জামাতা কারাগারে-আসামী স্বামীকে জাড়িয়ে স্ত্রীর গলা ছেড়ে কান্না
রঘুনাথ খাঁ:
পুলিশের সোর্স ও থানার দালালের প্রলোভনে পড়ে নাবালিকা ১০ম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রীকে বিয়ে দিয়ে কলেজ শিক্ষক স্বামীর দেওয়া মামলায় আসামী হয়ে জামিন নিলেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার শেখ আমানুল্লাহ ডিগ্রী কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ফাতেমা নার্গিস। এ সময় বিচারক এমজি আযম স্বামীর জামিন বাতিল করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ায় ওই স্কুল ছাত্রীর কান্নায় বুধবার দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বারান্দায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
এদিকে মামলার বাদি কলারোয়া শেখ আমানুল্লাহ ডিগ্রী কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মফিজুর রহমান আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. সাঈদুজ্জামান জিকো গালিগালাজ ও হুমকি দিয়েছেন এমন অভিযোগ এনে বুধবার দুপুরে সংশ্লিষ্ট আদালতে অভিযোগ ও সদর থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন।
কলারোয়া শেখ আমানুল্লাহ ডিগ্রী কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ও উপজেলা সদরের তুলসীডাঙা গ্রামের মফিজুর রহমান জানান, তার মেয়ে রিফাত হুমাইয়া রহমান মীম ২০২১ সালে কলারোয়া গার্লস পাইলট স্কুলে ১০ম শ্রেণীতে পড়াশুনা করতো। তার স্ত্রী কলারোয়া শেখ আমানুল্লাহ ডিগ্রী কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ফাতেমা নার্গিসের সঙ্গে পূর্ব পরিচয় সূত্রে একই উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের কাবিল হোসেনের ছেলে পুলিশের সোর্স ও থানার দালাল শফিকুল ইসলাম তাদের বাড়িতে মাঝে মাঝে আসতো। পাশের বাড়ির ইমামের টাইলস বসানো তিন তলা বাড়ির ছবি মোবাইলে দেখিয়ে ও নিজে খুলনার একটি কলেজ থেকে ইকোনমিকস এ অনার্স করেছে। পরে মাষ্টার্স করে ভাল চাকুরি পেয়ে যাবে মেয়ে ও মাকে এমন প্রলোভন দেখিয়ে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। স্কুলে ও প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে শফিকুল কুপ্রস্তাব দিতো মীমকে। বিষয়টি তিনি শফিকুলের বাবা কাবিল হোসেন ও ভাই টুটুলকে অবহিত করেন। এতে তারা আরো ক্ষুব্ধ হয়ে মীমকে অপহরণের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে মীমকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে মা ফাতেমা নার্গিস তাতে রাজী হয়ে যান। মেয়ের বয়স ১৫ বছর এক মাস হলেও সবকিছু জেনে শুনে শফিকুল ইসলাম, টুটুল ও তার বাবা কাবিল গত বছরের ডিসেম্বর সকাল ৬টায় প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে প্রাইভেটকারে করে মুখ বেধে তুলে নিয়ে যায় । খবর পেয়ে তিনি ছুটে গেলে স্ত্রী ফাতেমা নার্গিস অপহরণকারিদের পক্ষ নেয়। বাধ্য হয়ে তিনি শফিকুল, তার ভাই টুটুল ও বাবা কাবিল হোসেনের নামে ২২ ডিসেম্বর কলারোয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে জিআর-৪৮১/২১ নং মামলা করেন। আসামীরা মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ি সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে পুলিশ প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত জামিন লাভ করেন। একপর্যায়ে মীম ও শফিকুল স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে কাজীরাটের জাকির হোসেনের বাড়িতে স্বামী -স্ত্রী হিসেবে বসবাস করছে এবং সেখানে তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ফাতেমা নার্গিস অবস্থান করছে মর্মে তিনি জানতে পারেন। চলতি বছরের ২৬ ফেব্র“য়ারি র্যাব কাজীরহাটের জাকির হোসেনের বাড়ি থেকে শফিকুলকে আটক ও মীমকে উদ্ধার করে। ২২ ধারার জবানবন্দিতে মেয়ে শফিকুলকে ভালবেসে বিয়ে করেছে বলে জানায়। তবে হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করায়নি সে। পরে তিনি তিনি বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ আইনে শফিকুল ইসলাম, মীম ও ফাতেমা নার্গিস, বিবাহ রেজিষ্টার মাঃ রওশান আলম, নোটারি পাবলিক মোঃ ফারুক হোসেন ও শেখ রেজোয়ান উদ দৌলা বাচ্চুর নাম উল্লেখ করে বিচারিক হাকিম আদালতে সিআর-১৭/২২ নং মামলা দায়ের করেন। কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন নিকাহ রেজিষ্টার ও দুই নোটারী পাবলিককে তার অফিসে হাজির হয়ে কারণ দর্শাতে বলেন। তারা হাজির হয়ে কাবিননামা ও নোটারিতে উল্লেখিত সিলমোহর ও সাক্ষর তাদের নয় বলে লিখিতভাবে জানালে শফিকুল ইসলাম, মীম স্বামী স্ত্রী হিসেবে জাকির হোসেনের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। ফাতেমা নার্গিস তাদের সহযোগী বলে উল্লেখ করা হয়। এ মামলায় শমন পেয়ে আদালত থেকে জামিন নেন ওই তিনজন। এদিকে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কলারোয়া থানার উপপরিদর্শক জসীমউদ্দিন গত ১৭ জুন এজাহারভুক্ত তিনজনের নাম উল্লেখসহ তার স্ত্রী ফাতেমা নাগির্সের বিরুদ্ধে আদালতে অপহরণ ও ধর্ষণের ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন। বুধবার আদালতে হাজির হয়ে ফাতেমা নার্গিস জামিনের আবেদন করে। শফিকুল , টুটুল ও কাবিল হোসেন জামিন বাড়ানোর আবেদন করেন। আদালত তিনজনকে জামিন দিলেও শফিকুলকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ সময় তার মেয়ে মীম উচ্চস্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
অধ্যাপক মফিজুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হওয়া মাত্র আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. সাঈদুজ্জামান জিকো তাকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তাকে মারপিট করতেও উদ্যত হন ওই আইনজীবী। একজন সহকারি পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে কিভাবে তিনি এ মামলায় আসামীপক্ষের আইনজীবী হিসেবে অংশ নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাড. জিকো আরো ক্ষেপে যান। তাকে গালিগালাজ করায় ও কুমকি দেওয়ার ঘটনাটি তিনি অভিযোগ আকারে সংশ্লিষ্ট বিচারককে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। একইসাথে তিনি সদর থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অ্যাড. সাঈদুজ্জামান জিকো বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হওয়া মাত্র তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে জমি বিক্রি সংক্রান্ত নানা প্রশ্নবানে জর্জরিত করায় তিনি প্রতিবাদ করেন। এতে মফিজুর রহমানের সঙ্গে তার বাক বিতণ্ডা হয়। তিনি বলেন, ফতেমা নার্গিস বাড়ি থেকে বের হয়ে এসে স্বামীকে তালাক দেওয়ার আগেই একটি চেক বই ফেলে আসেন তিনি। তালাকের চিঠি পেয়ে তার চেক বইয়ের পাতা ব্যবহার করে নিজের পছন্দের পাচজনকে দিয়ে দুই কোটি টাকা চেক ডিজঅনারের মামলা করিয়েছেন ফাতেমা নার্গিসের বিরুদ্ধে।
ফাতেমা নার্গিস বলেন, ১৮ বছর তিন মাস বয়সে মীম এর সাথে শফিকুলের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। সঙ্গত কারণেই তিনি মেয়ে ও জামাতার সঙ্গে আছেন তিনি। ৫টি চেক ডিজ অনারের মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে।