সাতক্ষীরায় জমি বন্দোবস্তের নামে অর্ধ লক্ষ টাকা ঘুষ নিলো ডিসি অফিসের দুই অফিস সহায়ক
Post Views:
৭৫৪
আরাফাত আলী:
সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার নামে মাস্টার রোলে নিয়োগ প্রাপ্ত ডিসি অফিসের দুই অফিস সহায়কের বিরুদ্ধে অর্ধলক্ষ টাকা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
অর্ধলক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণ কারীরা হলেন,ডিসি অফিসের রেভিনিউ শাখার অফিস সহায়ক তরিকুল ইসলাম ও সাধারণ শাখার অফিস সহকারী আবু সাঈদ রেজা।
কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নের ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত তিনি জেলার বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান ফেরার হাট করেন। শ্যামনগর উপজেলার নওয়াবেকী বাজারে একটি দোকানের জায়গা বন্দবস্ত নেওয়ার জন্য আটুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আবেদন করেন। সরকারি
ইজারা নিতে তার আত্নীয় ডিসি অফিসের রেভেনিউ শাখার অফিস সহায়ক তরিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করেন তিনি। এসময় তরিকুল জমি বন্দোবস্ত করে দেওয়ার জন্য তার কাছে এক লক্ষ টাকা দাবি করেন। পরবর্তীতে ৫০ হাজার টাকা দিলে তিনি দোকানের জন্য ওই জায়গা বন্দবস্ত করে দিতে পারবেন বলে জানান। শরিফুল ইসলাম ও তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। টাকা লেনদেনের সময় শরিফুল ইসলাম ডিসি অফিসের সাধারণ শাখার অফিস সহকারী আবু সাঈদ রেজাকে সাথে নিয়ে যান। এসময় সাঈদের হাতে টাকা দেন শরিফুল ইসলাম। সাথে সাথে সাঈদ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন তরিকুলের হাতে। দীর্ঘ ৭ মাস অতিবাহিত হলেও আজও দোকান জন্য সরকারি জায়গা বন্দবস্ত করে দিতে পারেননি তরিকুল ইসলাম। পরবর্তীতে শরিফুল ইসলাম টাকা ফেরত চাইলে তরিকুল টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন।
তরিকুল ইসলাম ও সাঈদ রেজার ঘুষের টাকার লেনদেনের ১১ মিনিটের একটি ভিডিও কথোপকথন এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।
সেখানে দেখা যাচ্ছে সাঈদ ঘুষের টাকা গুনে তরিকুলের হাতে দিচ্ছে। সাঈদকে এসময় বলতে শোনা যায় এই ৫০ হাজার টাকার মধ্যে আপনাকে সব কিছুর বন্দবস্ত করে দিতে হবে আর কোন টাকা আপনাকে শরিফুল ইসলাম কাকা দিতে পারবেনা। এসময় তরিকুলকে বলতে শোনা যায় আগামী সপ্তাহে আমার কাছ থেকে আপনি একটা কাগজ নিয়ে রাখবেন আপনাকে কেউ যেন ডিস্টার্ব না করতে পারে। এছাড়া সাঈদ বলেন আপনি বার বার ফোন দিয়ে আমাদের ডিস্টার্ব করতে পারবেননা। কাজ না হলে আমি আপনার সব টাকা ফেরত দিবো। আপনার তো মাত্র ৫০ হাজার টাকা আমি তার (তরিকুলের) কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়েছি সরকারি জমি বন্দোবস্ত করার জন্য। এছাড়া আরো অনেক কথাপোকথন রয়েছে ওই ভিডিওর ভিতরে।
বন্দবস্ত দেওয়ার নামে অর্ধলক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়ার বিষয় স্বীকার করে ডিসি অফিসের রেভেনিউ শাখার অফিস সহায়ক তরিকুল ইসলাম বলেন,যার কাছ থেকে টাকা নিয়েছি সে বুঝবে। আপনি কেন ফোন দিয়েছেন। যার সাথে আমার টাকা লেনদেন হয়েছে তাকে কথা বলতে বলেন। আর কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ডিসির কার্যলয়ের এডিসি অফিসার সাধারণ শাখার অফিস সহায়ক আবু সাঈদ রেজা সরকারি জমি বন্দোবস্তের নামে অর্ধলক্ষ টাকা লেনদেনের বিষয় স্বীকার করে বলেন, শরিফুল আমার ভাইরার বাবা। সে জমি বন্দোবস্ত নিবে এবিষয়ে আমাকে কিছু জানায়নি। তরিকুল ইসলামকে টাকা দেওয়ার সময় আমাকে সাথে নিয়ে যায় আমার হাত দিয়ে টাকা লেনদেন হয়েছে। তবে আমার আত্নীয় শরিফুল ইসলাম চাচার বন্দবস্ত দেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমানে বন্দবস্ত বন্ধ আছে এজন্য সম্ভব হচ্ছনা। এছাড়া তরিকুল মামা ভালো মানুষ তার সাথে আমি ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লেনদেন করছি। কাজ না হলে তাদের টাকা ফেরত দিয়ে দিবে।
ঘুষের লেনদেনের বিষয় সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, আমি বিষয়টি জানতাম না আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। বিষয়টি অবশ্যই আমি তদন্ত করে দেখব। সরকারি জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার নামে ঘুষ গ্রহণ যদি প্রমানিত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।