সৌদিতে পাঠানোর কথা বলে নারীকে ঢাকায় এনে ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেফতার ৪
অনলাইন ডেস্ক: এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে মানবপাচার চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ওই নারীকে সৌদি আরবে পাঠানোর কথা বলে ভাষা শেখানোর নামে তাকে ঢাকায় এনে ধর্ষণ করেছে।মৌলভীবাজার থেকে ওই নারীকে ঢাকার রামপুরায় আনা হয়।
গ্রেফতার চারজন হলেন- তোফায়েল আহম্মেদ, কামরুল আহম্মেদ, খালেদ মাসুদ হেলাল এবং মো. জামাল।
তাদেরকে গ্রেফতারের পর বিস্তারিত তথ্য জানাতে শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ধর্ষণের শিকার নারী মোবাইল ফোনে র্যাবের সহায়তা চান। অভিযোগ পেয়ে গত বুধবার রাতে রামপুরা থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তোফায়েল আহম্মেদ ও ভুক্তভোগী নারীর বাড়ি একই এলাকায়। তিনি ওই নারীকে সৌদি আরবে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি ওই নারীকে বলেন- সৌদি আরবে যেতে হলে আরবি ভাষা শিখতে ঢাকায় যেতে হবে। পরে মৌলভীবাজার থেকে ঢাকার রামপুরায় চক্রের আরেক সদস্য কামরুল আহম্মেদের বাসায় এনে তোফায়েল ওই নারীকে ধর্ষণ করেন।
‘এ ঘটনায় রামপুরা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তোফায়েলসহ ওই চারজনকে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ওই নারীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে।’
মানবপাচার চক্রটি সম্পর্কে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, গ্রেফতার চারজন সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। তাদের মধ্যে কামরুল এই চক্রের প্রধান। অন্য তিনজন তার সহযোগী। তাদের জনশক্তি রপ্তানির কোনো অনুমোদন নেই। কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে ভ্রমণ ভিসায় নারীদের মধ্যপ্রাচ্যে পাঠাচ্ছে। কিন্তু বিদেশে গিয়ে কেউ কাজ পাচ্ছেন না। অনেকেই সেখানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
‘কখনো আবার ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভুয়া পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকিট প্রদান করছে চক্রটি। এসব করে প্রত্যেকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা। এভাবে পাঁচ বছরে শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চক্রের সদস্যরা।’
এসব কাজ করে চক্রের সদস্যরা ঘন ঘন ঠিকানা পরিবর্তন করে বলে এই র্যাব কর্মকর্ত। তিনি বলেন, ‘ভুয়া ভিসা ও টিকিট নিয়ে বিমানবন্দরে গিয়ে অনেক বিদেশগামী বুঝতে পারেন তারা প্রতারিত হয়েছেন। তখন চক্রের সদস্যদের কাছে প্রতিকার চাইলে যোগাযোগ বন্ধ করে ঠিকানা পরিবর্তন করে ফেলে। এভাবে গত দুই বছরে আটবার ঠিকানা পরিবর্তন করেছে চক্রের সদস্যরা।’
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, চক্রের প্রধান কামরুল লেখাপড়া করেছেন নবম শ্রেণি পর্যন্ত। তার কোনো নির্দিষ্ট পেশা নেই। প্রতারণা ও মানবপাচারই তার পেশা। ২০১৯ সালে তিনি ভ্রমণ ভিসায় দুবাই যান। সেখানে মানবপাচারের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে দুবাইয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পান। তিনি ২০২১ সালের মে মাসে দেশে ফিরে আসেন। তার জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স নেই। বিভিন্ন ট্যুরস ও ট্রাভেলসের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভ্রমণ ভিসায় বিভিন্ন দেশে লোক পাঠান। তার অন্যতম সহযোগী জামাল ‘মাহবুব ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সহকারী ব্যবস্থাপক।
‘জামাল লেখাপড়া করেছেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। গ্রেফতার খালেদ প্রায় ১৫ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। ২০১৬ সালে দেশে ফিরে মানবপাচারে জড়িয়ে পড়েন। আর তোফায়েল পেশায় একজন গাড়িচালক। কয়েক বছর ধরে তিনি কামরুলের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন’, জানান র্যাব কর্মকর্তা আরিফ মহিউদ্দিন।