বাংলাদেশ থেকে ফেরি কিনতে আগ্রহী ইরান

নিউজ ডেস্কঃ

কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বাংলাদেশ থেকে ৬টি ফেরি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইরানের টিটি তেজারত গোস্টারেস কিস নামের একটি কোম্পানি।

তেহরানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে এসব রো-রো ফেরি কেনার প্রস্তাব করেছে কোম্পানিটির মূল প্রতিষ্ঠান কিস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। একইসঙ্গে একটি যাত্রীবাহী জাহাজ ভাড়া নিতে চায় কোম্পানিটি।

ইরান ও কাতার পারস্য উপসাগরের দুই পাড়ে অবস্থিত দুটি দেশ। পারস্য উপসাগরের আড়াআড়ি দৈর্ঘ্য ২০০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার। কিস হচ্ছে পারস্য উপসাগরে ইরানের একটি দ্বীপ, যা দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন।

আগামী ২১ নভেম্বর কাতারে শুরু হবে ফুটবলের ২২তম বিশ্ব আসর। চলবে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ সময়ে কাতারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ পর্যটক আসবেন। এ পর্যটকদের একটি অংশ কাতারের পাশাপাশি পারস্য উপসাগরের বিভিন্ন দ্বীপে ভ্রমণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পর্যটনের এ সম্ভাবনা এবং ইরানের নাগরিকদের সমুদ্রপথে ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে কাতারে যাওয়ার সময় নৌপথে যে বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হবে সে বিবেচনায় এসব রো-রো ফেরি কেনা ও যাত্রীবাহী জাহাজ ভাড়া নেয়ার কথা ভাবছে কোম্পানিটি।

সম্প্রতি তেহরান দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর ড. জুলিয়া মঈন চিঠি দিয়ে দেশের ব্যবসায়ীদের সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, অ্যাসোসিয়েশন অব এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশ এবং জাহাজ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের কাছে ৬টি ফেরি ও যাত্রীবাহী জাহাজ সরবরাহ করার বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।

তিনি চিঠিতে লিখেছেন, রো রো ফেরিগুলো কমপক্ষে ২০০ ব্যক্তি ও ৬০টি গাড়ি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন হতে হবে। যে জাহাজটি ভাড়া করা হবে তার ধারণক্ষমতা হবে ৩০০ থেকে ৫০০ জন। এই জাহাজটি ফুটবল বিশ্বকাপ সময়ের জন্য ভাড়া নেবে ইরানের কোম্পানিটি। জাহাজের নাবিকসহ অন্যান্য স্টাফ তারা নিজস্ব উপায়ে ব্যবস্থা করবে।

এ বিষয়ে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ইরানি কোম্পানি তেহরান দূতাবাসের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছে। কোম্পানিটি বাংলাদেশ থেকে ফেরির কারিগরি দিক ও দাম বিষয়ে ধারণা নিতে চেয়েছে। সে ধারণা দেওয়া হয়েছে। এখন কোম্পানিটি আগ্রহী হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

তিনি বলেন, এর আগেও বাংলাদেশ থেকে ডেনমার্ক ও পাকিস্তানে ফেরি সরবরাহ করা হয়েছে। সেখানে ভালোভাবেই চলছে ফেরিগুলো। নিউজিল্যান্ড ও ডেনমার্কে যাত্রীবাহী জাহাজ সরবরাহের অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশের শিপবিল্ডারদের। এছাড়া ভারতে বাল্ক্ক ক্যারিয়ার, জার্মানিতে মাল্টিপারপাস জাহাজ রফতানি করা হয়েছে। ফলে ইরানি কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী ফেরি সরবরাহ করা কঠিন নয়।

বাংলাদেশ এরইমধ্যে জাহাজ রফতানিতে সুনাম অর্জন করেছে। দেশে গড়ে উঠেছে সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণের কিছু প্রতিষ্ঠান। যদিও গত দুই বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বিশেষ অর্ডার আসেনি।

তবে সংশ্নিষ্টরা আশা করছেন, করোনাপরবর্তী বাড়তি চাহিদার ফলে পণ্য পরিবহন জোরদার হবে। ফলে বাংলাদেশে সমুদ্রগামী জাহাজের নতুন অর্ডার আসবে।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাহাজ নির্মাণশিল্পে বাংলাদেশ ৫ বছরে ১৩ ধাপ এগিয়ে বর্তমানে বিশ্বে ১৪ নম্বরে অবস্থান করছে। বৈশ্বিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এ সাফল্যের পেছনে কাজ করেছে দেশের কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপের জাহাজ নির্মাণশিল্পে বিনিয়োগ। কয়েকটি গ্রুপের যৌথ বিনিয়োগে জাহাজ নির্মাণশিল্পে গড়ে উঠেছে ডেলটা শিপইয়ার্ড। এ শিপইয়ার্ড থেকে বড় বড় মালবাহী জাহাজ তৈরি করা হচ্ছে। জাহাজের ধারণক্ষমতা তিন থেকে পাঁচ হাজার টন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)