পানগুছি নদীর ভাঙনে দিশেহারা হাজারো পরিবার

নিউজ ডেস্ক:

বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে পানগুছি নদীর অব্যাহত ভাঙনে দিশেহারা এ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ। ৮০ দশক থেকে নদীর তীরবর্তী দু’পাড়ে ৯টি ইউপির ২০টি গ্রামের হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি, বসতবাড়ি, কাঁচাপাকা রাস্তাঘাট, নদীগর্ভে বিলীন হয়ে প্রতিনিয়ত শত শত পরিবার হচ্ছেন অভিবাসন। রয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের কোল ঘেষে বয়ে যাওয়া পানগুছি নদীর তীরে অবস্থিত মোরেলগঞ্জ উপজেলা।

বিটিশ শাসন আমলে রবার্ট মোরেলের নামে প্রতিষ্ঠিত মোরেলগঞ্জ শহর। এ বন্দরটি নদীর তীরবর্তী হওয়ায় এক সময়ে আমদানি রফতানি উল্লেখযোগ্য একটি বৃহৎ ব্যবসায়ীক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিলো। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে ৭ নভেম্বর মোড়েলগঞ্জ উপজেলা সরকারিভাবে রুপান্তিত হয়। ৪৩৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে ১৬টি ইউনিয়নসহ পৌরসভা নিয়ে এ উপজেলাটি। জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ৪ লাখ। এ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল।

ভাঙনের মুখে গ্রাম

৮০ দশকে ছোট আকারে পানগুছি নদীটি এখন প্রতিনিয়ত অব্যাহত ভাঙনে ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে খাউলিয়া ইউপির খাউলিয়া, সন্ন্যাসী, মধ্য বরিশাল,পশুরবুনিয়া, মোড়েলগঞ্জ সদর ইউপির গাবতলা, কাঁঠালতলা, বারইখালী ইউপির বারইখালী, কাশ্মির, তুলাতলা, উত্তর বারইখালী, উত্তর সুতালড়ী, বহরবুনিয়ার ইউপির বহরবুনিয়া, ফুলহাতা, ঘষিয়াখালী।

এছাড়াও তেলিগাতি, পঞ্চকরণ, পুটিখালী, বলইবুনিয়া ও হোগলাবুনিয়ার নদীর দু’পাড়ের তীরবর্তী ৯টি ইউপির ২০টি গ্রামের হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি অর্ধশত কাচাপাকা রাস্তা বসতবাড়ি নর্দীগভে বিলীন হয়েছে। প্রতি বছরই নতুন নতুন কাচা রাস্তা নির্মাণ করা হলেও ভাঙণে তা কাজে আসছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ এলাকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা  কাটে প্রকৃতিক দুর্যোগ বন্যা, জ্বলোচ্ছ্বাস, অতি বৃষ্টি, অতিরিক্ত খরা, নদী ভাঙণ, লবণাক্ততার সঙ্গে সংগ্রাম করে বসবাস করতে হচ্ছে।

নদীর তীরবর্তী গ্রামের শত শত বাসিন্দারা তাদের সর্বস্ব হারিয়ে চলে যাচ্ছে বিকল্প কর্মসংস্থানের তাগিদে বিভিন্ন উপজেলা ও শহরে। আবার অনেকেই অন্যের জমিতে আশ্রয়ে রয়েছেন। বসবাস করছেন ভেড়িবাঁধের পাশে ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে।

প্রতিবছর এই প্রকৃতিক বিপর্যয় হরণ করে নিচ্ছে জমির উর্বরতা। লবণাক্ততার বৃদ্ধির ফলে ৪৪ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমির মধ্যে আবাদ হচ্ছে মাত্র ২৮ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে।  উৎপাদনতা কমে গিয়ে অনাবাদি পতিত জমি সৃষ্টি হচ্ছে।

এদিকে এ উপজেলায় বেসরকারি সংস্থা সুশিলন, পানিই জীবন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২১ সালে ১ অক্টোবর থেকে ৬টি ইউনিয়নে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠির আর্থ সামাজিক মান উন্নয়নে কাজ করছে।

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামতে উপজেলা কৃষি অফিসার আকাশ বৈরাগী বলেন, এ উপকূলীয় মানুষের ফসলি জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন করতে হলে লবণাক্ততা কাটিয়ে এক ফসলি জমিগুলোকে সরজান পদ্ধতিতে চাষাবাদ জোয়ার ভাটা পানিবাহিত স্থানে স্থায়ী ভেড়িবাধ পলিপড়ে ভরাট হয়ে যাওয়া খালগুলোকে পুনঃখনন, শীত মৌসুমে লবণাক্ত খালগুলোতে বাঁধ দিলে রবি শস্য ফসলসহ একাধিক ফসল ফলানো সম্ভব।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম জানান, এ অঞ্চলে সুপেয় পানি ব্যবহারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা অনুযায়ী লবণাক্ততার মাত্রা দূর করার লক্ষে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে পানি সরবরাহ প্রকল্প এরই মধ্যে একনেকে পাশ হয়েছে। উপকূলীয় ১০টি জেলায় ২২২ টি ইউপিতে ১ লাখ আর ডব্লিউ এইচ পানির ট্যাংকি সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ইউএনও মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ উপজেলার ফসলি জমি বৃদ্ধি করতে ৩ ফসলি জমি লজিক প্রকল্পের মাধ্যমে এরইমধ্যে ৪টি ইউপির ১ হাজার হেক্টর জমি এর আওতায় নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে রবি শস্য ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করছেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)