আশাশুনির মদিনাতুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসা গভর্ণিং বডি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ

জি এম মুজিবুর রহমান:

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের চেচুয়া গ্রামে অবস্থিত মদিনাতুল উলুম ফাজিল মাদরাসা গভর্ণিং বডির ৪ সদস্যের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ফলে কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি পুনঃ গঠনের দাবী জোরালো হতে শুরু করেছে। গত ৭ এপ্রিল ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার মোঃ রেজাউল হক স্বাক্ষরিত গভর্ণিং বডি অনুমোদন প্রসঙ্গে একপত্রে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট অনুমোদন প্রদান করা হয়। অনুমোদিত কমিটির মধ্যে বিদ্যোৎসাহী সদস্য মোঃ এনামুল হোসেন নাশকতাসহ একাধিক মামলার আসামী এবং চেক জালিয়াতি মামলায় দুই বছর সাজা নিয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।

অভিভাবক সদস্য আবুল খায়ের মোঃ শফিউল ইসলাম স্থানীয় হলেও বিগত ৩০ বছর যাবত ঢাকাতে সেটেল্ড। ফ্যামিলি নিয়ে ঢাকাতে থাকেন। তার বাচ্চাদের জন্মস্থানও ঢাকাতে। তিনি এসজিএস নামক প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। শুধু ঈদের ছুটিতে ছাড়া তার এলাকায় আসা হয়না বললেও ভুল হবেনা। তার ছেলে আয়ান ও মেয়ে আনিশা আলভিনা দুজনই ঢাকার মহাখালী ডিওএইচএসে অবস্থিত বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজে যথাক্রমে নবম ও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। অথচ তাদেরকে এই মাদ্রাসায় ভর্তি দেখিয়ে অভিভাবক সদস্য করা হয়েছে। অপর অভিভাবক সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাড়ি ছেড়ে খুলনাতে বসবাস করেন। তার দুই মেয়েকেও অত্র মাদরাসায় ভর্তি দেখিয়ে অভিভাবক সদস্য করা হয়েছে।

অপর শিক্ষক প্রতিনিধি মাওঃ তৈয়বুর রহমানের বিরুদ্ধে আশাশুনি থানায় রাষ্ট্রদ্রোহী ও নাশকতা মামলা (নং ০১, তাং ০৬/০৮/১৬, নং ১২, তাং ০৫/০৫/১৬, নং ১৮, তাং ২৯/০৬/১৮ ও নং ১০, তাং ০৮/০৯/১৮) রয়েছে। কিন্তু তারপরও কিভাবে তাদেরকে কমিটির অন্তর্ভূক্ত করা হলো এনিয়ে এলাকায় নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাদরাসায় এবতেদায়ী শাখায় কোন ছাত্রছাত্রী মাদরাসায় আসেনা, তাই ক্লাসও হয়না এবং দাখিল পর্যায় ও ফাজিল পর্যায় পর্যন্ত মাত্র ১৫/২০ জন শিক্ষার্থী ক্লাসে এসে থাকে।

প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থী ভর্তি দেখিয়ে হাজিরা খাতায় নাম উঠানো রয়েছে বলে মাদারাস পাশে ও এলাকার অসংখ্য মানুষ সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন। এনিয়ে ইতিপূর্বে অনেকবার পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে গঠিত গভর্ণিং বডির বিরুদ্ধে যোগ্যতার বিষয়ে অভিযোগ থাকার পরও কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং ৮টি পদে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে ব্যাপক প্রচার হচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবী প্রতিষ্ঠানকে সুন্দর ভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা নেওয়া হোক, শিক্ষকদের শিক্ষক সূলভ আচরণ, শিক্ষার্থী যোগাড়ের পরিবেশ তৈরি, নিয়মিত ও সরাকারি বিধিবিধান মেনে ক্লাস পরিচালনা, যোগ্য সদস্যদের নিয়ে গভর্ণিং বডি গঠন করা হোক, কিছু মানুষের বিশেষ চিন্তাকে প্রতিষ্ঠিত না করে আপাতত নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখা হোক।

এব্যাপারে মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপ্যাল এর সাথে মোবাইলে কথা বললে তিনি সাংবাদকিদের কাছে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে জানান, অভিভাবক সদস্য আক্তারুজ্জামান ও শফিউল ইসলামের সন্তানদেরকে মাদরাসায় ভর্তি করানো হয়েছে, তারা ক্লাসে আসেনা। আর এনামুল হোসেনের সাজা হয়েছে, সেটি আমার জানা ছিলনা। মাদরাসা নিয়মিত হয় কিনা ও শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা বেশি আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি খোলামেলা কথা না বলে জানান, প্রতিদিন প্রতিষ্ঠান খোলা হয়, ক্লাসও নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম থাকলেও প্রতিষ্ঠান চলার মত আছে। করোনার কারনে সমস্যা ছিল। আগামীতে সব ঠিকঠাক ভাবে চলবে বলে তিনি দাবী করেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)