আশাশুনি হিন্দু পরিবারের ৫জনকে কুপিয়ে জখম, মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি,প্রধান আসামী গ্রেপ্তার
রঘুনাথ খাঁঃ
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার দরগাহপুর
ইউনিয়নের খড়িয়াটি গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে
একই পরিবারের পাঁচজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করার ঘটনায়
প্রধান আসামী মনিরুলকে পুলিশ সোমবার গ্রেপ্তার করে আদালতের
মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। অপরদিকে রবিবার বিকেলে
গোয়াল থেকে ছাড়িয়ে যাওয়া একটি গরু ধরে আনতে গেলে
আসামীরা ভিকটিম তারকী রানী সরকারের উপর হামলার চেষ্টা করে। এ
ঘটনায় চিত্তরঞ্জন সরকার বাদি হয়ে সোমবার থানায় সাধারণ
ডায়েরী করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃত আসামীর নাম মনিরুল ইসলাম ওরফে মঈনুর গাজী।
তিনি আশাশুনি উপজেলার খরিয়াটি গ্রামের মোঃ আনার গাজীর
ছেলে।
খড়িয়াটি গ্রামের চিত্তরঞ্জন সরকার জানান, খড়িয়াটি গ্রামের
আসাফুর, সাইফুল ও আব্দুল মজিদ তাদের বাবা গহর আলীর কাছ
থেকে দানপত্রম মূলে পাওয়া ৩৩ শতক জমি তারসহ শরীকদের কাছে
১৯৯৯ সালে বিক্রি করেন। দলিলে সনাক্তকারি হিসেবে সাক্ষর করেন
গহর আলী গাজী। এরপরও গহল আলী গাজী তাদের কাছে পাঁচ হাজার
টাকা চান। টাকা দিতে রাজী না হওয়ায় তথ্য গোপন করে ওই ৩৩
শতক জমি ফিরে পেতে আদালতে মামলা করেন গহর গাজী। আদালতের
নোটিশ গোপন করে একতরফা শুনানী করে ২০০৩ সালে ডিক্রী পান
গহর গাজী। পরবর্তীতে ওই ডিক্রী মূলে ৩৩ শতক জমি নিজের মেয়ে
তালার কানাইদিয়ার রাশিদার কাছে বিক্রি করেন। ২০১০ সালে রাশিদা
ওই জমি খড়িয়াটির বারিক গাজী, মঈনুর গাজীসহ আটজনের
কাছে বিক্রি করেন। খবর পেয়ে তারা আশাশুনি সহকারি জজ
আদালতে দেওয়ানী মামলা করে গহর গাজীর আদালতের ডিক্রীর আদেশ
স্থগিত করেন। এ খবর পাওয়ার পর বারিক গাজী, মঈনুর গাজী ও তাদের
স্বজনরা জমি দখলে মরিয়া হয়ে ওঠে। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিরাজ আলীকে অবহিত করা হয়। গত ২৩ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মঈনুর গাজী ও তাদের লোকজন
জোরপূর্বক ওই জমি ঘেরা ও বেড়া দিয়ে জবরদখল করেত যান। বাধা
দেওয়ায় তার তাকেসহ দাদা অভিমন্যু সরকার, বউদি তারকী রানী
সরকার, বৌমা মিনতি রানী সরকার ও ভাইপো নয়ন সরকারকে লোহার
রড ও দা দিয়ে টিপিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়
তাদের বাড়ির উঠানের বিচালী ও ধানের গাদা। স্থানীয়রা তাদেরকে
উদ্ধার করে আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে-ক্সে ভর্তি করান। অবস্থার
অবনতি হওয়ায় তাকে ও বউদি তারকী রানী সরকারকে সাতক্ষীরা সদর
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ভাইপো সুনীল সরকার বাদি
হয়ে ২৩ এপ্রিল রাতেই মঈনুরসহ ১২ জনের নাম উলে-খ করে
অজ্ঞাতনামা আরো ১২ জনের নামে থানায় মামলা করেন। ২৮ এপ্রিল
সাতজন আসামী ও পরদিন হাফিজুল ইসলামু আদালতে হাজির হয়ে
জামিন নেন। রবিবার বিকেলে গোয়াল থেকে ছাড়িয়ে যাওয়া গরু
ধরতে গেলে সকল আসামীরা বৌদি তারকী সরকারকে দৌড়ে ধরার
চেষ্টা করে। সে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ায় মামলা তুলে না
নিলে আসামীরা তাকে হত্যার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় তিনি
সোমবার থানায় সাধারণ ডএয়রী করেছেন।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আশাশুনি থানার
উপপরিদর্শক গোলাম মোস্তফা জানান , মোবাইল ফোন ট্যাকিং
করে মনিরুল ইসলাম গাজী ওরফে মঈনুরকে সাতক্ষীরার এক আত্মীয়ের
বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সোমবার ভোরে। সোমবার
বিকেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।