দেবহাটার পারুলিয়ার বহুল আলোচিত শেখ আবুল হোসেনের মামলা খারিজ, জয় হলো তপন বিশ্বাসের
রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা :
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ পারুলিয়ার তপন বিশ্বাসের কাছ থেকে চার শতক জমি কিনে তা বুঝে পাওয়ার পরও অনিয়ম ও দূর্ণীতির আশ্রয় নিয়ে শেখ আবুল হোসেন তপন বিশ্বাসের আরো চারশতক জমি দাবির মামলা বৃহষ।পতিবার খারিজ করে দিয়েছেন দেবহাটা সহকারি জজ আদালতের বিচারক মোঃ ইলিয়াম হোসেন।
পারুলিয়া গ্রামের লালু বিশ্বাসের ছেলে তপন বিশ্বাস জানান, পারুলিয়া মৌজার এসএ ৩৭৬৪ ও ৩৭৬৩ খতিয়ানের ৩৬৫২ দাগে নিজের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গুদামসহ তার সাত শতক জমি রয়েছে। ওই জমিতে থাকা গুদামঘরটি ২০০৪ সালে সাতক্ষীরার জনৈক মাহাবুব বিশ্বাসকে ভাড়া দেন তিনি। ১৯৮৮ সালে ওই গুদাম সংলগ্ন এসএ ৩৭০৭ ও ৩৭৯২ নং খতিয়ানে ৩৬৫১/৫১৮৭ দাগের চার শতক জমি নুরুল হোসেনও তার শরীকদের কাছ থেকে কেনেন তিনি। দলিল বরাবর ওই জমি ১৯৯৭ সালের ৭ মে এনায়েতুল্লা শেখের ছেলে শেখ আবুল হোসেনের কাছে বিক্রি করেন তিনি। ওই জমি বর্তমান মাঠজরিপে নিজ ডিপি ১৮০০ খতিয়ানে অর্ন্তভুক্ত করে তার (তপন) রেকডীয় প্রায় এক শতক জমি জবরদখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেন শেখ আবুল হোসেন । এরপরও নতুন করে তার (তপন) গুদামসহ চার শতক জমি জবরদখলের পায়তারা করতে থাকেন আবুল হোসেন।
এরই অংশ হিসেবে ২০১৫ সালের ২৩ জুন শেখ আবুল হোসেন, তার ছলে পলাশ, পলাশের মামা মেহেদী হাসান ওরফে উত্তম, পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুজ্জামান প্রিন্সসহ কয়েকজন নূর আমিনের ইন্ধনে এমআর ফিসের ঘরে তালা ঝুলিয়ে সামনে পলাশ এন্টারপ্রাইজ সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের নির্দেশে পুলিশ জবরদখল মুক্ত করে জায়গা তাকে (তপন) বুঝিয়ে দেয়। পরে বর্তমান উপজলা যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিন্নু শালিসের নামে উভয়ক্ষকে ডেকে মধ্যস্ততার নামে তার (তপনের) কাছ থেকে চারটি সাদা অলিখিত কাগজে সাক্ষর করিয়ে নেন।
এ ঘটনা প্রশাসন ও সাংবাদিকদের জানালে আবুল হোসেন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা তার ছেলে অনুপের বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজির মামলা করেন। একই ভাবে কক্সবাজার থানার একটি ভুয়ো গ্রেফতারি পরোয়ানার মাধ্যমে তার (তপনের) ছেলে অনুপ কুমার বিশ্বাসকে গ্রেফতার করিয়ে জেল খাটানো হয়। এরপরও জমি জবরদখলের প্রক্রিয়া অব্যহত রাখে ওই মহলটি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও জেলা প্রশাসকের পৃথক তদন্ত প্রতিবেদনে আবুল হোসেন যে তার প্রায় এক শতক জমি জমি জবরদখল করার পরও গুদামঘরসহ পার্শ্ববর্তী জায়গা জবরদখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন তা প্রমাণিত হয়।
তপন বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, তার কাছ থেকে কেনা জমি বুঝে পাওয়ার পরও সাতক্ষীরার যুগ্ম জজ -২য় আদালতে দেঃ-৯৩/১৫ মিথ্যা মামলা করলে গত ১৫ নভেম্বর আদালত ওই জমির উপর অস্থায়ী নিষোধাজ্ঞা দেয়। তিনি ওই আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে আপিল করেন। ওই গুদামঘর ও জমি জবরদখল করা হতে পারে মর্মে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর তিনি সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন।
পুলিশ সুপার দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী কামাল হোসেনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বললেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। ফলে ৩০ নভেম্বর সকাল ৮টার দিকে মিজানুর রহমান মিনুর নেতৃত্বে নুর আমিন, তাজুল ইসলাম, শেখ আবুল হোসেন, তার শ্যালক মেহেদী হাসান উত্তম, এনায়তুল্লাহ, খায়রুল ইসলাম, রুবেল, আফছার আলী, দীন ইসলামের নেতৃত্বে ২৫/৩০ জন নারী ওই গুদাম ঘর দখল করে নেন।
বিষয়টি দেবহাটা থানাকে অবহিত করলে উপপরিদর্শক আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বে পুলিশ সন্ধ্যায় জবরদখলকারিদের সরিয়ে দিয়ে তার (তপন) কেনা নতুন তালা শার্টারে মেরে চাবি বাজার কমিটির সভাপতি পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে তার ভাড়াটিয়া মাহাবুব বিশ্বাসের কথিত কেয়ারটেকার নূর আমিনের কাছে দিয়ে দেন। এরপরপরই থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাকে দোকান দিয়ে দিয়েছেন মর্মে ঘোষণা দিয়ে নূর আমিন ওই গুদাম ঘর দখলে নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকেন। ১৩ ডিসেম্বর মহামান্য হাইকার্ট ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর সাতক্ষীরার যুগ্ম জেলা জজ-২য় আদালতের রায়ের উপর স্থিতাবস্থা জারির( মামলা নং -এফএমএটি-৯০৭/১৭) নির্দেশ দেয়।
এ খবর জানতে পেরে ১৪ ডিসেম্বর ভোর চারটার দিকে নূর আমিন, শেখ আবুল হোসেন, মেহেদী হাসান উত্তম, রুবেল, খায়রুলসহ সশস্ত্র অস্ত্রধারীরা ওই গুদাম ঘরের সামনে লাগানো ‘এনসিসি ব্যাংক পারুলিয়া শাখায় দায়বদ্ধ’ সাইনবোর্ডটি তুলে ফেলে দিয়ে তার পাশে পলাশ এন্টারপ্রাইজের সাইন বোর্ড লাগিয়ে দেয়। একই সাথে ওই গুদামের মালিক আবুল হোসেন বলে দেয়ালে লিখে দেওয়া হয়।
প্রতিবাদ করায় হত্যার হুমকি দেওয়া হয় তাকে (তপন) ও তার পরিবারের সদস্যদের। এ ঘটনায় তিনি ১৪ ডিসেম্বর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। এরপরও পুলিশের সহায়তায় আবুল হোসেন ও তার লোকজন ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে গুদাম ঘরের পাশের কিছু খালি জায়গা দখল করে মাদক ব্যবসায়ি রুবেলকে দিয়ে চায়ের দোকান বসায়। বিষয়টি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেও কোন লাভ হয়নি। বর্তমানে রুবেল এর চাচাত ভাই কামরুল ওই জায়গা শেখ আবুল হোসেনের কাছ থেকে লিজ নিয়েছেন দাবি করে তার (তপন) জায়গা দখল করে ব্যবসা করে আসছে।
তপন বিশ্বাস জানান, যুগ্ম জেলা জজ-২য় আদালতে শেখ আবুল হোসেনের দায়েরকৃত দেঃ ৯৩/১৫ মামলাটি ২০২১ সালের মাঝামাঝি নাগাদ দেবহাটা সহকারি জজ আদালতে বদলী করা হয় । (দেঃ-২০২/২১) । বৃহষ্পতিবার বিচারক মোঃ ইলিয়াম হোসেন বাদি শেখ আবুল হোসেনের দায়েরকৃত মামলাটি দু’ তরফা সূত্রে খারিজ করে দিয়েছেন। এ রায়ে তিনি খুশী।