দুটি ট্রায়াল রানে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক :

চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে চারটি রুটে পণ্য ট্রান্সশিপমেন্টের ট্রায়াল রান (পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহণ) চেয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত।

দুটি রুটে ট্রায়াল রানে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ। এই সম্মতির কথা ২৫ জুলাই ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কুমিল্লার বিবিরবাজার ও সিলেটের শ্যাওলা স্থলবন্দরের পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা এবং সংযোগ রাস্তার অবস্থা ভালো না হওয়ায় আপাতত এ দুটি স্থলবন্দর দিয়ে ট্রান্সশিপমেন্ট দিতে সম্মত নয় বাংলাদেশ।

ট্রায়াল রানের ক্ষেত্রে আপৎকালীন শুল্ক ও ফি আদায় করা হবে। তবে পূর্ণোদ্যমে পণ্য ট্রান্সশিপমেন্ট হলে শুল্ক ও ফি কত হবে তা চূড়ান্ত হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।

জানতে চাইলে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা যুগান্তরকে বলেন, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় আমাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছে ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজ মোংলা বন্দরে আসবে।

ওই জাহাজ অগ্রাধিকার দিয়ে বার্থিং (বন্দরে ভেড়ানো) দিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের যন্ত্রপাতিও প্রস্তুত আছে। তবে জাহাজ কবে এ বন্দরে এসে পৌঁছবে তা এখনো জানানো হয়নি।

জানা গেছে, ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া (এসিএমপি)’ চুক্তির আওতায় এ ট্রায়াল রান অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ভারত চার রুটে ট্রায়াল রানের প্রস্তাব করেছিল।

রুটগুলো হলো-মোংলা বন্দর থেকে তামাবিল স্থলবন্দর; তামাবিল স্থলবন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর; চট্টগ্রাম বা মোংলা বন্দর থেকে শ্যাওলা স্থলবন্দর এবং চট্টগ্রাম বা মোংলা বন্দর থেকে বিবিরবাজার স্থলবন্দর।

প্রস্তাবে বলা হয়, কলকাতা থেকে কনটেইনারবাহী জাহাজ নৌপথে বাংলাদেশের বন্দরে আসবে। সেখান থেকে সড়কপথে ত্রিপুরার আগরতলা, মেঘালয়ের শিলং ও আসামের গৌহাটি যাবে। ভারতের চিঠিতে বলা হয়, মার্চে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের ‘জয়েন্ট গ্রুপ অব কাস্টমস’-এর ১৩তম সভায় চারটি ট্রায়াল রানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ভারতের ওই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রস্তুতি, শুল্কহার নির্ধারণ, ইমিগ্রেশন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ১৯ জুলাই সচিবালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রস্তাবিত চারটি ট্রায়াল রানের পরিবর্তে দুটিতে সম্মত হন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

রুট দুটি হচ্ছে-মোংলা বন্দর থেকে তামাবিল স্থলবন্দর এবং তামাবিল স্থলবন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর। অবকাঠামোতগত দুর্বলতার জন্য চট্টগ্রাম বা মোংলা বন্দর থেকে শ্যাওলা স্থলবন্দর এবং চট্টগ্রাম বা মোংলা বন্দর থেকে বিবিরবাজার স্থলবন্দর রুটে ট্রায়াল রান দেওয়া এই মুহূর্তে সম্ভব নয় বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ দুটি রুটে পরবর্তী ধাপে ট্রায়াল রান করা যেতে পারে বলেও মত উঠে আসে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার এসব সিদ্ধান্ত ২৫ জুলাই ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবরাহ করতে দুই দেশের মধ্যে ২০১৮ সালের অক্টোবরে চুক্তি হয়।

২০২০ সালের জুলাই মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রথম ট্রায়াল রান অনুষ্ঠিত হয়। তখন কলকাতা বন্দর থেকে পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। সেখান থেকে স্থলপথে পণ্য আগরতলা নেওয়া হয়েছিল। জাহাজে পণ্য ছিল ডাল ও রড।

কিন্তু করোনা মহামারিসহ নানা জটিলতায় গত চার বছরে এ চুক্তির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। তবে ভারত দ্রুতই এ চুক্তির বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছে।

এরই অংশ হিসেবে এবারের ট্রায়াল রানে ভারত আগরতলা, মেঘালয় ও আসামে পণ্য নেওয়ার প্রস্তাব করে। শ্যাওলা ও বিবিরবাজার স্থলবন্দর দিয়ে ট্রায়াল না হওয়ায় এবার আসাম ও ত্রিপুরায় পণ্য ট্রান্সশিপমেন্ট অনেকটাই অনিশ্চিত।

শুল্ক চূড়ান্ত হয়নি : সূত্র জানায়, ট্রায়াল রানের জন্য বন্দর, কাস্টমস ও সড়ক ব্যবহারের জন্য আপৎকালীন শুল্ক ও ফি আদায় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে পূর্ণোদ্যমে পণ্য ট্রান্সশিপমেন্ট হলে শুল্ক ও ফি কত হবে তা চূড়ান্ত করা হয়নি।

১৯ জুলাই নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় জানানো হয়, ট্রায়াল রানের পর চুক্তি কার্যকরের আগে ফি ও শুল্কহার নতুন করে নির্ধারণ করা হবে। ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে তা চূড়ান্ত করা হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)