ভরা মৌসুমেও নদীতে ইলিশের দেখা নেই : বিনিয়োগকারীরা বিপাকে, হতাশ জেলেরা

অনলাইন ডেস্ক :

ভোলার সাগর মোহনায় ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় মেঘনা নদীতে ঝাঁকের ইলিশ প্রবেশ করতে পারছে না। সোমবার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ যুগান্তরকে জানান, ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার মধ্যবর্তী সীমানার ঢালচর-চরনিজাম এলাকায় ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। ওই চ্যানেল দিয়ে মূলত ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মেঘনা নদীর মিঠাপানি অঞ্চলে আসে। ডুবো চরের কারণে ইলিশ প্রবেশ করতে পারছে না। ভরা মৌসুমে মাছ না পাওয়ায় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগকারী ৫০০ মাছ ব্যবসায়ী পড়েছেন বিপাকে। দেনা মাথায় রয়েছে দেড় লাখ জেলের। জেলেরা জানান, একটি প্রভাবশালী চক্র ওই ডুবোচরে নিষিদ্ধ বেরজাল, খুঁটিজাল বসিয়ে ইলিশের সব ধরনের প্রজাতি ধরে নিচ্ছে।

ইলিশ গবেষকরা জানান, মেঘনা নদীর মিঠাপানি অঞ্চলে ইলিশ প্রবেশ করতে না পারলে প্রজনন প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত হবে। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের ২২ দিন ইলিশ মাছ সর্বাধিক ডিম ছেড়ে থাকে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যে ভোলার মেঘনা নদীর শাহবাজপুর চ্যানেল, মৌলভীর চর পয়েন্টে গেল অক্টোবরে ৭৭ ভাগ ইলিশ ডিম ছেড়েছে। মিষ্টি (মিঠা) পানিতে সর্বাধিক ইলিশ ডিম ছাড়ে। সর্বাধিক ইলিশের ডিম ছাড়া ও প্রজনন নিশ্চিত হওয়ায় ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (এডমিন) ইলিশ গবেষক মো. আনিসুর রহমান। যে পয়েন্ট দিয়ে সাগর থেকে ইলিশ মেঘনা নদীতে প্রবেশ করবে, ওই পয়েন্টে ডুবোচর সৃষ্টির বিষয়টি তারা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে তুলে ধরবেন। এটি অপসারণ ও একই সঙ্গে অবৈধভাবে যারা ওই অঞ্চলে নিষিদ্ধ জাল ফেলছে তা সরিয়ে দিতে হবে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ জানান, এ বছর ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন। ইলিশের ভরা মৌসুমে সর্বাধিক ইলিশ উৎপাদিত মেঘনার শাহবাজপুর চ্যানেলে ইলিশ কম আসার কারণ হিসাবে সাগর মোহনার ঢালচর ও চর নিজাম এলাকার কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বোরহানউদ্দিনের তেঁতুলিয়া নদীতে অভিযান চালিয়ে ৩৭টি বাঁধাজাল ও বেহুন্দি জাল জব্দ করেছেন। এমন অভিযান সাগর মোহনায়ও প্রয়োজন। জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি আবুল হাসান জানান, জেলায় মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর পাড় ঘিরে ৫০০ মাছঘাট রয়েছে। ৩০ হাজার জেলে নৌকা ও জালসহ ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। মাছ না পাওয়া গেলে ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি জেলেরা। ফলে এ অঞ্চলে ইলিশ বিচরণের সব প্রতিবন্ধকতা দূর করার দাবি জানান মৎস্যজীবী সমিতির নেতারা।

জানা গেছে, বুড়িশ্বর বা পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদী বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। তিন নদীর মোহনাকে জেলেদের ভাষায় গাঙ্গের আইল বলা হয়। বঙ্গোপসাগরের মিলিত হওয়া বিষখালী-বলেশ্বর মোহনায় লালদিয়া সমুদ্রসৈকত এবং পায়রা-বিষখালীর মোহনায় পদ্মা বাবুগঞ্জ চর। ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড় সিডরে নদী গতিপথ হারিয়ে তিন নদীর মোহনায় ডুবোচরের সৃষ্টি হয়। এ চর স্বাভাবিক জোয়ারের পানি প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে নদীর গভীরতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। পায়রা-বিষখালী নদীর মোহনায় রয়েছে বড়াইয়্যার ডুবোচর।

১৫-২০ কিলোমিটারজুড়ে এ চর ফকির হাট থেকে শুরু করে আশার চরে মিলিত হয়েছে। এ চরটি বঙ্গোপসাগর থেকে পায়রা নদীতে জোয়ারের পানি প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। আশার চরের শেষ সীমানা থেকে শুরু হয়েছে নলবুনিয়ার ডুবোচর। এ চরের বিস্তৃতি ৭-৮ কিলোমিটার। পায়রা নদীর প্রবেশ দ্বারে এ ডুবোচর। পায়রার প্রবেশ মুখ অতিক্রম করে ৩-৪ কিলোমিটার পরপর পদ্মা ও কুমিরমারা ডুবোচর। এ চরের বিস্তৃতি ৬-৭ কিলোমিটার। জেলেরা খুঁটা গেরে জাল ফেলে। জোয়ারের মধ্যভাগে এসে তীব্র গতিতে পায়রা নদীতে পানি প্রবেশ করলেও ওই সময়ে ইলিশের প্রভাব কমে যায়। ওই সময়ে পায়রা নদীতে প্রবেশ না করায় জেলেদের জালে ইলিশের দেখা মিলছে না।

সাগরসংলগ্ন নলবুনিয়া গ্রামের জেলে আলমগীর হাওলাদার, পায়রা নদীতে ইলিশ শিকারি জেলে ছত্তার, শহীদুল ইসলাম ও লাল মিয়া বলেন নদীতে তেমন ইলিশের দেখা মিলছে না। নদীর মোহনায় সৃষ্ট ডুবোচরগুলো খনন করলেই ইলিশের দেখা মিলবে। তালতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে পারলে ইলিশ প্রবেশ ও প্রজননে বাধা থাকবে না। একই কথা জানান আমতলী উপজেলা মেরিন ফিশারিজ অফিসার সায়েদ মো. ফারাহ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)