সূর্য থেকে ধেয়ে আসছে প্লাজমা

বিজ্ঞান ডেস্ক :

সূর্য থেকে ছিটকে আসা ‘প্লাজমার গোলক’ পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে। বলা হচ্ছে, ১৪ এপ্রিল এটি আঘাত হানবে পৃথিবীতে। এর আঘাতে মেরুজ্যোতি আরো বড় হয়ে দেখা দেয়া ছাড়া তেমন ক্ষতিকর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূর্যে গত ১১ এপ্রিল একটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে। ফলে সৃষ্ট করোনাল ম্যাস ইজেকশন (সিএমই) প্লাজমা তীব্রগতিতে ধেয়ে আসছে পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহের দিকে।

স্পেসওয়েদার ডটকম সূত্র বলছে, এআর ২৯৮৭ নামের একটি মৃত সানস্পটে বিস্ফোরণটি ঘটে। এতে বিকিরণ আকারে প্রচুর পরিমাণে শক্তি নির্গত হচ্ছে। এর ফলে সেখানে সৃষ্ট করোনাল ম্যাস ইজেকশন (সিএমই) পৃথিবীতে প্রভাব ফেলতে পারে।

সানস্পট হলো সূর্যের পৃষ্ঠের অন্ধকার অঞ্চল। স্পেস ওয়েদার প্রেডিকশন সেন্টার বলছে, সূর্যের ভেতর থেকে তীব্র চৌম্বকীয় প্রবাহের কারণে এগুলোর সৃষ্টি। এই দাগগুলো অস্থায়ী; স্থায়িত্ব কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত।

ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফেরিক রিসার্চের (এনসিএআর) ফিলিপ জজ বলেন, ‘মৃত সানস্পটের ধারণাটি যতটা না বিজ্ঞান, তার চেয়ে বেশি কাব্যিক। কিন্তু সূর্যের পরিচলন এই দাগগুলোকে আলাদা করে ফেলে। এতে শান্ত সৌরপৃষ্ঠ চৌম্বকীয়ভাবে উত্তেজিত হয়ে ওঠে।’

এআর২৯৮৭-এর ভবিষ্যৎ যাই হোক না কেন, ১১ এপ্রিল সূর্যের দাগটি সি-শ্রেণির সোলার ফ্লেয়ার নির্গত করে। সূর্যের দাগের ওপর প্লাজমা এবং চৌম্বক ক্ষেত্রগুলো চাপের মধ্যে থাকলে সাধারণত এই ধরনের অগ্নিশিখা তৈরি হয়, তারা বাইরের দিকে ছুটে যায়।

কারণ এগুলো সূর্যের ভেতরে নিচের দিকে গেলে ঘন উপাদানে পরিণত হবে। সি-শ্রেণির শিখাগুলো খুব কমই সরাসরি পৃথিবীতে কোনো প্রভাব সৃষ্টি করে। কখনও কখনও অগ্ন্যুৎপাতের মতো সৌরশিখাগুলো করোনাল ভর নির্গমন করে থাকে। এতে সূর্য থেকে প্লাজমা এবং চৌম্বকক্ষেত্রের বিশাল অগ্ন্যুৎপাত ঘণ্টায় মিলিয়ন মাইল বেগে মহাকাশে বাইরের দিকে ছুটতে থাকে।

স্পেসওয়েদার লাইভ বলছে, সি-শ্রেণির সোলার ফ্লেয়ারগুলো খুব কমই সিএমইকে উসকে দেয়। যখন এমনটা ঘটে, তখন সিএমইগুলো মন্থর ও দুর্বল থাকে।

যখন সিএমই পৃথিবীর চারপাশের চৌম্বক ক্ষেত্রে আঘাত করে, তখন ইজেকশনের মধ্যে চার্জযুক্ত কণাগুলো উত্তর ও দক্ষিণ মেরু থেকে নির্গত চৌম্বকীয় ক্ষেত্র রেখাগুলোর নিচ দিয়ে চলতে পারে। এগুলো বায়ুমণ্ডলের গ্যাসগুলোর সঙ্গেও মিশে যেতে পারে। পরে এগুলো ফোটন আকারে শক্তি মুক্ত করে স্থানান্তরিত হয়। চকচকে এই পর্দা অরোরা বা মেরুজ্যোতি নামে পরিচিত। সূর্য পৃষ্ঠের শান্ত সময়ে, সৌরবায়ু নামে পরিচিত কণার প্রবাহ মেরু অঞ্চলে অরোরাকে উসকে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। বড় একটি সিএমই চলাকালে গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্রের বৃহত্তর ব্যাঘাতের অর্থ হলো অরোরা অনেক বিস্তৃত পরিসরে দেখা দিতে পারে।

সূর্য পৃষ্ঠের শান্ত সময়ে, সৌরবায়ু নামে পরিচিত কণার প্রবাহ মেরু অঞ্চলে অরোরাকে উসকে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। বড় একটি সিএমই চলাকালে গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্রের বৃহত্তর ব্যাঘাতের অর্থ হলো অরোরা অনেক বিস্তৃত পরিসরে দেখা দিতে পারে।

স্পেস ডটকম জানিয়েছে, মার্চের শেষে পৃথিবীর দিকে ছুটে এসেছিল সিএমই, যার প্রভাব কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চল এবং নিউজিল্যান্ডেও বিস্তৃত হয়েছিল।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, এআর২৯৮৭ এর প্রভাবে ১৪ এপ্রিল ছোটোখাটো ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় হতে পারে। এর প্রভাবে স্যাটেলাইটের কার্যক্রম এবং পাওয়ার গ্রিডে কিছুটা ঝামেলার সৃষ্টি হতে পারে। এ সময় স্বাভাবিকের চেয়ে কম অক্ষাংশে দৃশ্যমান হতে পারে অরোরা।

সূর্য এখন তার ২৫তম সৌরচক্রে রয়েছে। তাই এ মাসে সূর্য তার ক্রিয়াকলাপ বাড়াচ্ছে। ২০২৫ সাল নাগাদ তা সর্বোচ্চ হতে পারে, যার মানে আরো অনেক সৌরঝড় বা অরোরার মুখোমুখি হতে পারে পৃথিবী।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)