শ্যামনগরে অবৈধ ভাবে গর্ভপাতে মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলাঃপ্রধান অভিযুক্তরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

শ্যামনগর প্রতিনিধিঃ
শ্যামনগরে প্রাইভেট হাসপাতাল “পল্লী ক্লিনিকে” অবৈধ ভাবে গর্ভপাত করায় অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের কারনে সামিরুন খাতুন (২৭) নামে এক প্রসূতি মা ও ৫ মাসের শিশু সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলা করেছে মৃত্যু সামিরুনের স্বামি জাহাঙ্গীর শিকারী। শ্যামনগর উপজেলার হায়বাতপুর গ্রামের শেখ মেহের আলীর ছেলে শেখ আহসান হাবিব (৩২), সদর উপজেলার মাজাট গ্রামের আনছার গাজীর ছেলে হারুন গাজী (৪২), আবুল হোসেনের ছেলে আল মামুন লিটন (৪২), নকিপুর গ্রামের পল্লী ক্লিনিকের নাস্ রিংকু রাণী (২৭), বাধঘাটা গ্রামের আব্দুল আজিজের পুত্র আমজাদ হোসেন মিঠু (৪২), ঈশ^ারীপুর ইউনিয়নের বংশীপুর গ্রামের দুখের পুত্র নরুজ্জামান (৩০) , মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের পাশের্^খালী গ্রামের মমিন আলী সরদারের ছেলে কামরুল সরদার (২৫), বাবর আলী সরদারের পুত্র মমিন আলী সরদার (৫৫), মরাগাং গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে বাপ্পি (২৮), রমজাননগর ইউনিয়নের টেংরাখালী গ্রামের জহুর আলী গাজীর ছেলে আবুল কালাম (৪০) সহ ৩/৪ জনকে অজ্ঞাতনামা করে জাহাঙ্গীর মামলা করেন।
এলাকাসূত্রে জানাগেছে যে, গত একযুগ আগে নড়াইল জেলার নওয়া পাড়া এলাকায় সামিরুনের বিয়ে হয়। সেখানে একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। সামিরুনের সংসার থাকাকালীন রমপালের জাহাঙ্গীর শিকারীর সাথে পরিচয় হয় এবং সামিরুনের মা হালিমা অর্থের লোভে সামিরুনকে বিচ্ছেদ করিয়ে জাহাঙ্গীরে সাথে বিয়ে দেয়। সেই থেকে জাহাঙ্গীর সামিরুন বেশ সুখে শান্তিতে সংসার করে আসছিল। জাহাঙ্গীরের সংসারে ৯ বছর বয়সের ১টি ছেলে ও ২ বছর বয়সের ১টি মেয়ে ছিলো কিন্তু গত ২ বছর আগে মেয়েটি পানিতে ডুবে মারা যায়। মেয়ের মৃত্যুর পর জাহাঙ্গীর  সামিরুন ঢাকায় চলে যায় ১ বছর থেকে গত রমজান মাসে জাহাঙ্গীর ও সামিরুন বাড়ীতে আসে। জাহাঙ্গীর বনদস্যু থাকাকালীন তার শশুরবাড়ীর যাবতীয় আসবাবপত্র সহ সংসার চালিয়ে আসছিল। বাংলাদেশ সরকারের কাছে জাহাঙ্গীর আতœসমার্পন করার পর জাহাঙ্গীরের টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয় তার শাশুড়ী হালিমা। এই নিয়ে জাহাঙ্গীর সামিরুনের মধ্যে প্রায় সময় ঝগড়া হত। এই নিয়ে ঝগড়া বেড়ে গিয়ে সামিরুন গত ২ মাস আগে জাহাঙ্গীরকে তালাক দেয়। সামিরুন গর্ভবতী হওয়ায় সামিরুনের মা হালিমা তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করার কথা বলে এবং সামিরুনকে নতুন করে বিয়ের প্রলোভনে গত ১২ মে ২০২২ তারিখ দুপুর ২ টার সময় দুপুরের খাওয়ার পর সামিরুন ও তার মা হালিমা বেগম পল্লী ক্লিনিকে নিয়ে যায়। পল্লী ক্লিনিকের নাস্ রিংকু রাণী ও বকুল রানী সামিরুনকে গর্ভপাত ঘটানোর চেষ্টা করে। সামিরুনের পর্যপ্ত রক্তক্ষরনের সামিরুনের মা হালিমা ও ভাই কামরুল ইসলাম সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে সামিরুনের মৃত্যু হয়। পরে সামিরুনের মা হালিমা ও কামরুল ইসলাম সামিরুনের লাশ বাড়ীতে নিয়ে তড়িঘড়ি করে দাফন করতে গেলে শ্যামনগরের থানা পুলিশ সামিরুনের লাশ উদ্ধার করে সাতক্ষীরা ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করেন। জাহাঙ্গীর ১৫ মে ২০২২ তারিখ শ্যামনগর থানায় মামলা করে। যার মামলা নং-২৮। তবে প্রধান অভিযুক্ত পল্লী ক্লিনিকের পরিচালক স্বপন মজুমদার ও সামিরুনের মা ধরাছোয়ার বাইরে হলেও রাজনৈতিক কোন্দলে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে কয়জন নিরীহ ব্যক্তিদের। যা তথ্যনুসন্ধানে পাওয়া যায়নি। এই মামলায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যাদের জড়ানো হয়েছে ১০ নং আসামী বাধঘাটা গ্রামের আব্দুল আজিজের পুত্র সাংবাদিক আমজাদ হোসেন মিঠু জানান, মাদকের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত করার কারনে আমার নামে এই মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি সামিরুন এবং পল্লী কিøনিকের কোন বিষয় জানি না। হঠাৎ জানতে পারলাম এই গায়েবী মামলায় আমাকে ১০ নং আসামী করা হয়েছে। মামলার ৯নং আসামী রমজাননগর ইউনিয়নের টেংরাখালী গ্রামের জহুর আলী গাজীর ছেলে আবুল কালাম বলেন, আমি সুন্দরবনের একজন জেলে। পাশপার্মিট নিয়ে সুন্দরবনে মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। স্থানীয় ইউপি নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব নেওয়ার ফলে আমার নামে এই গায়েবী মামলা হয়েছে। ৮নং আসামী মরাগাং গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে বাপ্পি বলেন, আমি সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমি সুন্দরবন থেকে ফিরে শুনলাম আমার নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে এখনো পাশপার্মিটের মেয়াদ শেষ হয়নি। বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এদিকে মামলা ১নং আসামী শ্যামনগর উপজেলার হায়বাতপুর গ্রামের শেখ মেহের আলীর ছেলে শেখ আহসান হাবিব বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মূলক আমার নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। এই ঘটনার সাথে আমার কোন প্রকার সম্পর্ক নেই। ক্লিনিকের পরিচালনা পর্ষদ সহ কোথাও আমার সম্পৃক্ততা নেই। পল্লী প্রাইভেট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ স্বপন মজুমদার। আমার নামে কেন মামলা হলো আমি নিজেও জানি না।
বিষয়টি নিয়ে মামলার বাদী জাহাঙ্গীর গত ১৪ মে ২০২২ তারিখ বিকাল ৫টার সময়ে ভিডিও বক্তব্যে বলেন, শাশুড়ী হালিমা, শালক কামরুল ইসলাম, শশুর মোমিন আলী, শালিকা শিরিনা, নরুজ্জামান এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি আরও বলেন, মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনোয়ারুলের কাছে আমি ৫৭ হাজার টাকা পাই। আনোরুল মেম্বার পরিকল্পনা করে আমাকে শশুরবাড়ী থেকে তাড়িয়ে টাকা না দেওয়ার উদ্ধেশ্যে আমার স্ত্রীর সাথে নরুজ্জামানের বিয়ে ঠিক করে। এই আমার শাশুড়ী গর্ভপাত ঘটানোর ঘটনা ঘটিয়েছে। মামলার পর বাদী জাহাঙ্গীরের কাছে কয়েকজনের নামে মিথ্যা মামলার বিষয় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে তার ফোনটি বন্ধ ছিলো।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)