বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করেন যাত্রীরা

অনলাইন ডেস্ক :

মৌলভীবাজারের শমসের নগর এলাকায় পারাবত এক্সপ্রেসের তিনটি বগি আগুনে পুড়ে গেছে। শনিবার দুপুর ১টার দিকে ট্রেনের ‘পাওয়ার কার’ থেকে আগুন লাগে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুপুর দুইটার পর ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে সিলেট-আখাউড়া পথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। এই ঘটনায় অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন।

ঘটনার পর ট্রেনযাত্রী সুকেশ দাশ সমকালকে বলেন, ‘আমি শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে সিলেট যাওয়ার উদ্দেশে ট্রেনের ‘ঙ’ বগিতে উঠি। ট্রেনটি শমশেরনগর রেল স্টেশন অতিক্রম করার পরই টয়লেটের পাশ থেকে বিকট শব্দ শুনতে পাই। পরে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এসময় ট্রেনে থাকা সবাই চিৎকার শুরু করেন।’

সিলেটগামী ট্রেনযাত্রী আব্দুল জব্বার বলেন, ‘ট্রেনের বগিতে ধোয়া দেখে যাত্রীরা বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করেন। স্থানীয় লোকজন তখন এগিয়ে আসেন। ট্রেন থেমে গেলে যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে পড়েন। তারপর স্থানীয় লোকজন হাঁড়ি-পাতিলে পানি নিয়ে ট্রেনের বগিতে লাগা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোক এসে আগুন নেভাতে শুরু করেন।’

ডাকবেল এলাকার পতনঊষার ইউপি সদস্য সিরাজ খান জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস দুপুর ১টার দিকে শমশেরনগর রেল স্টেশন অতিক্রম করে। কিছুক্ষণ পরই ট্রেনের জেনারেটরের বগিতে আগুন দেখা যায়। পরে তেলের টাংকি থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর প্রায় ৩ কি.মি. অতিক্রম করার পর ডাকবেল-চককবিরাজি এলাকায় যাত্রীদের চিৎকারে ট্রেনটি থামানো হয়। তখন যাত্রীরা দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে পড়েন।

তিনি জানান, যাত্রীদের সহযোগিতায় ট্রেনের লোকজন আগুন লাগা তিনটি বগি বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরে ট্রেনের জেনারেটর বগি ও পার্শ্ববর্তী যাত্রীবাহী দু’টি এসি বগিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। খবর পেয়ে ঘটনার প্রায় ১ ঘণ্টা পর স্থানীয়দের সহযোগিতায় কমলগঞ্জের ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও পরে মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে চারটি অগ্নিনির্বাপক দল এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত উদ্দিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোমাইয়া আক্তার, কমলগঞ্জ থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান, শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোশারফ হোসেন, কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমদ, রেলওয়ের বিভাগীয় কর্মকর্তা খায়রুল কবিরসহ প্রশাসন ও রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ট্রেনের যাত্রীরা অনেক সড়কপথে সিলেটসহ বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছান।

পারাবত এক্সপ্রেসের পরিচালক মো. ইসমাইল বলেন, ট্রেনের পাওয়ার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানতে পেরেছি। ট্রেন থামানোর পর দেখা যায়- চাকার মধ্যে আগুন ও পরে তেলের টাংকিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

শমশেরনগর স্টেশন মাস্টার মো. জামাল উদ্দীন বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকে সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি লংলা স্টেশনে ও চট্রগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি শ্রীমঙ্গলে আটকা পড়ে। তবে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এলে বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে সিলেট-ঢাকা রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশন মৌলভীবাজারের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ হারুন পাশা বলেন, ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)