আশাশুনিতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাউল মাছের ডিপোয়

জি এম মুজিবুর রহমান, আশাশুনি :

আশাশুনি উপজেলার বুধহাটায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাউল বিতরণ শেষ হওয়ার পরও বাজারের এক মাছের ডিপোয় ৫ বস্তা চাউল পাওয়া গেছে। এব্যাপারে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হলেও চাউল সরানো চক্রের সদস্যরা নিজেদের অপরাধ ঢাকতে ভিন্ন পথে হাটতে শুরু করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বুধহাটা এলাকার চাউল সরবরাহের জন্য ডিলারের দায়িত্ব পালন করছে দীর্ঘদিনের নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ডিলার নজরুল ইসলাম। নানা অনিয়ম দুর্নীতি রুখতে এবার তাকে শ্বেতপুর গ্রামে বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হলে বুধহাটা করিম সুপার মার্কেটে ঘর ভাড়া নিয়েছে দেখিয়ে চাউল উত্তোলন করেন তিনি। তিনি ১১৮৪ টি কার্ডের বিপরীতে ৩৫ হাজার ৫২০ কেজি চাউল উঠান। চাউল বিতরণকালে ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ উঠতে শুরু করে। স্থানীয়রা উপস্থিত হয়ে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু শুরু থেকে ৩০ কেজি স্থলে ২৯ কেজি করে চাউল দিতে থাকেন।

সাংবাদিকরা উপস্থিত হলে সাড়ে ২৯ কেজি করে দেয়া হচ্ছে বলে স্বীকার করেন। এসময় অনেকের কাছ থেকে কার্ড নিয়ে নেওয়া হলেও তাদেরকে চাউল না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। ডিলারের নির্দিষ্ট বিতরণ স্থান করিম সুপার মার্কেটে চাউল বিতরণ কাজ শেষে ঘরে চাউল নেই সকলকে বিতরণ করা হয়েছে ঘোষণা দেওয়া হয়। ২১ এপ্রিল বিতরণ কাজ শেষে ২৫ এপ্রিল (মঙ্গলবার) ট্যাগ অফিসার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের কাছে হিসাব মিলিয়ে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। কিন্তু পরদিনই (২৬ এপ্রিল) সকালে স্থানীয় লোকজন বুধহাটা বাজারের খোকন এর মাছের ডিপোর মধ্যে সরকারি বস্তাবন্ধি ৫ বস্তা চাউল দেখে খবর দিলে স্থানীয় সাংবাদিক ও বাজারের অসংখ্য মানুষ সেখানে উপস্থিত হলে চাউল পাওয়া যায়।

ট্যাগ অফিসার রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থানে উপস্থিত হয়ে জানান, চাউল বিতরণ শেষ হওয়ার পর আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। আমার জানামতে কোন চাউল বিতরণ করতে ছিলনা।

ডিলারের সহযোগি অমেদ আলি জানান, ১৮ জনের চাউল দিতে বাকী আছে। তাদের জন্য ৫ বস্তা চাউল এখানে এনে রাখা হয়েছে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জানান, আমি আজই নতুন যোগদান করেছি। আমি কোন অনিয়ম হতে দেবনা। তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়ানুর রহমানকে মোবাইল জানান হলে, তিনি জরুরী মিটিং এ আছেন, ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।

উপস্থিত সচেতন ব্যক্তিবর্গ জানান, ১৮ জনের চাউল দিতে বাকী থাকলে চাউল লাগবে ৫৪০ কেজি। কিন্তু আছে ২৫০ কেজি। তাহলে হিসেবে গরমিল হচ্ছে কেন। তাদের দাবী করিম মার্কেট থেকে ৫ বস্তা নয়, অনেক বেশী চাউল সরানো হয়েছে। যার মধ্যে এখানে রয়েছে মাত্র ৫ বস্তা। তারা দাবী করেন, ১৮ জন নয় কমপক্ষে ৩০/৪০ জন কার্ডধারীকে চাউল দেয়া হয়নি। তারা অনেক ভাবে অনুনয় বিনয় ও কান্না কাটি করে ফিরে গেছে। তাছাড়া প্রত্যেককে এককেজি করে কম দিলে ১১৮৪ কেজি চাউল উদ্বৃত থাকে। এ চাউল গেল কোথায়? এমন ঘটনা আজই নতুন নয়, খাদ্যবান্ধব কর্মসুচীর ডিলার আলমগীর হোসেন ও তার পিতা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বুধহাটা ইউনিয়ন পরিষদে লিখিত অভিযোগ হয়েছিল।

ইউনিয়ন পরিষদ অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগে জান। বুধহাটা গ্রামের বাবু দত্তের স্ত্রী কবিতা দত্ত, একই এলাকার সুপ্রিয়া পাইন, উন্নতি পাইন, সঞ্জয় পাইন, পল রানী দত্ত, মিনি পাইন ও জয়ভ পাইনের নিকট থেকে নজরুল কার্ড পাইয়ে দেয়ার কথা বলে মোট ১১ হাজার ৫শ’ টাকা হাতিয়ে নেন। লম্বাডাঙ্গা-বেউলা গ্রামের মনোরঞ্জন দাস, স্বপন কুমার সরদার, গোলক বিশ্বাস, সতী রানী দাস, গঙ্গা রানী দাস, পলাশ দাস, আরশাদ আলী গাজী ও মালতী রানী দাসের নিকট কার্ড দেয়ার নামে ১২ হাজার টাকা নিয়েছিল তারা।

তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল। নতুন ইউপি চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ডাবলু ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম চাউল দেওয়া হলো। তিনি সুষ্ঠু ও দুর্নীতিমুক্ত বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার পরও ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ ও কার্ডধারীদের কাড নিয়ে চাউল না দেওয়ার মত অভিযোগ কমে গেলেও বন্ধ হয়নি।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবম মোছাদ্দেক সে সময় অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে ওই অসাধু ডিলার আলমগীার ও তার পিতা নজরুল ইসলাম সাধারণ অসহায় বহু মানুষের নিকট থকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। মৌখিকভাবে তাকে নিষেধ করলেও তাকে থামান যায়নি। বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট তিনি দাবী জানান।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)