তালায় ভরা মৌসুমে বৃষ্টি নেই ক্ষরার প্রবণতা
তালা প্রতিনিধি :
ভরা বর্ষার মৌসুমে সাতক্ষীরার দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত তালা উপজেলায় বৃষ্টির দেখা নেই । আষাঢ় শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল হলেও জোষ্ঠ্য মাসের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টি শুরু হয় ।কিন্তু আষাঢ় শেষে শ্রাবণের আকাশের মেঘে বর্ষার কোন চিহ্ন নেই ।অবশ্য কোথায় কোথায় শরৎ কালের মত নীল আকাশে ভেজা মেঘের হালকা বৃষ্টি হচ্ছে ।
এলাকার বৃহৎ অংশের মানুষ চিংড়ি ও মৎস্য চাষাবাদ কাজে নিয়োজিত ।ভরা মৌসুমে বৃষ্টি না থাকার কারণে তীব্র পানি সংকটে ভুগছে ।খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা জেলা চিংড়ি উংপাদনের জন্য বিখ্যাত ।যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উংস ।মিষ্টি পানির অভাবে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায় এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে ।অন্যদিকে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে ।মিষ্টি পানির অভাবে মানুষ প্রক্রিয়াজাত পানি উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে ।যার প্রভাবে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ।
স্থানীয় মৎস্য চাষী হাকিম বিশ্বাস, আশরাফুল আলম শাওন, শাহীন গাজী, মনিরুল ইসলাম, ইব্রাহীম শেখ জানান পানির অভাবে চিংড়ি এবং মৎস্য চাষাবাদ করতে পারছি না ।নদ-নদী এবং খালে পানি থাকলেও সে পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ অনেক বেশি ।যা আমারা ঘেরে তুলতে পারছি না। বৃষ্টি হলে লবণাক্ততার পরিমাণ কমলে সেচ পাম্পের মাধ্যমে তুলতে পারতাম ।যদিও এভাবে পানি তুললে খরচ অনেক বেশি হয় ।এর আগেও কয়েকবার পানি তোলা হয়েছে ।তারপরও চিংড়ি সহ সাদা মাছ মারা যাচ্ছে ।
সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এনভায়রনমেন্ট এন্ড টেকনোলজি বিভাগীয় প্রধান বিপ্লব কুমার দাশ বলেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাশ্ববর্তী দেশ সহ আমাদের দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব পড়ছে ।মৌসুমী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কোথায় অনাবৃষ্টির কারণে ক্ষরার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে আবার অধিক বৃষ্টির কারণে কোথায় বন্যা দেখা দিচ্ছে । যেমন আসামের চেরাপুঞ্জীতে অধিক বৃষ্টি কারণে ভারত সহ বাংলাদেশের সিলেটে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে । পাকিস্তানের বালুচিস্তানে বন্যায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে , আফগানিস্তানের কাবুলে রেকর্ড পরিমাণ তাপমাত্রার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ।
তিনি আরও বলেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রথমিক পর্যায়ে আমরা আছি । দ্রুত সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আমারা দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাবে পড়বো ।যা এ অঞ্চলের মংস্য সহ কৃষি কাজের উপর ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে এবং অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবো আমরা । তিনি আরও বলেন শিল্প উন্নত দেশসমূহ যেমন যুক্তরাষ্ট্র,চীন সহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের কারণে আমাদের মত স্বল্প উন্নত দেশে উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে ।
সাতক্ষীরা খুলনা অঞ্চলের মানুষ বছরে কয়েকবার ঘূণিঝর, জলোচ্ছ্বাসের কারণে লবণাক্তা বৃদ্ধি পাওয়ায় সুপেয় খাবার পানির অভাব,বিভিন্ন ধরনের রোগ ,ফসল নষ্ট সহ বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় মানুষ মাইগ্রেশন করতে বাধ্য হচ্ছে । বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপরেও এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। যা সিডর এবং আইলার সময় প্রকৃতিক প্রাচীরের মত ঘূণিঝরের আঘাত থেকে রক্ষা করে এ অঞ্চলের মানুষ সহ প্রাণীকূলকে ।শিল্প উন্নত দেশসমূহ যদি কার্বন নিঃসরণ না কমায় তাহলে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দিন দিন বাড়বে ।
সাতক্ষীরা আঞ্চলিক অফিসের তথ্য অনুযায়ী চলতি সপ্তাহে কোথায় কোথায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি ও বজ্র সহ বৃষ্টিপাত হতে পারে ।