ঢাবিতে হামলাকারীরা চিহ্নিত

অনলাইন ডেস্ক :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গত দুই দিন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দফায় দফায় ছাত্রদলের ওপর হামলা চালায়। ছাত্রলীগ শুরু থেকেই এই হামলার ঘটনাকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ বলে দাবি করে আসছে।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল শাখার নেতাকর্মীদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতারা ছিলেন হামলার অগ্রভাগে। তাদের সহযোগী হিসেবে ছিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও ঢাকা কলেজের অনেক নেতাকর্মী। ঢাকা কলেজের মোটরসাইকেল বহরের পাশাপাশি অনেককে দেশীয় অস্ত্রসহ অবস্থান নিতে দেখা গেছে। গত মঙ্গল ও বৃহস্পতিবারের হামলার আগে বিভিন্ন পয়েন্ট ভাগ করে সশস্ত্র অবস্থান নিয়েছিল তারা।

যদিও একে ছাত্রলীগ নিজেদের নেতাকর্মীদের অবস্থান বলতে নারাজ। তারা বলছে, একজন শিক্ষার্থী আগে ছাত্র, পরে ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবারের হামলার সময় ছাত্রদলের অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হন বলে জানায় ছাত্রদল। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। তারা হলেন- ছাত্রদলের একাত্তর হলের সহসভাপতি তানভীর আজাদী, ঢাকা কলেজের সাবেক সহপাঠাগার সম্পাদক ইজাবুল্লাহ মল্লিক ও ঢাকা মহানগর উত্তরের শাহাবুদ্দীন শিহাব।

এদের বাঁশ, লাঠি, রড ও লোহার পাইপ দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। এই হামলার ছবি তুলতে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হন কয়েক সাংবাদিকও। এক সাংবাদিকের মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এসব ঘটনার ভিডিও এবং স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

সিসিটিভি ফুটেজ, ভিডিও ও স্থিরচিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, হাইকোর্টের মাজার গেটের ভেতরে দুই ছাত্রদল কর্মীকে রড, স্ট্যাম্প ও লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সহপাঠাগার সম্পাদক ইজাবুল্লাহ মল্লিককে মারধরে কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেছে। সেখানে সবুজ সেলোয়ার-কামিজ ও নীল হেলমেট পরে হামলায় অংশ নেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি তিলোত্তমা সিকাদার।

হামলায় অংশ নেন হাল্কা নীল রঙের ফুলহাতা শার্ট পরা ছাত্রলীগ কর্মী মাহমুদ চৌধুরী শান্ত। হাতে থাকা লোহার পাইপ দিয়ে সে ছাত্রদল নেতাকে পেটায়। লাল হেলমেট ও চশমা পরা সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগ কর্মী মো. নাজিম উদ্দীন সাইমুন ও চশমা পরিহিত চুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পাঠাগারবিষয়ক সম্পাদক সায়েদ ইমাম বাকের আশপাশে লুকিয়ে থাকা ছাত্রদল কর্মীদের খুঁজতে থাকেন।

হামলার এক পর্যায়ে ইজাবুল্লাহ অচেতন হয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাকিব হোসেনসহ কয়েকজন রিকশায় করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। হেলমেট পরিহিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরিফ আহমেদ মুনিমকেও সেখানে লোহার পাইপ হাতে দেখা গেছে।

হামলার সময় আরও ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়বিষয়ক সম্পাদক আলামিন রহমান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক রাশেদ ফেরদৌস আকাশ। হামলায় আরও অংশ নেন সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন, শামসুন্নাহার হলের সভাপতি খাদিজা আক্তার ঊর্মি, ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী ও কেন্দ্রীয় উপসম্পাদক সামাদ আজাদ জুলফিকার, সহসম্পাদক শেখ সাইফ, উপসম্পাদক আমানুল্লাহ আমান সাগর, পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক শামিম পারভেজ, গণশিক্ষা সম্পাদক আব্দুল্লাহ হিল বারি।

আরও ছিলেন উপদপ্তর সম্পাদক নাজির, উপ-আপ্যায়ন সম্পাদক শাহিন তালুকদার, উপসম্পাদক কেএম রাসেল, উপদপ্তর সম্পাদক খান মোহাম্মদ শিমুল, কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, কর্মী অভিজ্ঞান দাস অন্তু, অমর একুশে হলের সভাপতি এনায়েত এইচ মনন এবং সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হাসান সোহাগ, সহসভাপতি রাকিব হোসেন, বিজয় একাত্তর হলের সাবেক উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মুজিবুল বাশার, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগ কর্মী মো. নাজিম উদ্দীন সাইমুন। এদের মধ্যে রাকিব, মুজিবুল বাশারসহ কয়েকজন প্রথমে হামলা করলেও পরে ছাত্রদল কর্মীদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে সাহায্য করেন।

জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় যুগান্তরকে বলেন, ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা রুখে দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তাদের সঙ্গে ছিল। সেখানে যাদের ছাত্রলীগ বলে বলা হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই সাধারণ শিক্ষার্থী। কারও কারও পদ থাকলেও সেটা বড় পরিচয় নয়। তাদেরও আসল পরিচয় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাসীদের রুখে দিয়েছে। আগামী দিনেও তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করবে।

মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকায় ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয় ছাত্রদল। এদিন প্রায় অর্ধশতাধিক ছাত্রদল কর্মী আহত হন। আর এই হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। সেই কর্মসূচিতেও হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এ সময় তাদের হাতে ছিল রড, স্ট্যাম্প, লাঠি, লোহার পাইপ, হকস্টিক, বাঁশ ইত্যাদি। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উচ্চ আদালত চত্বরের ভেতরে প্রবেশ করেও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়।

এদিকে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা-জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রাব্বানী যুগান্তরকে বলেন, প্রথমত বৃহস্পতিবার শ্বিবিদ্যালয়ের আঙিনায় কোনো বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়নি। তবে উত্তেজনা ছিল ঠিকই। আর মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে বিস্তারিত অভিযোগপত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে দেওয়া হয়েছে। আশা করি তারা দ্রুতই ব্যবস্থা নেবেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)