকেই ইচ্ছা পোষণ করেন, তার মৃত্যু হলে যেন দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করা হয়। শোকার্ত ঝ্যাংয়ের পরিবার তার সেই ইচ্ছা পূরণ করেছে। পরিবারের সদস্যরা তার অঙ্গদান করেন। এতে বেঁচে গেছে তিনজনের প্রাণ।
সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, ঝ্যাং ফুপিং কাউন্টির বাসিন্দা। হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে সংসার করার যে ইচ্ছা নিয়ে ঝ্যাং বিয়ে করেছিলেন, সেই আশা তার পূরণ হয়নি। কারণ, বিয়ের এক দিন পরই তার মৃত্যু হয়।
স্বাভাবিকভাবেই ঝ্যাংয়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছিল তার পরিবার। তার পরিবারের পক্ষ থেকে হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবীদের জানানো হয়, ঝ্যাং বলেছিলেন, তার যদি কিছু হয়ে যায়, তবে তার অঙ্গ যেন দান করে দেওয়া হয়, যাতে মানুষের জীবন বাঁচে।
ঝ্যাংয়ের এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিভিন্ন কাগজপত্র স্বাক্ষর করে তার পরিবার। এরপর চিকিৎসকদের শুরু হয় কর্মযজ্ঞ। ছয় চিকিৎসকের একটি দল ঝ্যাংয়ের শরীর থেকে অঙ্গ অপসারণের কাজ করে। এরপর সেসব অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তিনজনের শরীরে, যারা শয্যাশায়ী ছিলেন।
ঝ্যাংয়ের স্বামী বলেন, ‘তার দান করা অঙ্গে এমন কিছু মানুষের জীবন রক্ষা করা গেছে, যারা আমাদের অপরিচিত। এই পদক্ষেপে আমি তৃপ্ত, যদিও তার মৃত্যুতে এখনো দুঃখভারাক্রান্ত আমি। হয়তো কোনো এক দিন এই শহরে তার প্রতিচ্ছবির সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে আমার।’
চীনের ঝ্যাংয়ের এই ঘটনা ছুঁয়ে গেছে অনেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে। অনেকে ঝ্যাং ও তার পরিবারের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন। একজন লিখেছেন, ‘অসাধারণ এক নারী। স্বর্গে আপনার জন্য ভালোবাসার এক রংধনু আলো ছড়াবে।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘সব দিক থেকে তিনি একজন পরি। ওপারে তার কোনো যন্ত্রণা হবে না।’ আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘অঙ্গদান করা হলো, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে নতুন জীবন পাওয়ার একটি পথ।’
চীনে এমন অঙ্গদানের প্রবণতা বাড়ছে। চলতি মাসের শুরুতে ক্যানসারে আক্রান্ত আট বছরের এক শিশুর অঙ্গদান করেছেন তার মা-বাবা। এতে পাঁচজনের জীবন বেঁচে যায়। গত জুনে ২৪ বছর বয়সী এক তরুণী মারা যান সড়ক দুর্ঘটনায়। তারও অঙ্গদান করেছে পরিবার। চীনের অর্গান ডোনেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সেন্টারের ২ আগস্টের দেওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর ৪১ হাজার ৮১ জন মৃত্যুর পর অঙ্গদান করেছেন। তারা ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৯৬টি অঙ্গ মানুষের জন্য দান করেন।