নাটকে অভিনয়শিল্পীদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধির প্রভাব
অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই ধীরে ধীরে এগিয়েছে টিভি নাটক। শুধু বিটিভিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতো এ মাধ্যমটি। একঝাঁক মেধাবী ও গুণী অভিনয়শিল্পীর সমন্বয়ে বর্ণিল হয়ে উঠত নাটক। নির্ধারিত পারিশ্রমিকেই অনেক তারকা অভিনয় করতেন।
পাশাপাশি প্যাকেজ আওতায় নির্মিত নাটকের শিল্পীদের অডিশন দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এখন সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে অনেক টিভি চ্যানেলে নাটক প্রচার হয়। চ্যানেল বেশি হওয়ার কারণে নাটক নির্মাণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও সব অভিনয়শিল্পীকে কাজে লাগানো হয় না। সব সময়ই কয়েকজন অভিনয়শিল্পীকে নির্ধারিত করে দেওয়া হয় টিভি চ্যানেল থেকে। কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা হলো, নির্দিষ্ট সেই অল্পসংখ্যক অভিনয় তারকা ছাড়া নাটক মার্কেটিং করতে চ্যানেলের সমস্যা হয়। তাই নির্মাতারা অনেকটা বাধ্য হয়েই সেসব তারকা অভিনয়শিল্পীকে দিয়ে নাটক নির্মাণ করছেন এখন।
ঠিক এ সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন এসব অভিনয়শিল্পী। যদিও তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তারা নির্মাতাদের দিকে প্রশ্নটি ছুড়ে দেন। তারা বলেন, নির্মাতারা না চাইলে তো তারা উপযাচক হয়ে অভিনয় করেন না। গত এক বছর থেকে নাটকপাড়ায় অভিনয়শিল্পীদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি সবার মুখে মুখে। নাট্যাঙ্গনের সংগঠনগুলোর শীর্ষনেতারাও এ নিয়ে চিন্তিত। কারণ, নাটকের দাম আগের চেয়ে খুব বেশি বাড়েনি, তার ওপর চ্যানেল থেকে অর্থছাড় করতেও ব্যাপক সমস্যায় পড়েন নির্মাতা ও প্রযোজকরা।
ঠিক এ সময়ে কিছুসংখ্যক অভিনয় তারকা পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করেছেন, যা নেতিবাচকভাবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। পারিশ্রমিক বৃদ্ধির তালিকায় এ সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, আফরান নিশো, তৌসিফ, জোভান, মেহজাবিন, সাফা কবির, তানজিন তিশা, সাবিলা নূরসহ অনেকেরই নাম পাওয়া যাচ্ছে নাট্যাঙ্গনের সঙ্গে যুক্তদের কাছে। সিনিয়রদের মধ্যে জাহিদ হাসান, মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী তো রয়েছেনই। তবে সিনিয়রদের চেয়ে পরবর্তী প্রজন্মের তারকারা পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করেছেন অনেক বেশি। কারও কারও ক্ষেত্রে সেটা নাটকপ্রতি প্রায় দেড় লাখ টাকা!
করোনার কঠিন সময় পেরিয়ে নাট্যাঙ্গন যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখন অস্বাভাবিক পারিশ্রমিক বৃদ্ধির বিষয়টি গলার কাঁটা হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে অন্য অনেক অভিনয়শিল্পীও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। যদিও উল্লিখিত তারকাদের অনেকেই বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কিছু বলছেন না। অভিনেতাদের মধ্যে জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, আফরান নিশো, তৌসিফ, জোভানরা এবং অভিনেত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেন মেহজাবিন
চৌধুরী। তার পারিশ্রমিক বৃদ্ধি নিয়েও মিডিয়ায় আলোচনা হচ্ছে। তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে আগ্রহবোধ করেননি। তার পরের অবস্থানে আছেন তানজিন তিশা, সাফা কবির ও সাবিলা নূরের মতো তারকারা। এ তিনজনের কেউই উল্লিখিত বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু একখণ্ডের নাটকে অভিনয়ের ক্ষেত্রে এ তারকারা পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করেছেন। টিভি নাটকের পাশাপাশি অনলাইন প্ল্যাটফরমের নাটকও তারা করছেন পরিবর্তিত পারিশ্রমিকে। এদিকে নাটকের তারকা অভিনয়শিল্পীরদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধির কারণে কমছে নাটকের চরিত্র। হাতেগোনা কয়েকটি চরিত্র দিয়েই নাটক নির্মিত হচ্ছে। এতে কর্মহীন থাকছেন পার্শ্বচরিত্রের অভিনয়শিল্পীরা। কারণ নায়ক নায়িকাকে বাজেটের তিন ভাগের দুই ভাগ অর্থ পারিশ্রমিক হিসাবেই দিয়ে দিতে হচ্ছে। ফলে বেশি চরিত্র নিয়ে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না নির্মাতাদের।
পারিশ্রমিক বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে নাট্যমহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। তবে নাট্যাঙ্গনের সংশ্লিষ্টরা পারিশ্রমিক বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নের জোর দাবি জানাচ্ছেন। হয়তো শিগ্গির এ বিষয়ে আন্তঃসংগঠন বৈঠকে কোনো একটি সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানিয়েছেন সচেতনরা। তবে যাই হোক, বিকশিত এ বিনোদন মাধ্যম যেন আরও সময়োপযোগী হয়ে সক্রিয় থাকে এ প্রত্যাশা সবার।