শ্যামনগরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হামলা,এলাকা পুরুষশুন্য
রঘুনাথ খাঁঃ
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নের ট্যাংরাখালিতে আধিপত্য বিস্তারকে
কেন্দ্র করে বর্তমান ও সাবেক দু’ ইউপি সদস্যের কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে হামলা ও আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর ও দুইজন খুন হওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রমজাননগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ট্যাংরাখালি ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল
বারি গাজী বাদি হয়ে ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ লাল্টু ও ৯নং কালিঞ্চি ইউপি সদস্য আজগার আলী বুলুসহ ৭৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে শনিবার রাতে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার সঙ্গে
জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাব খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সাতজনকে আটক করেছে। তবে চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিনজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে পুলিশি নজরদারিতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে বিএনপি কর্মী আব্দুল হামিদ লাল্টুর নেতৃত্বে
আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের উপর হামলা, দলীয় অফিস ভাঙচুরের সময় দুইজন আওয়ামী লীগ কর্মী খুন হওয়ার ঘটনায় মামলা হওয়ায় ট্যাংরাখালি, ভেটখালি ও কালিঞ্চি গ্রাম পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে।
আটককৃতরা হলেন, ট্যাংরাখালি গ্রামের আব্দুল আজিজ গাজীর ছেলে আলাউদ্দিন গাজী, একই গ্রামের বাক্কার গাজীর ছেলে আলমগীর হোসেন, সুলতান গাজীর ছেলে ছাদেক গাজী , আব্দুর রশিদ কয়ালের ছেলে নাসির কয়াল, মোহাম্মদ মোল্লার ছেলে সোবহান মোল্লা, তার ভাই আল
আমিন, দাউদ গাজীর ছেলে আব্দুল আজিজ গাজী। এদের মধ্যে প্রথমাক্ত চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাবাদের জন্য প্রত্যেককে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়ে আদালতের
মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনা ও মামলার বিবরনে জানা যায়, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রমজাননগর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ আব্দুল বারী বিএনপি কর্মী আব্দুল হামিদ লাল্টুর কাছে পরাজিত হন। এরপর থেকে এলাকায় আধিপত্য
বিস্তারকে ঘিরে জয়ী ও পরাজিত ইউপি সদস্য্র ও তাদের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন
উপলক্ষ্যে শুক্রবার সোয়া ৬টার দিকে দিকে স্থানীয় ওয়ার্ড
আওয়ামী লীগের অফিসে বিশেষ সভা চলাকালে বর্তমান
ইউপি সদস্য বিএনপি কর্মী আব্দুল হামিদ লাল্টুর
নেতৃত্বে বিএনপি’র সভাপতি আনিছুর রহমান, লাল্টুর
ছেলে মোখলেছুর রহমান মিলন, মেহেদী হাসান,কালিঞ্চি
ইউপি সদস্য আজগার আলী বুলু, র্যাব-৮ এর কাছে
আত্মসমর্পণকারি বনদস্যু ট্যাংরাখালি গ্রামের আব্দুল
অলিম, মিকাইল হোসেন, মাদক মামলার আসামী ছাদেক,
ভাই আব্দুল কাদের, সোবহানসহ শতাধিক লোক হাতে দা,
লাঠি ও লোহার রড নিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা
চালায়।
ট্যাংরাখালি গ্রামের সোবহান গাজী, আজগার আলীসহ
কয়েকজন জানান, আব্দুল কাদের ও আমির হোসেন খুন
হওয়ার পর গ্রেপ্তার এড়াতে ট্যাংরাখালি, ভেটখালি ও কালিঞ্চি
গ্রামসহ পাশ্ববর্তী এলাকা পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক
মোমরেজ হোসেন জানান, আমীর হোসেন, আব্দুল কাদের
হত্যা ও কয়েকজন জখম ও আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুরের
ঘটনায় ট্যাংরাখালি গ্রামের মৃত তফিলউদ্দিন গাজীর ছেলে ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারি বাদি
হয়ে ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ লাল্টু, ইউপি সদস্য
আজগার আলী বুলুসহ ৭৩ জনের নাম উল্লেখ করে
অজ্ঞাতনামা আরো ৫০ জনকে আসামী করে শনিবার থানায়
একটি হত্যা মামলা (১৩) দায়ের করেছেন। শনিবার বিকেল
তিনটার দিকে খুলনা র্যাব-৬ এর সদস্যরা খুলনা মেডিকেল
কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন সাতজনের মধ্যে
চারজনকে গ্রেপ্তার করে রাতেই থানায় সোপর্দ করে। বাকী
তিনজনকে আটক করে পুলিশি নিরাপত্তায় চিকিৎসা
দেওয়া হচ্ছে। চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেককে সাত দিন করে রিমান্ড
আবেদন জানিয়ে রবিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেল
হাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেপ্তারের
চেষ্টা চলছে।