চীনের সেই বিমান দুর্ঘটনা ছিল ইচ্ছাকৃত, ব্ল্যাক বক্সে ভয়ঙ্কর তথ্য
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
বছরের শুরুতেই বড়সড় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে চীনের একটি যাত্রীবাহী বিমান। আর এই ঘটনায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়। ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে সম্প্রতি এই ঘটনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, দুর্ঘটনার মধ্যে পড়ে যাওয়া বিমানটিকে ইচ্ছাকৃতভাবেই মাটিতে আছড়ে ফেলে বিধ্বস্ত করানো হয়েছিল। ভয়ঙ্কর সেই বিমান দুর্ঘটনায় আরোহী ১৩২ জনই নিহত হয়েছিলেন। দুর্ঘটনার প্রায় দুই মাস পর এমনই চাঞ্চল্য়কর তথ্য উঠে এসেছে তদন্তকারীদের হাতে। যদিও এখনো বেজিংয়ের তরফে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
মূলত বিধ্বস্ত সেই বিমানের ব্লাক বক্সের তথ্য বিশ্লেষণ করে ইচ্ছাকৃতভাবে মাটিতে বিমান আছড়ে ফেলার তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে জানেন এমন দুইজনের বরাত দিয়ে বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
চলতি বছরের ২১ মার্চ মাঝ আকাশ থেকে হঠাৎ নিচে আছড়ে পড়েছিল চীনের একটি যাত্রীবাহী বিমান। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় রক্ষা পাননি কোনো আরোহীই, মৃত্যু হয় ১৩২ জনের। গভীর জঙ্গলে প্রায় সপ্তাহ খানেক খোঁজ চালানোর পর উদ্ধার করা হয় বিমানের ব্ল্যাক বক্স। আর এই ব্ল্যাক বক্সই প্রাথমিকভাবে খতিয়ে দেখার পর চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই জানানো হয়, মার্চ মাসে দুর্ঘটনাকবলিত ওই বিমানটিকে ইচ্ছাকৃতভাবে মাটির দিকে নাক বরাবর নামিয়ে আনা হয়েছিল, যে কারণে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
এছাড়া চলতি সপ্তাহে মার্কিন সংবাদমাধ্য্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ব্ল্যাক বক্স থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী- কোনো দুর্ঘটনা বা নিয়ন্ত্রণহীনতা নয়, ককপিট থেকে ইচ্ছাকৃতভাবেই বিমানটিকে প্রবল গতিতে মাটির দিকে নামিয়ে আনা হয়েছিল।
দুর্ঘটনার কবলে পড়া ওই বিমানটি ছিল মার্কিন বিমান প্রস্তুতকারক সংস্থা বোয়িংয়ের তৈরি। তাই দুর্ঘটনার তদন্তে নেমে ব্ল্যাক বক্স খতিয়ে দেখে তারা। আর এরপর মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে, ‘ইচ্ছে করে’ মাটির দিকে ধেয়ে গিয়েছিল বিমানটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তদন্তকারীর বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের দাবি, ককপিট থেকেই কারোর নির্দেশে বিমানটি পরিচালনা করা হচ্ছিল।
এর আগে চীনের পক্ষ থেকে এই দুর্ঘটনার একটি প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছিল। সেখানে দাবি করা হয়েছিল, বিধ্বস্ত ওই বিমানে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল না। আর এরপরই নাশকতার তত্ত্ব আরও জোরালো হয়। মনে করা হচ্ছে, বিমানে থাকা কেউ একজন জোর করে ককপিটে প্রবেশ করে এই দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ২১ মার্চ চীনের কুনমিং থেকে গুয়াংঝুতে যাচ্ছিল বোয়িং ৭৩৭ মডেলের সেই বিমানটি। গুয়াঙশি এলাকায় এলাকায় সেটি ‘দুর্ঘটনার’ কবলে পড়ে। দুর্ঘটনার পরপরই পাহাড়ের মাথায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
দ্রুত ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দেয় উদ্ধারকারী দল। তবে শেষ পর্যন্ত কাউকেই বাঁচানো যায়নি। এরপরই দুর্ঘটনার কারণ দ্রুত বের করতে নির্দেশ দেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
বিমানের যাত্রাপথের ওপর নজর রাখা ফ্লাইটরাডার২৪-র তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার দিন স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ১১ মিনিটে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুনমিং থেকে বিমানটি উড্ডয়ন করে। সেটির গুয়াংঝুতে অবতরণের কথা ছিল দুপুর ৩টা ৫ মিনিটে।
উড্ডয়নের ১ ঘণ্টা ৯ মিনিট পর দেখা যায়, ছয় বছরের পুরোনো বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানটি ভূপূষ্ঠের ২৯ হাজার ১০০ ফুট ওপরে আছে। তবে এরপরই মাত্র দুই মিনিট ১৫ সেকেন্ড পরে তা ৯ হাজার ৭৫ ফুটে নিচে নেমে যায়। এর মাত্র ২০ সেকেন্ড পরেই সেই উচ্চতা নামে মাত্র ৩ হাজার ২২৫ ফুটে। এরপরই একপর্যায়ে ট্র্যাকার থেকে হারিয়ে যায় বিমানটি।