স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আশাশুনি একসঙ্গে পুলিশে চাকরি পেল যমজ বোন

নিউজ ডেস্ক:

যমজ বোন ফারজানা জাহান ও ফারহানা জাহান। এসএসসিতে একই ফলাফল নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এবার সবাইকে চমকে দিয়ে পুলিশে চাকরিও পেয়েছেন একসঙ্গে।

ফারজানা জাহান ও ফারহানা জাহান সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের ফকড়াবাদ গ্রামের আসাদুল ইসলামের মেয়ে। মা রেহেনা পারভীন গৃহিণী।

ছবি:যমজ বোন

২০২২ সালের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ পরীক্ষায় সাতক্ষীরার চূড়ান্ত ফলাফলে স্থান করে নিয়েছে যমজ বোন ফারজানা জাহান ও ফারহানা জাহান। সাধারণ নারী কোটায় মেধা তালিকায় চতুর্থ ফারজানা জাহান এবং পঞ্চম হয়েছেন ফারহানা জাহান। গত বুধবার (২০ এপ্রিল) এ ফলাফল ঘোষণা করেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান।

যমজ বোন চাকরি পাওয়ায় পরিবারটিতে বইছে আনন্দের বন্যা। তবে সন্তানদের বেড়ে উঠার গল্প বলতে গিয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন মা রেহেনা পারভীন। তিনি বলেন, আমি দর্জির কাজ করি। ওই টাকায় চলে সংসার। মেয়েদের লেখাপড়াও শিখিয়েছি। আমার তিনটা মেয়ে। বড় মেয়ে আফসানা জাহান গণিত বিষয়ে অনার্স পড়ছে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে। ছোট দুইটা যমজ। একইসঙ্গে লেখাপড়া, খেলাধুলা করে বেড়ে উঠেছে তারা। একসঙ্গে তারা পুলিশে চাকরি পাবে, এটা স্বপ্নেও ভাবিনি।

২০২০ সালে গোয়ালডাঙ্গা ফকিরবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৪.০৬ পেয়ে এসএসসি পাস করেছে যমজ বোন। বর্তমানে আশাশুনি মহিলা কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তারা।

মা রেহেনা পারভীন বলেন, আমাদের পরিবারে আগে এত দুর্দিন ছিল না। ২০১৩ সালের নভেম্বরে স্বামী আসাদুল ইসলাম বড়দল ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। দেশে তখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ ছিল। জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা স্বামীকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয়, মুখ থেতলে দেয়। এরপর মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে যায়। সেই থেকে আজও স্বামীর চিকিৎসা চলছে। এখন চলাফেরা করতে পারলেও কোনো কাজ করতে পারেন না। মুখের দুই চোয়ালের মধ্যে আজও প্লেট বসানো রয়েছে।

তিনি বলেন, দর্জির কাজ থেকে উপার্জিত অর্থ ও সরকারি বিভিন্ন সহায়তায় সংসার চলে। দুই মেয়ের পুলিশে চাকরি হওয়ায় আমরা খুব খুশি। সংসারে আর অভাব-অনটন থাকবে না।

ফারজানা জাহান বলেন, ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল আমি পুলিশ হব। এখন পুলিশে চাকরি পেয়েছি। এবার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারব।

ফারহানা জাহান বলেন, পুলিশে আবেদন করার পর অনেকেই বলেছিল, পুলিশে চাকরি পেতে টাকা লাগবে। কিন্তু আমাদের টাকা নেই। তবুও মাঠে গেলাম। পুলিশ সদস্য নিয়োগের পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হয়েছি। টাকা ছাড়াই পুলিশের চাকরি পেয়েছি আমরা। আবেদনসহ খরচ হয়েছে মাত্র ১২০ টাকা করে দুই বোনের ২৪০ টাকা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বাবা আসাদুল ইসলাম বলেন, আমি এখন কোনো কাজকর্ম করতে পারি না, বাড়িতেই থাকি। গরিব পরিবারে সরকারি চাকরি খুব একটা হয় না। সেখানে দুই মেয়ে একসঙ্গেই মেধা তালিকায় পুলিশে চাকরি পেয়েছে, এর থেকে আনন্দের কিছু হতে পারে না। গ্রামের মানুষদের ধারণা, ঘুষ ছাড়া পুলিশে চাকরি হয় না। কিন্তু এখন আমার পরিবারে সেই ধারণা পাল্টে গেছে। আমি প্রধানমন্ত্রী ও সাতক্ষীরা জেলা পুলিশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পুলিশে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ২০২২ সালে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগে সাতক্ষীরায় ৫৫ জন নতুন পুলিশ সদস্য পদে নিয়োগ পাচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে সাধারণ নারী কোটায় ৮ জন ও পুরুষ ৪৭ জন। পুরুষদের মধ্যে সাধারণ কোটায় ২৯ জন, পোষ্য কোটায় ৪ জন ও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পেয়েছে ১৪ জন। এছাড়া নারী-পুরুষ মিলে আটজনকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত হওয়া ৫৫ জনের মধ্যে যদি কেউ পুলিশ ভেরিফিকেশন ও মেডিকেল থেকে বাদ পড়েন, তবে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে অন্তর্ভূক্ত করা হবে।

তিনি বলেন, ফারহানা জাহান ও ফারজানা জাহান আশাশুনির যমজ বোন। তারা সাধারণ নারী কোটায় পুলিশ সদস্য পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে। যারাই প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন সকলেই মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)