সুদের টাকায় জোড়াতালির বাঁধ

অনলাইন ডেস্ক :

সুনামগঞ্জের ফসল রক্ষা বাঁধ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ হওয়া সরকারি টাকায় শুরু হলেও শেষ হয় সুদ ব্যবসায়ীদের টাকায়। জেলার প্রতিটি পিআইসিতেই (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) দাদন ব্যবসায়ীদের টাকা রয়েছে। বাঁধ নির্মাণে যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় তা মাঠপর্যায়ে তিন-চার ভাগে পরিশোধ করায় বিপাকে পড়তে হয় প্রতিটি পিআইসিকে। বিশেষ করে শেষ কিস্তির টাকা ছাড় করতে অনেক সময় বিলম্ব করা হয়। এজন্য তড়িঘড়ি কাজ তুলতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে টাকার জন্য ধরনা দিতে হয় এলাকার দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে। শেষমেশ চড়া সুদে ঋণ নিয়ে অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে বাঁধের কাজ শেষ করা হয়। এছাড়া নীতিমালায় বলা থাকলেও কখনও প্রকৃত কৃষককে দিয়ে পিআইসি গঠন করা হয় না।

বেশিরভাগ কমিটি হয় রাজনৈতিক তদবিরে। অপরদিকে কাগজে-কলমে বাঁধ নির্মাণের নির্দিষ্ট তারিখ ১৫ ডিসেম্বর থাকলেও বাস্তবে কাজ শুরু করা হয় জানুয়ারিতে। দেরিতে কাজ শুরু করায় বর্ষা চলে আসে। ফলে সময়মতো নির্মাণ না হওয়ায় বাঁধ টেকসই হয় না। এভাবে প্রতিবছর জোড়াতালির বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়ে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘সময়মতো টাকা ছাড় করার বিষয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। যথাসময়ে টাকা না দিলে গরিব কৃষকের ওপরে প্রভাব পড়ে। এতে করে কৃষকই ক্ষতিগ্রস্ত হন। আগামী মৌসুমেই বিষয়টি সংশোধন হবে আশা করছি। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আসলে ১৫ ডিসেম্বর কোনো বাঁধেই কাজ শুরু করা যায় না। আবার একসঙ্গে কোথাও কাজ শুরু করতে পরি না। কারণ ওই সময় পানি থাকে। যখন যে জায়গায় পানি শুকিয়ে যায় সেখানে কাজ শুরু হয়। আসলে ইচ্ছাকৃতভাবে কাজ শুরু করতে কোনো গাফিলতি নেই।’

এ বিষয়ে সরল স্বীকারোক্তি দেন দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান মামুন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী পিআইসিকে অগ্রিম ২৫ ভাগ টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু এবার টাকা দেরিতে আসায় অগ্রিম টাকাটাও দেওয়া সম্ভব হয়নি। ওই অবস্থায় টাকা জোগাড় করে প্রতিটি পিআইসিকে কাজ করতে হয়েছে।’ গরিব কৃষককে কাজ দিচ্ছি অথচ তাকে টাকা দিতে পারছি না-উল্লেখ করে মামুন দাদনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এই কারণে পিআইসি চেয়ারম্যানরা অন্যের সাহায্য নিচ্ছে।’ ইউএনও বলেন, ‘গতবারের কাজের সময় তিন কিস্তিতে ৬০-৬২ ভাগ টাকা দেওয়া হয়েছে।

এবার দেওয়া হয়েছে ৫০-৫২ ভাগ। কোনো কোনো উপজেলায় এই বরাদ্দ ৫৪-৫৫ ভাগ হতে পারে। একটা পিআইসি কাজ শেষ করার পরও টাকা দিতে পারছি না। এটা নিজেদের কাছেই খারাপ লাগে।’ তিনি বলেন, ‘মার্চের মধ্যে যদি ৭৫ ভাগ টাকা পরিশোধ করা যায় তাহলে বাঁধে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা আদায় করা সম্ভব। একজনকে টাকাই দিতেছি ৫০ ভাগ। অথচ কাজ আদায় করতে হচ্ছে শতভাগ। যে মৌসুমে বাঁধের কাজ শুরু হয় তখন কৃষকের কাছে আসলে কোনো টাকাই থাকে না।’

ভেঙে ভেঙে বাঁধের টাকা পরিশোধের সত্যতা পাওয়া যায় পাউবোর একটি গোপন প্রতিবেদনে। এ বিষয়ে টাকা বরাদ্দের বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, সংশোধিত কাবিটা নীতিমালা ২০১৭-এর আওতায় সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলার বিপরীতে সর্বমোট ৬৬ কোটি ৬৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা প্রাথমিক বাজেটে বাদ্দ পাওয়া যায়। ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ টাকা ছাড় করা হয়েছে। পিআইসির অনুকূলে বিল পরিশোধের নিমিত্তে প্রথম কিস্তি বাবদ ২৯ কোটি ৭৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকা, দ্বিতীয় কিস্তি ১৯ কোটি ৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকা এবং তৃতীয় কিস্তি ১৮ কোটি ২২ লাখ ২২ হাজার টাকা উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবের যৌথ হিসাবে ছাড় করা হয়েছে। এমনকি ২০২০-২১ অর্থবছরে পিআইসির অনুকূলে বকেয়া চতুর্থ কিস্তির ২৬ কোটি ৮৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকাও এবার পরিশোধ করা হয়। অর্থাৎ গত অর্থবছরের কাজের টাকা এবার পরিশোধ করা হয়।

কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদনেও জালিয়াতি : সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় প্রথমে ফসল ভরা যে মাঠ তলিয়ে যায় তার স্থানীয় নাম ‘চাপটির হাওড়’। ৬ এপ্রিল পাহাড়ি ঢলের প্রথম আঘাতেই ১৬নং পিআইসির তৈরিকৃত বাঁধ ভেঙে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণভাবে তলিয়ে গেছে। পাউবোর দাপ্তরিক নথিপত্রে এই বাঁধ সংক্রান্ত যে প্রগ্রেস (অগ্রগতি) রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে হাওড়ের অনুমোদিত ডিজাইন অনুযায়ী প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়েছে। কাজের বাস্তব অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৯৫ ভাগ। ৫৪০ মিটার দীর্ঘ এই বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২০ লাখ ১৮ হাজার টাকা।

নথিপত্রে কাজ শুরুর তারিখ দেখা যায় ১৫ ডিসেম্বর, আর কাজ শেষ করা হয় ২৮ ফেব্রুয়ারি। অথচ সংশ্লিষ্ট পিআইসি চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রকল্প এলাকায় কাজের বিবরণ দিয়ে যে সাইনবোর্ড টানানো হয় সেখানে কাজ শুরুর তারিখ লেখা ছিল ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর। আর বাস্তবে আমাকে কাজ দেওয়া হয়েছে ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি। অর্থাৎ ২০ দিন পর কাজ বুঝে পেয়েও আমি ২৮ ফেব্রুয়ারির আগেই বাঁধের কাজ শেষ করেছি। এ কারণে কাজ শেষ করতে আমাকে সুদের ওপর টাকা আনতে হয়েছে।’ বিল পরিশোধের বিষয়ে জানতে চাইলে জাকারিয়া বলেন, ‘আমাকে তিন কিস্তিতে ১০ লাখ ৫৪ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

এই টাকা থেকে জিও কার্পেটের দাম পরিশোধ করা হয়েছে নগদ ৭৫ হাজার টাকা। আরও ৫০ হাজার টাকার চেক অগ্রিম রেখে দিয়েছেন পাউবোর এসও এটিএম মোনায়েম হোসেন। চূড়ান্ত বিলে বাকি টাকা পরিশোধ করার কথা। এর মধ্যেতো আমার প্রস্তুত করা বাঁধটিই ভেঙে চাপটির হাওড় তলিয়ে গেছে।’

বাঁধ নির্মাণ শুরুর তারিখ নিয়ে লুকোচুরির বিষয়টি স্বীকার করে দিরাই উপজেলা পিআইসি কমিটির সদস্য সচিব পাউবোর সুপারভিশন অফিসার এটিএম মোনায়েম হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘১৫ ডিসেম্বর সব বাঁধের কাজ শুরু করার কথা। কিন্তু এই সময়ে কাজ শুরু করা যায় না। পানি থাকে।’ কাজ শুরু করতে না পারলেও প্রগ্রেস রিপোর্টে ১৫ ডিসেম্বর লেখা থাকবে কেন জানতে চাইলে মোনায়েম বলেন, ‘বাস্তবে ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করা যায় না। এ বিষয়টি সবাই জানেন। পিআইসি জেলা কমিটি থেকে শুরু করে উপজেলা কমিটিতেও এ নিয়ে আলোচনা হতেই থাকে। কিন্তু সমাধান আর হয় না। যে কারণে ১৫ ডিসেম্বরকেই কাজ শুরুর অফিসিয়াল তারিখ নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে।’

এই এসও আরও বলেন, ‘হাওড় অঞ্চলে মাটির তৈরি যে বাঁধ দেওয়া হয় এগুলো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নয়। ডুবন্ত বাঁধ। ডেঞ্জার লেভেল পর্যন্ত পানি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আসলে চাপটির হাওড়ে প্রাকৃতিক শক্তির কাছে আমরা হেরে গেছি। ওই বাঁধে কোনো গাফিলতি ছিল না। বিল পরিশোধ করতে না পেরে অনেক বাঁধে যেতেও সমস্যা হয়েছে। কারণ ৫০ থেকে ৫২ ভাগ বিল দিয়ে শতভাগ কাজ আদায় করা যায় না। আর্থিকভাবে সচ্ছল পিআইসির সংখ্যাও হাতেগোনা কয়েকজন।’

৫ এপ্রিল ধর্মপাশার চন্দ্রসোনার থাল উপ-প্রকল্প (ডুবাইল অংশের বরুন কাইচ্ছা বিল) ৫শ মিটার পিআইসি বাঁধ ভেঙে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যায়। বাঁধের কাজের প্রগ্রেস রিপোর্টে দেখা যায়, কাজ শুরুর তারিখ উল্লেখ করা হয় ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর আর কাজ শেষ করা হয় ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। কাজের অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৯৯ ভাগ। ৫শ মিটার এই বাঁধের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ২২ লাখ ৮১ হাজার টাকা। হাওড় তলিয়ে যাওয়ার আগে এই বাঁধ সংস্কার বা নির্মাণের আগে ১২ লাখ ২৬ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়।

বাঁধ এলাকা থেকে অন্তত ১০ কিলোমিটার দূরের বাসিন্দা নুরুল হুদাকে পিআইসি চেয়ারম্যান করা হয়। ঘটনার পর থেকে এই নুরুল হুদা নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন। তার মোবাইল ফোনেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে একই পিআইসির সদস্য সচিব সাগর মিয়া যুগান্তরকে বলেন, ‘২৬ ডিসেম্বর বাঁধে কাজ শুরুর তারিখ লেখা হলেও আমরা ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছি ৯ জানুয়ারি। নির্ধারিত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমাদের এই বাঁধের কাজ শেষ করতে হয়েছে। এই বাঁধের কাজ শেষ করতেও সুদের ওপর টাকা নিতে হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনতাসির হাসান বলেন, ‘নুরুল হুদা ভালো কাজ করেন তাই তাকে এবারও পিআইসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এর আগে আরও দুবার তিনি কাজ করেছেন। আর দূর গ্রাম থেকে নুরুল হুদাকে দেওয়ার কারণ হচ্ছে ওই বাঁধ এলাকার আশপাশে কোনো গ্রাম নেই।’ কাজ শুরুর প্রকৃত তারিখ কেন গোপন করা হয়েছে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, ‘আসলে প্রগ্রেস রিপোর্ট না দেখে এ বিষয়ে বলা যাবে না।,

তবে ইউএনও ভেঙে যাওয়া বাঁধের আশপাশে কোনো গ্রাম না থাকার যে তথ্য দেন তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুখাই রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের অন্তর্গত সংশ্লিষ্ট বাঁধের ২-৩ কিলোমিটারের মধ্যেই আছে রাজাপুর, দয়ালপুর ও তাহিরপুর গ্রাম। আর নুরুল হুদার বাড়ি একই ইউনিয়নের গুলুয়া গ্রামে। যা ধর্মপাশা সদরের পাশে।

২৪ এপ্রিল সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার মাউতি গ্রামের ৮১নং পিআইসির বাঁধ ভেঙে ছায়ার হাওড় তলিয়ে গেছে। পাউবোর সংরক্ষিত প্রগ্রেস রিপোর্টে এই বাঁধের কাজ শুরুর তারিখ উল্লেখ করা হয় ১৫ ডিসেম্বর। অথচ সংশ্লিষ্ট বাঁধের পিআইসি চেয়ারম্যান শাল্লার বাহারা ইউনিয়নের শুকলাইল গ্রামের কৃপেন্দ্র কুমার দাস যুগান্তরকে বলেন, ‘আমিতো ওয়ার্ক অর্ডারই পেয়েছি ১২ জানুয়ারি, তাহলে ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করব কিভাবে?’ তিনি বলেন, ‘২১ লাখ ৮৪ হাজার টাকার এই প্রকল্পে দুই কিস্তিতে আমাকে পরিশোধ করা হয়েছে ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বাঁধের সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে আমাকে দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। এর মধ্যে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে ছায়ার হাওড়।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘শাল্লা উপজেলার ১৩৮টি পিআইসির মধ্যে সবাই সুদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বাঁধের কাজ করেছেন।’

এই বাঁধ সংস্কারের প্রকৃত তারিখ গোপন করার কারণ জানতে চাইলে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরূপ রতন সিংহ যুগান্তরকে বলেন, ‘আসলে আমি শাল্লায় যোগদান করি ২৭ জানুয়ারি। তবে ২৮ ফেব্রুয়ারির আগে সমস্ত বাঁধের কাজ শেষ করার যে চুক্তি ছিল তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অর্থাৎ নির্ধারিত তারিখের আগেই বাঁধের কাজ শেষ হয়। তিনি বলেন, ছায়ার হাওড়ের শতভাগ ধান কাটা শেষ হওয়ার পর বাঁধ ভেঙে গেছে। এখানে ফসলের কোনো ক্ষতি হয়নি।’ তবে শাল্লা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট অবনি মোহন দাস যুগান্তরকে বলেন, ‘ফসল তলিয়ে গেছে ২০ ভাগ। আর বাস্তবে ৪০ ভাগ ক্ষতি হয়েছে কৃষকের।

কারণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ার যে অশনি সংকেত প্রচার করা হয় তাতে কৃষক আতঙ্কিত হয়ে আধা পাকা ধান কেটেছেন। কৃষকের এ ক্ষতিটাকে ক্ষতি হিসাবেই ধরতে হবে। এরপর গোখাদ্যের মারাত্মক সংকট দেখা দেবে। অসময়ে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাওয়ায় গোখাদ্য সংগ্রহ করা যায়নি। ধান কাটার মেশিনের ভাড়া প্রতি কেদার জমিতে অতিরিক্ত এক হাজার টাকা নেওয়াটাও তো কৃষকের ক্ষতির মধ্যেই পড়ে।’ তিনি বলেন, ‘শাল্লা উপজেলায় ১৩৮ পিআইসির মধ্যে অন্তত ১শ পিআইসি কমিটি করা হয়েছে কৃষক ছাড়া। সারা জেলায় ৭২৪টি পিআইসিই তদন্ত করে দেখতে হবে প্রকৃত কৃষক ছাড়া কতগুলো পিআইসি গঠন করা হয়েছে। এবার যদি এসব চিহ্নিত না করা হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে বাঁধ নিয়ে কৃষকের আতঙ্ক কাটবে না।’

গোপন প্রতিবেদনেই নকশাবহির্ভূত বাঁধ : জেলা কমিটিতে অনুমোদিত ৭২৭টি স্কিমের বিপরীতে উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কাজের হালনাগাদ অগ্রগতির ছকেও নকশাবহির্ভূত কাজের প্রমাণ পাওয়া যায়। উপজেলাওয়ারি তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে গোপন প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, ৭২৭টি বাঁধের মধ্যে ৩৫৬টি বাঁধে ঘাস লাগানো হয়েছে। অর্থাৎ ৩৭১টি বাঁধে ঘাস লাগানো হয়নি। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদরে ২৬টির মধ্যে ঘাস লাগানো হয় ৮টি বাঁধে, ধর্মপাশায় ১৫৮টির মধ্যে ১৩১টি, তাহিরপুরে ৬৮টির মধ্যে একটিতেও ঘাস লাগানো হয়নি।

এছাড়া জামালগঞ্জে ৪০টির মধ্যে ৩২টিতে ঘাস লাগানো হয়, শান্তিগঞ্জে ৫৬টির মধ্যে ১৮টি, দিরাইয়ে ১০৪টির মধ্যে ৮০টি, শাল্লায় ১৩৮টির ৫৬টি, জগন্নাথপুরে ২৮টি বাঁধের মধ্যে ৮টি, দোয়ারাবাজারে ৫০টির মধ্যে ১৪টি এবং ছাতকে ২৪টির মধ্যে ৪টি বাঁধে ঘাস লাগানো হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাঁধ যেনতেনভাবে সম্পন্ন হওয়ায় প্রায় ৩শরও অধিক বাঁধ চুইয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সেগুলো ঝুঁকির সৃষ্টি করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জরুরিভাবে এসব বাঁধ সংস্কার করে।

জরিপেও ভয়াবহ তথ্য : নির্দিষ্ট সময়ে মাত্র ৮ ভাগ বাঁধে মাটির কাজ সম্পন্ন হওয়ার তথ্য দিয়েছে একটি বেসরকারি জরিপ। নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত ২৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যে হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ ৬২ ভাগ শেষ হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় সঠিক ছিল না ৫৮ ভাগ মানুষ। তারা রাজনৈতিক প্রভাব ও অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে পিআইসি গঠন করার অভিযোগ করেছেন।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ও পরিবেশ ও হাওড় উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজার যৌথ জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)