সাতক্ষীরার বল্লী মোঃ মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত
রঘুনাথ খাঁ
সাতক্ষীরা সদরের বল্লী মোঃ মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবগঠিত ম্যানেজিং কমিটির কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। একই আদেশে এ কমিটি কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। বল্লী মোঃ মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদর উপজেলার মুকুন্দপুর গ্রামের এরশাদুল হকের দায়েরকৃত রিট পিটিশন শুনানী শেষে গত বৃহষ্পতিবার মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি মোঃ জাফর আহম্মেদ ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বে এ আদেশ দেন।
এদিকে হাইকোর্টের এ আদেশ আগামি ৫ মে সকাল ১০টার আগে সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের হাতে পৌঁছালে বল্লী মোঃ মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে আগামি বৃহষ্পতিবার নবারুন মাধ্যমিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যাবে।
বল্লী মোঃ মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক খায়রুল ইসলাম ও আলমগীর হোসেন জানান, বল্লী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আহবায়ক হিসেবে ছয় মাস দায়িত্ব পালন করেন। গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর চার সদস্য বিশিষ্ট্ ছয় মাসের আহবায়ক কমিটির আহবায়ক হিসেবে দায়্ত্বি পান মুনজিতপুরের আব্দুস সেলিমের ছেলে মোঃ জিয়াউর বিন সেলিম ওরফে যাদু। এরপর নতুন আহবায়কের সভাপতিত্বে ২৭ সেপ্টেম্বর প্রথম সভা, ১৮ অক্টোবর দ্বিতীয় ও ৮ নভেম্বর তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে ওই বিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপন অনুষ্টানে ওই কমিটির পক্ষ থেকে সাতক্ষীরা -২ আসনের সাংসদ মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষক, সহকারি প্রধান শিক্ষকসহ সাতটি পদে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা নিয়োগ বাণিজ্যকে সামনে রেখে চলতি বছরের ২৫ মার্চ পর্যন্ত আহবায়ক কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠণের উদ্যোগ শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবাদ ও অভিযোগ করেও কোন লাভ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠণে অনিয়মের অভিযোগে তারা দু’জন বাদি হয়ে গত ২৬ জানুয়ারি সাতক্ষীরা সদর সহকারি জজ আদালতে (দেঃ ৪২/২২) মামলা দায়ের করেন। মামলায় জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশনারসহ আটজনকে বিবাদী করা হয়। ৩১ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম কাদের অবসরে যান। পরবর্তীতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকাকালিন পকেট কমিটি গঠণ করা হয়।
সদর উপজেলার মুকুন্দপুর গ্রামের এরশাদুল হক জানান, আদালতে মামলা চলমান থাকার পরও জিয়াউর বিন সেলিম ওরফে যাদুকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে গত ১৬ মার্চ অনুমোদন দেন যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. শাহীন বিশ্বাস। এ কমিটির পক্ষ থেকে গত ১০ এপ্রিল প্রধান শিক্ষক ও ১২ এপ্রিল সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে স্থানীয় পত্রিকা পত্রদূত এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সহকারি শিক্ষক জামিল উজ জামানকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে মর্মে স্থানীয়ভাবে প্রচার হয়। যদিও জিয়াউর বিন সেলিম ওরফে যাদু কোন প্রকার অনিয়ম ও দূর্ণীতির কথা অস্বীকার করেন।
এরশাদুল হক আরো জানান, এ ম্যানেজিং কমিটির বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে গত ১৬ এপ্রিল তিনি বাদি হয়ে মহামান্য হাইকোর্টে ৫৪০৪/২২ নং রিট পিটিশন দাখিল করেন। মামলায় শিক্ষা সচীব, যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক, সাতক্ষীরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জিয়াউর বিন সেলিম ওরফে যাদুসহ ১০জনকে বিবাদী করা হয়।
এরশাদুল হকের আইনজীবী অ্যাড. হুমায়ুন কবীর বলেন, বৃহষ্পতিবার এরশাদুল হকের রিট পিটিশনের শুনানী শেষে মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি মোঃ জাফর আহম্মেদ ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বে গত ১৬ মার্চ যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. শাহীন বিশ্বাস স্বাক্ষরিত জিয়াউর বিন সেলিম ওরফে যাদুকে বল্লী মোঃ মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনোনীত সম্পর্কিত আদেশের উপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন। একই আদেশে ওই কমিটি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ও বল্লী মোঃ মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জিয়াউর বিন সেলিম ওরফে যাদুর প্রতি রুল নিশি জারি করা হয়। ঈদের ছুটির কারণে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের সত্যায়িত কপি দেরীতে পাওয়ার আশঙ্কায় আগামি ৫ মে তারিখে নবারুন বালিকা বিদ্য্লায়ে অনুষ্ঠিতব্য নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করতে আইনজীবীর প্রত্যয়নপত্র রিটকারির মাধ্যমে বিবাদীগণকে রবিবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
বল্লী মোঃ মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শফিকুর রহমান জানান, তিনি আগামি ৫ মে নবারুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রবেশ পত্র পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বল্লী মোঃ মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জিয়াউর বিন সেলিম ওরফে যাদুর সঙ্গে সোমবার সকাল ১০টায় তার মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বল্লী মোঃ মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অরুপ কুমার সাহা সাংবাদিকদের বলেন, আগামি ৫ মে তার বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নবারুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ম্যানেজিং কমিটির কার্যক্রমের উপর হাইকোর্টের কোন স্থগিতাদেশ আছে কিনা তা তিনি জানেন না।
সাতক্ষীরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় সাংবাদিকদের বলেন, কিছুক্ষণ আগে মোবাইল ফোনে একজন সাংবাদিক পরিচয়ে হাইকোর্ট বল্লী মোঃ মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির কার্যকারিতা তিন মাস স্থগিত করেছে মর্মে তাকে অবহিত করেছেন। তবে অফিসিয়ালি তিনি কোন আদেশ পাননি। অফিসিয়িালি আদেশ পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।