সাতক্ষীরায় মুক্তিযোদ্ধার নাম ভাঙিয়ে অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ দক্ষিণ শার্শার তবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা :

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দক্ষিণ শার্শা গ্রামের মৃত ফকির আহম্মেদ গাজীর ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা তবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যয়নপত্র দেওয়া, মামলা করে আপোষ মীমাংসার নামে টাকা আত্মসাৎ, টাকার বিনিময়ে ভূয়া আনছার ভিডিপির প্রত্যয়ন যোগাড় করে অন্যকে চাকুরিতে সহায়তা করা, চাকুরি দেওয়ার নামে প্রতারণাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্ণতির অভিযোগ উঠেছে। রবিবার দুপুরে সাতক্ষীরার শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে এক প্রেস ব্রিফিংএ এসব কথা জানান কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাসহ ভুক্তভোগীরা।

তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাঁচাই বাছাই কমিটিতে কৃষ্ণনগরের ললিত মোহন সাহার পক্ষে যাঁচাই বাছাই কমিটিতে সাক্ষ্য প্রদানকারি তালার ঘোষনগরের মুক্তিযোদ্ধা অমল কুমার ঘোষ, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডের ডেপুটি কমাণ্ডার শফিক আহম্মেদ, খুলনার পাইকগাছা উপজেলার খড়িয়া গ্রামের আব্দুল খালেক সানা জানান, তারা বাস্তবতার ভিত্তিতে ললিত মোহন সাহাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাঁচাই বাছাই কমিটির সামনে উপস্থাপন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক খুলনার রহমতুল­াহ দাদু ২০১০ সালে ললিত মোহন সাহার পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রত্যয়ন দিয়েছে।

সদরের বলাডাঙার বিশিষ্ট সাহিত্যিক আবুল হোসেনের লেখা মুক্তিযুদ্ধের সাতক্ষীরা বই এর ৬৪ পাতায় তবিবুর রহমানের বড় ভাই মতিয়ার রহমানকে রাজাকার হিসেবে সাত নং তালিক্য়া নাম থাকলেও অসদুপায়ে তাকে মুক্তিযোদ্ধা বাাননোর চেষ্টা চলছে। মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন লেঅকজনদের সুবিধা দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়ে প্রতারণা করেছেন। তারা বলেন, যাঁচাই বাছাই কমিটির কার্যক্রম শেষ না হওয়ার আগে তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ করে তবিবুর রহমান অন্যায় করেছেন।

মুক্তিযোদ্ধা অমল কান্তি ঘোষ, নূর আলী সরদার ও আব্দুস সাত্তার জানান, অনিয়ম ও দূর্ণীতির দায়ে জেরবার হওয়া তবিবুর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের জন্য তারা গত ২২ ফেব্র“য়ারি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেছেন।

তালা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের সহকারি স্কুল শিক্ষক প্রতাপ সাহা জানান, তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দক্ষিণ শার্শার তবিবুর রহমান নিজেই ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই ও ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর ললিত মোহন সাহা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন মর্মে দুইবার প্রত্যয়ন দিয়েছেন। এজন্য তিনি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের নাম করে তাদের কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা নিয়েছেন।

পরবর্তীতে তাদেরকে বিপাকে ফেলে বারবার টাকা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন তবিবুর রহমান। যাচাই বাছাই কমিটিতে যাতে তার বাবার বিপক্ষে প্রতিবেদন দেন সেজন্য তবিবুর রহমান তড়িঘড়ি করে ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর তাদের বিরুদ্ধে আদালতে সনদ জালিয়াতির মামলা করে হেরে হেছেন। মামলা তুলে নিতে তাদের কাছ থেকে এফিডেফিড করতে সাড়ে চার লাখ টাকা নিয়েছেন তবিুবর রহমান। এরপরও তিনি আদালতের কাঠগোড়ায় উঠে মামলা না তোলার জন্য বললেও পিবিআই প্রতিবেদনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিচারক ওই মামলা খারিজ করে দেন। খারিজ আদেশে বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের এক্তিয়ার এবং বাদির মামলা করার সূযোগ নেই বলে উলে­খ করা হয়েছে।

প্রতাপ সাহা আরো বলেন, তবিবুর রহমান তার নিজের মেয়ে ফারজানা ইসলামের সহপাঠি কালিগঞ্জের চম্পাফুলের মলি­কা সরকারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ফুলতলার এক আনছার ভিডিপি কর্মকর্তার কাছ থেকে ভূযা সনদ যোগাড় করে দেন। ওই সনদ দিয়ে ২০০২ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হিসেবে চাকুরি করার সহযোগাগিতা করলেও তদন্তে জাল প্রমালিত হওয়ায় মলি­কার চাকুরি চলে যায়। তবে ২০১০ সালে মলি­কা আবারো একইপদে কালিগঞ্জের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।

দক্ষিণ শার্শা দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে একই গ্রামের সাজ্জাদ হোসেনের ছেলে বেলালকে কম্পিউটর অপারেটর কাম করণিক পদে চাকুরি পাইয়ে দেওয়ার নামে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে সাড়ে চার লাখ টাকা নেন তবিবুর রহমান। তাকে বাদ দিয়ে খালেক শেখের ছেলে মিলনের কাছ থেকে আরো বেশি টাকা নিয়ে তাকে চাকুরি দিতে গেলে উভয়পক্ষের সংঘর্ষে নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। সানতলা গ্রামের মারুফাকে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন, একজন ডাক্তার, ওয়ার্ডমাষ্টারসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে নিতে আসামীদের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে বাদিকে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে মামলা তুলে নিতে বাধ্য করেন তবিবুর রহমান।

এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা যাঁচাই বাছাই কমিটির তালা শাখার সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক অধ্যক্ষ সুভাষ সরকার জানান, তারা বর্তমান সরকারের সর্বশেষ প্রজ্ঝাপন মেনে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ তাদের কার্যক্রম অনৈতিকভাবে চলছে এটা বলার এক্তিয়ার তবিবুর রহমানের নেই।

তবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত এসব অভিযোগ সম্পর্কে তবিবুর রহমান বলেন, ললিত মোহন সাহার ছেলেরা নিজেদের ত্র“টি ঢাকতে তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন। তিনি টাকা নিয়েছেন এমন কোন প্রমাণ সাহা পরিবারের সদস্যদের কাছে নেই। তিনি কোন অমুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর বিরোধীতা করেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)