তালায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অমুক্তিযোদ্ধাকে তালিকা ভূক্তির চেষ্টার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিনিধি :
সাতক্ষীরার তালায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অমুক্তিযোদ্ধাকে তালিকা ভ‚ক্তির চেষ্টার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের আব্দুল মোতালেব মিলনায়তনে উক্ত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন, উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার দক্ষিণ শার্শা গ্রামের মৃত ফকির আহমেদ গাজীর পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা তবিবুর রহমান।
তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমি তালা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সাংগঠনিক কমান্ডার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার, সন্তান ও পোষ্যদের জন্য কিছু সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছেন। এ সুবিধা ভোগের উদ্দেশ্যে কতিপয় অমুক্তিযোদ্ধা জালিয়াতির মাধ্যমে সনদপত্র সৃষ্টি করে মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া সুবিধা ভোগ করে আসছেন। যে কারনে বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাচাই শুরু হয়েছে। আমি ধানদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা।
এই ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের প্রয়াত লোলিত মোহন সাহা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। ১৯৭১ এর পর দীর্ঘকাল যাবত কখনো তাকে মুক্তিযোদ্ধা দাবিও করেনি তার পরিবার। অথচ পত্রপত্রিকার মাধ্যমে ২০১৯ সালে জানতে পেরেছি তার পুত্ররা যথাক্রমে বীরেন্দ্র নাথ সাহা, প্রতাপ কুমার সাহা ও পৌত্র সুমন সাহা মুক্তিযোদ্ধার একটি সাময়িক সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্টি করেছে। ওই জাল সনদে তারা সরকারি চাকুরি করে আসছেন। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দেওয়া সুবিধা জালিয়াতির মাধ্যমে অন্য কেউ ভোগ করবে এটি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি মেনে নিতে না পেরে আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। পিবিআই তদন্ত করে ওই সনদটি সঠিক নয় মর্মে উল্লেখ করে একটি রিপোর্টও প্রদান করেন।
অথচ ১৪৮৬০ নং সনদ প্রদর্শন করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে বীরেন্দ্র নাথ সাহা ও প্রতাপ কুমার সাহা এবং পৌত্র উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে সুমন সাহা চাকুরি করে আসছেন। এবিষয়ে সকল দপ্তরে অভিযোগ করা হলেও মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে বহাল তবিয়তে চাকুরি করে যাচ্ছেন ওই অমুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। তিনি বলেন, তাদের পিতা লোলিত মোহনের লাল মুক্তিবার্তা, গেজেট নেই তবুও জালিয়াতির মাধ্যমে সাময়িক সনদে বছরের পর বছর চাকুরি করে আসছেন। সম্প্রতি তালায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই শুরু হলে অমুক্তিযোদ্ধা পিতাকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে গেজেট ভুক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। চলমান যাচাই-বাছাই কমিটিতে বিভিন্ন প্রকার অসামঞ্জস্যপূর্ণ আবেদন ও কাগজপত্র দাখিলসহ অর্থের বিনিময়ে ভাড়াটে স্বাক্ষী উপস্থাপন করেছেন। আমি এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও যাচাই-বাছাই কমিটি আমার আপত্তির কোন মূল্যায়ন করছেন না।
সাক্ষ্যদেওয়া ব্যক্তিরা দাবি করছেন, লোলিত মোহন নৌ কমান্ডে যুদ্ধ করেছেন, আবার গেজেট ভুক্তির আবেদনে মুজিব বাহিনী তথা তোফায়েল আহমেদ এর নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছেন বলে দাবি করেন। আবার আবেদনের সাথে তোফায়েল আহমেদ স্বাক্ষরিত সনদের পরিবর্তে দেখাচ্ছেন ওসমান গণি স্বাক্ষরিত সনদ। ওই অমুক্তিযোদ্ধাকে তালিকাভুক্তির জন্য মোটা অংকের অর্থের প্রলোভনে কতিপয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা সাক্ষী দিচ্ছেন এবং স্বাক্ষীগুলোর সঠিকতা যাচাই-বাছাই কমিটি যথাযথ নীতিমালা অনুসরন করছেন না বা স্বাক্ষীদের কোন প্রকার জেরা করা হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, আমি ওই জালিয়াতির বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিবাদ করায় আমার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা অপবাদ লাগিয়ে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন ওই অমুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা।
আমি দুর্নীতির সাথে আপোষ করি না। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অংশ না নিয়েও মুক্তিযোদ্ধা সেজে সুবিধা ভোগ করবে এটি হবে না। সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি এ সময় ওই অমুক্তিযোদ্ধা যাতে কোন ভাবেই গেজেটভুক্ত হতে না পারে সে বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, নিরাপত্তা গোয়েন্দা এন এস আই,সিআইডিসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেন মশু, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোড়ল আবু বক্কার, বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম মো: ফজলুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: নেছার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আলতাফ হোসেন।