শ্যামনগরে অবৈধভাবে খোলপেটুয়া নদী থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগ
ঠেকানো যাচ্ছে না শ্যামনগরে নদী থেকে বালু উত্তোলন। পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি যেনো গা-সওয়া বিষয় হয়ে গেছে। সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে না। ব্যবস্থা নেওয়া হয় না অভিনব কায়দায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে। সাংবাদিকরা বালু উত্তোলনের ছবি তুলতে গেলে স্থানীয়দের মুখে শোনা যায় নানা কথা। ক্ষোভে ও দু:খে তারা বলেন, ‘ছবি তুলে চান্দে পাঠাও, সগ্গুলি দেখুক।’
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে খোলপেটুয়া নদী থেকে এভাবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ছবি ধারণ করতে গেলে স্থানীয়রা বলেন, ‘ছবি তুলে কী করবা, চান্দে পাঠাবা নাকি? বালু উত্তোলনের খবর ছাপায়ি কী আরাম পাবা? প্রশাসন তো এ পর্যন্ত কারো কিছু করতি পারিছে? বালু তোলা কী বন্ধ হয়িছে? যা বন্ধ করতি পারবা না, তা করতি যাও কেনো তুমরা, হ্যাঁ? চোখ থাকতি যারা দেকতি পায়না তাগির কি ক’রি দিখাবা তুমরা?’
এদিকে সরেজমিনে দেখা যায়, স্থানীয় ও বহিরাগত একাধিক ব্যবসায়ী বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয়ের জন্য ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। উত্তোলিত বালু নওয়াবেকী বড় কুপুট ও বেশকিছু জায়গায় গুদামজাতের পাশাপাশি বিভিন্ন ঠিকাদার ও ব্যক্তির চাহিদামতো সরবরাহ করা হচ্ছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন সম্প্রতি বেশকিছু জরিমানা করেছে তার পরেও যেন থামছে না অবৈধ বালু উত্তোলন। বারবার ভাঙনের মুখে পড়া এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কখনো কখনো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসন এমনকি পাউবোর সংশ্লিষ্টরা পর্যন্ত অজ্ঞাত কারণে নীরবতা পালন করে যায়। দুর্যোগপ্রবণ অংশ থেকে টানা বালু উত্তোলনের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ভাঙনের আতঙ্ক বাড়ছে।
সরেজমিন শ্যামনগর উপজেলার খোলপেটুয়া নদী তীরবর্তী বিড়ালাক্ষী ও পাখিমারা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাঝ নদীতে একাধিক ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ছোট কাঠের নৌকা ও কার্গোর মধ্যে বসানো ওই মেশিনের সহায়তায় নদীর গভীর থেকে বোরিং করে বালু উত্তালন করা হচ্ছে। একই সময়ে সেই বালু নির্দিষ্ট স্থানে নেওয়া হচ্ছে।
সামনে আর একটু এগোতেই দেখা যায়, এমভি নওয়াবেঁকী এন্টারপ্রাইজ ও নামের একটা নৌকা নওয়াবেঁকী বাজার ও বিড়ালাক্ষী আশ্রয়ন প্রকল্পে যাওয়ার পথে রাস্তার পাশে বিশাল জায়গা জুড়ে বালুভরাট করছে। বালু উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের কাছে জানতে চাইলে তারা পকেট থেকে একটি স্লিপ বের করে দেয়। সেটা দেখার পর প্রতিবেদক ছবি নিয়ে আসতেই হুমায়ুন কবির নামের এক ব্যক্তি ফোন করে বলেন, আমাদের বালু উঠছে তাতে তোমার কি সমস্যা?
এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শহীদুল্লাহর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্যামনগরের কোন বালুমহাল নেই। কোথাও থেকে উঠালে তাদের ব্যবস্থা বিরুদ্ধে নেওয়া হবে। এদিকে বালু উত্তোলনকারীদের দাবি তারা আশাশুনি থেকে বালু উত্তোলন করে আনছে। আশাশুনি বালু মহাল আছে কিনা এবং তার ইজারা আছে কিনা জানতে আশাশুনি সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহিন সুলতানার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমাদের জেলেখালি নামক এক স্থানে ইজারা থাকলেও থাকতে পারে, তবে ইজারা না থাকার কথা। নতুন করেই ইজারা দিয়েছে কিনা আমি জেনে বলবো। এদিকে উপকূলের মানুষের দাবী দ্রুত কিছু সংখ্যক ব্যক্তির কারণে গোটা উপকূল আজ ঝুঁকির মধ্যে। তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।