স্কুলছাত্রকে গোবর-প্রসাব মিশ্রিত পানি খাইয়ে নির্যাতন

নিউজ ডেস্ক:

নীলফামারীর সদরে দরবেশ পাড়ার বাগান বাড়ি পার্কে বিনা টিকিটে প্রবেশের অপরাধে সিয়াম নামের দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রকে জোরপূর্বক গোবর ও প্রসাব মিশ্রিত পানি খাইয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে পার্কটির মালিক মাহমুদ আরেফিন চৌধুরী নবাবের বিরুদ্ধে।

গত রোববার (৮ মে) বিকেলে পার্কের ভেতরে একটি গরুর ঘরে এ পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রের মা বাদী হয়ে সোমবার দিবাগত রাতে নীলফামারী সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত মাহমুদ আরেফিন চৌধুরী নবাব নীলফামারীর সদরের মুক্তা ফিলিং স্টেশনের মালিক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী।

নির্যাতিত ফারহান শাহরিয়ার সিয়াম জেলা শহরের এ আর ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। সে কালিবাড়ি মোড় এলাকার বাসিন্দা আঁখি আক্তার স্মৃতি বেগম ও শহরের ইলেকট্রনিকস ব্যবসায়ী মৃত ফরহাদ হোসেনের ছেলে।

অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, রোববার বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে কিছুদিন আগে উদ্বোধন হওয়া শহরের দরবেশ পাড়া এলাকার পার্ক বাগান বাড়িতে যায়। তবে টাকা না থাকায় ৬ বন্ধু ২০ টাকা করে টিকিট কেটে প্রবেশ করলেও পেছন দিক দিয়ে প্রাচীর পার হয়ে লুকিয়ে প্রবেশ করে সিয়াম। বিষয়টি জানাজানি হলে অভিযুক্ত মাহমুদ আরেফিন চৌধুরী নবাব সিয়ামকে ডেকে প্রথমে মারধর করে। পরে পার্কের ভেতরে একটি গরু রাখার ঘরে নিয়ে গিয়ে মারধর করার পর গোবর ও প্রসাব মিশ্রিত পানি জোর করে খাওয়ায়। পরে বিষয়টি বাইরে কারো কাছে বললে ইলেকট্রিক শক দিয়ে মারার হুমকি দেয়।

ভয়ে নির্যাতনের বিষয়টি কাউকে না বলে পরের দিন সিয়াম স্কুলে গেলে বন্ধুরা গোবর প্রসাব খাওয়ার বিষয়ে হাসাহাসি করলে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে সে। পরে অজ্ঞান হয়ে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয় এবং নীলফামারী সদর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নির্যাতিত স্কুলছাত্র সিয়াম বলে, আমার বন্ধুরা গেলেও আমার কাছে টাকা না থাকায় আমি পেছন দিয়ে ভেতরে যাই। বের হওয়ার আগে সবাই বের হলে আমাকে বের হতে দেয়নি। প্রথমে আমাকে থাপ্পড় দেয়। আমি পা ধরে বলি চাচা আমাকে ছেড়ে দেন আমার বাবা নাই। আমি বাড়ি যাব। কিন্তু উনি আমাকে টেনে গরুর ঘরে নিয়ে যায়। গোবর ও প্রসাব মিশিয়ে খাওয়ায়। বুকে পিঠে খুব মেরেছে। আমি বারবার পা ধরে মাফ চাই কিন্তু শুনেননি উনি এবং ঘটনার কথা কাউকে বললে শক দিয়ে মারার হুমকি দেয়।

কান্নায় ভেঙে পরে আহাজারি করে সিয়ামের মা আঁখি আক্তার স্মৃতি জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর খুব কষ্টে দুই সন্তান নিয়ে আছেন উনি। এমন নির্মম নির্যাতন কোনো সুস্থ মানুষ কিভাবে করে। আজ যদি আমার সন্তান মারা যেত আমি কাকে নিয়ে বাঁচতাম।

তিনি আরো বলেন, অভিযুক্ত নবাব লোক দিয়ে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। উনি খুব প্রভাবশালী টাকাওয়ালা লোক বলে সাংবাদিক পুলিশ সবাইকে কিনে নেবে বলেও হুমকি দিচ্ছেন। আমি তো অসহায়। আমার স্বামী নেই। আমি কি করব জানিনা। তবে আমি আমার সন্তানের নির্যাতনের বিচার চাই।

নীলফামারী সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আব্দুর রহিম জানান, বর্তমানে শিশুটি সুস্থ আছেন। তবে যেহেতু মারধর করা হয়েছে এবং ঘুমের ওষুধ খেয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে কয়েকদিন সময় লাগবে।

এ বিষয়ে নীলফামারী সদর থানার ওসি আব্দুর রউপ জানায়, এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)