বেনাপোল বন্দরে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে আগুনে পুড়লো ৫ ট্রাক

মোঃ সাগর হোসেন,বেনাপোলঃ
বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারত থেকে আমদানিকৃত কেমিক্যাল দাহ্য পদার্থ ব্লিচিং পাউডার বোঝাই ভারতীয় ৫টি ট্রাকে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে পণ্যসহ ট্রাকগুলো পুড়ে ভস্মিভূত হয়েছে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট প্রায় ৩ ঘন্টা চেষ্ঠার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন লাগার সঠিক কারণ জানা যায়নি।

আজ শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) ভোর ৫টার দিকে বেনাপোল বন্দরের ট্রাক টার্মিনালের টিটিআই (ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড) মাঠে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় বন্দরের মধ্যে থাকা আমদানি পণ্যবাহী অনেক ভারতীয় ট্রাক দিক বিদিক ছুটাছুটি করতে থাকে।

স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে বেনাপোল ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট এসে ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। ভারতীয় ট্রাকগুলোতে বন্দরের বাইরে আগুন লাগায় বেনাপোল বন্দর আরও একটি ভয়াবহ অগ্নিকান্ড থেকে রেহাই পেল।

জানা গেছে, ব্লিচিং পাউডার দাহ্য পদার্থ। অতিরিক্ত গরমে ও এতে পানি লাগলে আগুন ধরে যায়। এর আগেও লিংক রোডে কয়েকটি ব্লিচিং পাউডার পণ্যবাহী ভারতীয় ট্রাকে আগুন লেগে পণ্যসহ ট্রাকগুলো ভস্মিভূত হয়েছে। তারপরও বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্লিচিং পাউডারের ব্যাপারে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি।
বন্দরের নিরাপত্তারক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভারত থেকে আমদানিকৃত ব্লিচিং পাউডার বোঝাই ৫টি ট্রাক বন্দরের টিটিআই মাঠে আনলোডের অপেক্ষায় কয়েকদিন ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। ট্রাকে পণ্য ত্রিপল দিয়ে ঢাকা ছিল। ভোরের দিকে অতিরিক্ত গরমে প্রথমে একটি ট্রাকে আগুন ধরে যায়। পরে পাশে থাকা আরো ৪টি ট্রাকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অতিরিক্ত গরমের কারণে হয়তো ব্লিচিং বোঝাই ট্রাকে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বেনাপোল সিএন্ড এফ এজেন্ড মুক্তা ট্রেডিং এর সত্বাধিকারী আব্দুল মুন্নাফ বলেন, খামখেয়ালী পনা ও অব্যবস্থার কারনে এরকম অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়েছে। যেখানে অগ্নিকান্ড ঘটেছে সেই স্থানটি একটি টার্মিনাল। এখানে ভারতীয় গাড়ি রাখা হয় বলে নাম হয়েছে ভারতীয় ট্রাক টার্মিনাল। টার্মিনালের মধ্যে রয়েছে আমদানিকৃত অন্যান্য পণ্য। যা রাখার কথা নয়। আবার এসব দাহ্যপণ্য ফাঁকা জায়গায় রাখার কথা থাকলেও তারা এই টার্মিনালের মধ্যে রেখেছে। তিনি আরো বলেন, বেনাপোল স্থল বন্দরের একটি নিজস্ব ফায়ার সার্ভিস টিম রয়েছে। তারা অগ্নি নির্বাপকের কোন কাজ করে নাই। খোজ নিয়ে জানা গেছে তাদের গাড়িতে পানি নেই। এরা আবার বছরের পর বছর বন্দর থেকে বেতন ভাতা ও গাড়ির তেল খরছ নিচ্ছে প্রতনিয়ত।

তৌহিদুজ্জামান নামে একজন সিএন্ডএফ কর্মচারী বলেন, যতবার এই বন্দরে অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়েছে ততবারই ছুটির  দিনে। আজ ও ছুটির দিন। এছাড়া এসব দাহ্যপদার্থ জাতিয় পণ্য কেনই বা এই টার্মিনালে রাখা হয়েছে তাও ক্ষতিয়ে দেখার বিষয়।

স্থানীয় একাধিক সিএন্ডএফ কর্মচারীরা বলেন, ভারতীয় যে সব ট্রাকে এজাতীয় পণ্য আসে তা একদিনের মধ্যে বন্দর থেকে খালাস করে নিয়ে যাওয়ার কথা। তারপরও ওই ট্রাকগুলো প্রায় ১৫ দিন এই টার্মিনালের মধ্যে অবস্থান করছে। ট্রাকের চালক ও হেলপাররা ট্রাকের মধ্যে বসে ধুমপান করে থাকে এবং ট্রাকের নীচে রান্নার কাজ করে। সেখানে থেকে আগুন লাগতে পারে বলে তারা মন্তব্য করেন।

বেনাপোল ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন মাস্টার রতন কুমার দেবনাথ বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট টানা তিন ঘণ্টা চেষ্টার পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। কি কারণে আগুন লেগেছে তা তদন্ত না করে বলা সম্ভব হচ্ছে না।’

বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি কামাল হোসেন ভুইয়া বলেন স্থল বন্দরে অগ্নিকান্ড সংঘটিত হওয়ার পর  ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি পুলিশ ও অগ্নিনির্বাপক এর কাজ করছে।

বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, সাধারণত ব্লিচিং পাউডারে পানি লাগলে বা অতিরিক্ত গরমের কারণে আগুন ধরে যায়। তবে সঠিক কি কারণে ভারতীয় ব্লিচিং বোঝাই এ ট্রাকগুলোতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত না করে এখনই বলা যাচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনি বলা সম্ভব না।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)