নাকের হাড় বাঁকা এবং নাক বন্ধ থাকলে করণীয়
অনলাইন ডেস্ক :
‘আলহামদুলিল্লাহ, প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছি। এইমানুষ যে এত সুন্দরভাবে নিঃশ্বাস নেয় তা জানতাম না।’ এক সকালে মোবাইলে মেসেজটা এলো। পাঠিয়েছেন সিলেটের কানাইঘাটের ২৭ বছরের এক স্মার্ট যুবক, যার ৭ দিন আগে নাকের হাড় বাঁকার অপারেশন হয়েছিল। দীর্ঘদিন মাথা ও নাকের পাশে ব্যথা, নাক বন্ধজনিত কারণে শ্বাস নিতে সমস্যায় ভুগে অবশেষে আশ্বস্ত হয়ে অপারেশন করিয়েছেন।
* নাকের হাড় বাঁকা থাকলে কী কী সমস্যা হতে পারে
নাকের হাড়টা যেদিকে বাঁকা, সেই পাশে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। নাক বন্ধ মনে হতে পারে কারণ বাঁকা অংশে বাতাস চলাচলের পথ সরু থাকে। মাথাব্যথা, মাথায় চাপচাপ অনুভূতি, সবসময় সর্দি, এমনকি কানেও তালা লাগার মতো সমস্যা হতে পারে। হাড় বাঁকার কারণে নাক দিয়ে রক্তপাত এবং নাকের ভেতরে ইনফেকশন হতে পারে। হাড় বাঁকার কারণে সাইনাস ইনফেকশনের সময় নিঃসৃত হওয়া শ্লেষ্মা (পোস্ট ন্যাসাল ড্রিপ) রোগীর নাকের পিছনে অথবা গলায় জমা হতে পারে। এই পোস্ট ন্যাসাল ড্রিপের শ্লেষ্মা জমা হওয়ার ফলে কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন, গলায় অস্বস্তি, গলাব্যথা, ঘ্রাণানুভূতি হারানো অথবা প্রায়সময় গলা পরিষ্কার করার প্রয়োজন হতে পারে। নাক দিয়ে শ্বাস নিতে না পারার কারণে রোগী নাক ডাকে, ঘুমের মধ্যে মুখ শুকিয়ে যায়।
* চিকিৎসা
নাকের হাড় বাঁকা থাকলে এবং এ হাড় বাঁকার কারণে সৃষ্ট সমস্যা প্রাথমিকভাবে ওষুধ দ্বারাও সমাধান না হলে এবং সবসময় ড্রপ ব্যবহারের দরকার হলে অপারেশনের মাধ্যমে একে ঠিক করে নিতে হয়। এক্ষেত্রে সার্জারির বিকল্প নেই। আমাদের নাকের মাঝখানের পার্টিশন কয়েকটি হাড় এবং কার্টিলেজের সমন্বয়ে গঠিত। বেঁকে যাওয়া সেপটাম অর্থাৎ নাকের পার্টিশন সোজা করতে এবং নাকের মধ্যকার বাতাস চলাচল সহজ করতে যে সার্জারি করা হয় তাকে সেপ্টোপ্লাস্টি বলা হয়। তবে বয়সভেদে অপারেশনের ধরনেও রয়েছে ভিন্নতা। অপারেশনের পর ২৪ ঘণ্টার জন্য রোগীর নাকের ভেতরে প্যাক দেওয়া হয়, এ সময়ে রোগীকে আগে থেকে কাউন্সিলিং করা হয় মুখ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জন্য।
* অপারেশন নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা
আমাদের মন এখনো কুসংস্কারে ভরা, তাই আধুনিক যুগে এসেও নাকের হাড় বাঁকায় কবিরাজি চিকিৎসা গ্রহণ করে অজান্তে নিজের ক্ষতি করে থাকেন। অনেকের মধ্যে একটি ধারণা কাজ করে, নাকের হাড় বাঁকার অপারেশন করলেও রোগটি আবার হতে পারে। তবে ধারণাটি একদম সঠিক নয়। ভালোভাবে দক্ষ সার্জনের মাধ্যমে অপারেশন করা হলে রোগী অবশ্যই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়। তবে এখানে মনে রাখতে হবে অ্যালার্জিজনিত কারণে নাকের মাংস বৃদ্ধি হলে অপারেশনের পর আবার সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিন্তু নাকের অ্যালার্জি না থাকলে হাড় বাঁকার অপারেশন করার পর আবার কোনো সমস্যা সাধারণত দেখা দেয় না।
লেখক : নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন, রেজিস্ট্রার, নাক-কান-গলা বিভাগ; সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।