আশাশুনি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিনিধি :
সাতক্ষীরার আশাশুনি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার চাকুরীর মেয়াদ শেষে আরো দুই বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেলেও তাকে তার দায়ীত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি এবং বিভিন্নভাবে হয়রানী ও লাঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় তিনি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এছাড়া তিনি তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্চিত করার ঘটনায় গত ৩ জুলাই সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতি সামছুল আলম ঢালীর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। আদালতের বিচারক এম.জি আজম অভিযোগ পত্রটি আমলে নিয়ে আশাশুনি থানার ওসিকে সেটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার এবং ১৭৩ ধারার বিধান মতে পুলিশ রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন।
আশাশুনি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষিকা কামরুন নাহার জানান, বিগত ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর তার চাকুরীর মেয়াদ শেষ হয়। এরপর ২০২১ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সভাপতি সামছুল আলম ঢালী তাকে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করেন। এরপর তিনি তার দৈনন্দিন বিদ্যালয়ের কাজ করার সময় বিভিন্নভাবে বাধা সৃষ্টি করতে থাকেন সভাপতি সামছুল আলম ঢালী। এমনকি তার চুক্তিভিত্তিক মাসে ১০ হাজার টাকা বিদ্যালয় থেকে সম্মানী দেয়ার কথা থাকলেও সেটিও তাকে প্রদান না করে বিদ্যালয়ের কোয়াটারে যেখানে প্রধান শিক্ষিকা থাকেন সেখানে তালা মেরে তাকে সেখান থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করেন।
সভাপতি বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার এবং অবৈধ সুযোগ সুবিধা নেয়ার পায়তারা চালাচ্ছেন। এছাড়া গত ৮ জুন প্রধান শিক্ষিকাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্চিত করেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সামছুল আলম। এ ঘটনায় তিনি গত ৩ জুলাই সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে সভাপতির বিরুদ্ধে উপরোক্ত মামলা দায়ের করেন। এরপর ২৮ জুলাই সভাপতি তাকে আবারো লাঞ্চিত করেন। এর আগে গত ২১ এপ্রিল ২০২২ তারিখে তিনি সাতক্ষীরার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে তার কাজে বাধা সৃষ্টি ও সম্মানী না দেয়ার অভিযোগ এনে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সহকারী প্রধান শিক্ষক অমল কৃষ্ণ সরকারসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
আদালতের বিচারক জাহিদুর রহমান এ মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন এবং আগামী ১৪ আগষ্ট এ মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন। এছাড়া তিনি গত এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষিকা তার হয়রানী ও দাপ্তরিক কাজে বাধা যাতে প্রদান না করতে পারেন সে জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, যশোর মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, জেলা শিক্ষা অফিসার, শিক্ষা মন্ত্রানালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, আঞ্চলিক পরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন।
তবে, এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সামছুল আলম ঢালী প্রধান শিক্ষিকা কামরুন নাহারকে লাঞ্চিতসহ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, প্রধান শিক্ষকা কামরুন নাহার ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবসরে গেছেন। এরপরও তিনি বিদ্যালয়ের জিনিসপত্র হস্তান্তর করেননি। এছাড়া চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের যে কাগজ দেখানো হচ্ছে সেখানে আমার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।
আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোমিনুল ইসলাম জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদলতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রধান শিক্ষিকা কামরুন নাহারের দায়ের করা মামলাটি ইতিমধ্যে রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, এ মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।