তালতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির দুই ছাত্রকে নির্যাতন, নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন প্রধান শিক্ষক
রঘুনাথ খাঁঃ কোন কারণ ছাড়াই ষষ্ঠ শ্রেণীর দুই ছাত্রকে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগে মামলা থেকে বাঁচতে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন প্রধান শিক্ষক। সোমবার বিকেলে সাতক্ষীরার তালতলা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কক্ষে এক জরুরী সভায় ক্ষমা চান প্রধান শিক্ষক মোঃ রেজাউল করিম। তবে এটা মেনে নিতে পারেননি ওই দুই ছাত্রের স্বজনরা।
এদিকে তালতলা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুই ছাত্রকে নির্যাতনের ঘটনা ফলাও করে মঙ্গলবার স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়। প্রতিবেদনে নির্যাতনকারি প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম ও অভিভাবক সদস্য মোহসিনুল হাবিব মিন্টুর বারবার বাঁচানোর কথা তুলে ধরা হয়। বিষয়টি ইংরাজী শিক্ষক এসএম মোর্তজা আলম সাংবাদিকদের তথ্য সরবরাহ করেছেন এমন অভিযোগে ওই শিক্ষককে মঙ্গলবার দুপুর সোয়া একটার দিকে মোহসিনুল হাবিব মিন্টু ওই শিক্ষককে অন্যান্য সহকর্মীদের সামনে লাঞ্ছিত করেন।
তালতলা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক এসএম মোর্তজা আলম বলেন, সোমবার প্রধান শিক্ষকের হাতে ষ্ষ্ঠ শ্রেণির দুই ছাত্র নির্যাতনের শিকার হওয়া সংক্রান্ত মঙ্গলবার স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে প্রধান শিক্ষক মোঃ রেজাউল করিম ২০১৪ সালে আদম ব্যাপারী হিসেবে নড়াইলে কারাগারে ছিলেন মর্মে উল্লেখ করা হয়। মঙ্গলবার দুপুর সোয়া একটার দিকে অভিভাবক সদস্য মোহসিনুল হাবিব মিন্টু একটি খবর কাগজ নিয়ে শিক্ষকদের কক্ষে ঢোকেন। এসময় কাগজ পড়তে পড়তে প্রধান শিক্ষকের জেল খাটার বিষয়টি তিনি(লটন) সাংবাদিকদের তথ্য দিয়েছেন এমন কথা বললে তিনি প্রতিবাদ করেন। এ সময় মিন্টু তাকে শারিরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিকতভাবে সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক বিশ্বজিৎ অধিকারীকে অবহিত করেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তার তাকে থানায় সাধারণ ডায়েরী করতে পরামর্শ দিলে তিনি বাড়িতে চলে আসেন। রাতে তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরী করতে যাবেন এমন খবর পেয়ে মিন্টু, তার শ্বশুর শওকত হোসেন ও বিদ্যালয়ের সাবেক অভিভাবক সদস্য হেলালউদ্দিন বিকেলে তার বাড়িতে যেয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তার কাছে ক্ষমা চান।
এদিকে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের কয়েকজন অভিভাবক জানান, একজন পুলিশ সদস্যের মেয়েকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করার প্রতিবাদ করায় নিউ টেন এর সায়েদ ও আনোয়ারুলসহ চারজনের কাছ থেকে মুচলেকা লিখে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক মোঃ রেজাউল করিম, সভাপতি মনিরুল ইসলাম ও অভিভাবক সদস্য মিন্টু। যে কোন মুতুর্তে তাদেরকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট দেওয়া হতে পারে বলে ওই চার ছাত্রের অভিভাবকরা শঙ্কায় রয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তালতলা আদর্শ মাধ্রমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অভিভাবক সদস্য মোহসিনুল হাবিব মিন্টুর সঙ্গে মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ছয়টার তার মোবাইল ফোনে যোগযোগ করলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে কেটে দেন।
প্রসঙ্গত, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শ্রেণি কক্ষে না যেয়ে সাতক্ষীরা সদরের তালতলা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে থাকার অভিযোগে ষষ্ঠ শ্রেণির দু’ ছাত্রকে অফিসে ডেকে এলাপাতাড়ি মারপিট ও ৪০ বার করে কান ধরে উঠবশ করান প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম। পরে আহত ছাত্র জাহিদ হোসেনকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অপর ছাত্র সাব্বির হোসেন স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেয়। জাহিদ হোসেনের বাবা নির্মাণ শ্রমিক বাহারুল ইসলাম ছেলেকে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে থানায় অভিযোগ করতে যান। ছেলেকে কর্তব্যরত অফিসারের ঘরে বসিয়ে তিনি আবু সাইদের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এজাহার লিখে থানার ভিতরে ঢোকা মাত্রই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম তার হাত থেকে অভিযোগের কপি কেড়ে নিয়ে জোর করে থানা থেকে ডেক বিদ্যালয়ে শালিসি সভায় বসতে বাধ্য করেন। একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষক তার কৃতকর্মের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চান। তবে এ সময় সাব্বিরের বাবা বা স্বজনরা শালিসি সভায় উপস্থিত ছিলেন না।
মাগুরা দাসপাড়ার নিজামউদ্দিনের ছেলে বারুরালি বলেন, তার নির্দোষ ছেলেকে যেভাবে প্রধান শিক্ষক পিটিয়ে জখম করেছেন তার বিচার চাওয়ার ক্ষমতা তার মত ভ্যান চালকের নেই। তিনি এ বিচারের দায় সৃষ্টিকর্তার উপর ছেড়ে দিলেন। এরপরও ছেলেটি অসুস্থ হলেও মঙ্গলবার কৃষি শিক্ষার পরীক্ষা থাকায় তাকে পাঠানো হয়। পরীক্ষা চলাকালে প্রধান শিক্ষক সকল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন যে তিনি আর কোন শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করবেন না।