ভূমিহীন না হয়েও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেলেন ভূমি অফিসের অচিন্ত

শ্যামনগর প্রতিনিধি :
শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে মুজিব শতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বর্তমান সরকার বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের বিপুলসংখ্যক ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসিত করছে। পুনর্বাসনের আওতায় আসা মানুষ যাতে উন্নত জীবনযাপন করতে পারে, সেজন্যও যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণ করে চলেছে।
পুনর্বাসিত পরিবারের মানুষ যদি তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে, তাহলে তা দেশের সার্বিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকারের এমন যুগান্তকারী পদক্ষেপকে ভূলুণ্ঠিত করছে কিছু অসাধু অর্থলোভী মানুষ। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন সমুদ্র ও সুন্দরবন উপকূলবর্তী হওয়ায় এলাকার মানুষ অনেকটা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর থেকে বঞ্চিত এসমস্ত অসহায় পরিবার। যারা এই সুবিধা ভোগ করছে তাদের জমি জায়গা, ঘরবাড়িসহ সবকিছুই আছে। সমাজের অনেক মানুষের প্রশ্ন আসল ভূমিহীনরা কেন সরকারি পূনর্বাসনের এই সুবিধা পাচ্ছে না ?
মুজিব শতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘরের তালিকার নাম উঠাত সক্ষম হয়েছে অচিন্ত্য। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের মাদিয়া গ্রামের তেজেন্দ্রনাথের ছেলে অচিন্ত্য মন্ডল (৩৮)। ২৫ শতাংশ ভিটার উপরে দুই রুমের একটা ঘর নিয়ে তার বসবাস। আছে রান্নাঘর ও ঠাকুরঘর। শুধু তাই নয় এস এ খতিয়ান ২৭৮,দাগ নং ৮৮৭,৮৮৮,৮৮৯ ও ৮৯০ দাগে ৭৯ শতাংশ জমি আছে অচিন্তের বাবা তেজেন্দ্রনাথের।
অচিন্ত্য তারই একমাত্র ছেলে হওয়া সত্ত্বেও ভূমিহীনদের দেওয়া ঘরের ইট বালু পৌঁছে গেছে তার বাড়িতে। কিভাবে পেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে অচিন্ত্য বলেন, আমার বিপক্ষে যে তথ্য প্রমাণ দিয়েছে সেটা সঠিক নয়। জমির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে অচিন্ত্য বলেন জমি নদীভঙ্গনে চলে গিয়েছে কতটুকু আছে আমি জানিনা। অথচ এই অচিন্ত্য বুড়িগোয়ালিনী ভূমি অফিসের গত ছয় থেকে সাত বছর জমি জায়গা সংক্রান্ত কাজ করে আসছে।
বুড়িগোয়ালিনী ভূমি কর্মকর্তা কামাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি স্যারের রুমে যাচ্ছি, আপনি আমার সাথে সাড়ে ১১টায় অফিসে দেখা করেন। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পর্যায়ক্রমে সারা বাংলাদেশ দুই ধরনের মানুষ কে এই ঘর দেবে সরকার। যারা ভূমিহীন, গৃহহীন ও যাদের ১ থেকে ১০ শতাংশ জমি আছে এই দুই ধরনের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষকে এই ঘর উপহার দেয়ার কথা বলেছে সরকার।
তবে দুঃখজনক হলো, সরকারের এমন গুরুত্বপূর্ণ ও মানবিক প্রকল্পের কর্মকাণ্ডেও এর আগে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি অর্থে নির্মিত ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষের জন্য নির্মিত ঘরের মান নিয়ে ইতঃপূর্বে প্রশ্ন উঠেছে। এসব ঘরের মান যাতে ঠিক থাকে, সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সরকারের এসব প্রকল্প দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে আশার সঞ্চার ঘটিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী দিনে দেশে বৃষ্টি-বন্যা-ঝড়-এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতা আরও বাড়বে। কাজেই ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষের জন্য নির্মিত ঘরগুলো যাতে টেকসই হয়, সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
সমাজের প্রান্তিক মানুষের জন্য যেসব নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর পরিধি বাড়ানো দরকার। এক্ষেত্রে যাতে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি না হয়, তা নিশ্চিত করা দরকার। বস্তুত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকার যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, সেগুলোর লক্ষ্য অতিদরিদ্র মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা সমুন্নত রাখা।
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নামে বরাদ্দ অর্থে যাতে অন্য কেউ ভাগ বসাতে না পারে, তা নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। করোনার কারণে দরিদ্র মানুষ নানা জটিলতার সম্মুখীন হয়েছে। এ অবস্থায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে প্রকৃত ভূমিহীন, গৃহহীন ও অসচ্ছল মানুষ যাতে উপকৃত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)