সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহ নিয়ে বিভ্রান্তি ,তদন্তের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহ নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে বিভ্রান্তিরকর তথ্য। দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে হাসপাতালটিতে খাদ্য সরবরাহের সরকারি ঠিকাদার হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন মো. নজরুল ইসলাম। সম্প্রতি প্রতিপক্ষ একাধিক সহিংসতা মামলার আসামী কর্তৃক সুবিধা নিয়ে হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহ নিয়ে প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

একপাক্ষিক প্রকাশিত সেই সংবাদে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ ঠিকাদার বা সংশ্লিষ্ট কারো বক্তব্য নেওয়া হয়নি। হাসপাতালের ভর্তি রোগীদের সঙ্গে কথা না বলেই মনগড়া বক্তব্য লিখে প্রচার করা হয়েছে। প্রতিপক্ষের নিকট থেকে কিছু আর্থিক সুবিধা নিয়ে অনৈতিক সাংবাদিকতা করছে ওই চক্রটি।

হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী তরুণ জানান, আমি চার দিন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। সকালে পাউরুটি, একটি পাকাকলা ও চিনি, ডিম দেওয়া হয় একটি। দুপুরে কোন দিন মাছ-তরকারি আবার কোনদিন মাংস ও ভাত দেওয়া হয়। খাদ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম আমার চোঁখে পড়েনি।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের বাবুচ্চি মিঠু বলেন, মিথ্যে ও মনগড়া সংবাদ প্রচার করেছে। সেখানে কারো স্বাক্ষাতকার নেয়নি। লিখেছে পাউরুটি দেওয়া হয় ৫০ গ্রাম অথচ দেওয়া হয় ৮৫ গ্রাম। ডায়টেবিস রোগীদের আটার রুটি দেওয়া হয় না অথচ প্রতিদিনই আটার রুটি দেওয়া হয় ৩০০ গ্রাম। এছাড়া লিখেছে পাঙাস মাছ দেওয়া হয় অথচ কখনোই পাঙ্গাস মাছ রোগীদের দেওয়া হয় না রোগীদের। গরুর দুধ দেওয়া হয় না দেওয়া হয় প্যাকেটজাত ডানো দুধ। কেননা গরুর দুধ সিডিউলে উল্লেখ নেই।

তিনি বলেন, ডায়বেটিস রোগীদের সকালে চারপিস আটার রুটি, দুইটা করে ডিম ও একটি পাকা কলা দেওয়া হয়। সপ্তাহে তিন দিন মাংস ও চারদিন মাছ খাওয়ানো হয়। মাছ দেওয়া হয় রুই, মৃগেল ও কাতলা। মাছের দিন তরকারির সঙ্গে থাকে আলু। মাংসের সঙ্গেও থাকে আলু। মনগড়া সংবাদ প্রকাশ করে হাসপাতালের সুনাম নষ্ট করছে এই চক্রটি।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ হুসাইন সাফায়াত বলেন, স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি আমরা দেখেছি। সেখানে কোন সঠিক তথ্য উপাত্ত নেই। মনগড়া ও কাল্পনিক তথ্য দিয়ে সংবাদটি প্রকাশ করা হয়েছে। সংবাদ প্রকাশের আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য নেওয়া হয়নি। প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, টেন্ডার ছাড়াই কোটি টাকা উত্তোলন করে নিচ্ছে ঠিকাদার। টেন্ডারের বিষয়টি আদালতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

তবে পূর্বের ঠিকাদারই খাদ্য সরবরাহ করছেন যথানিয়মে। টেন্ডার কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত দর অনুযায়ী তাকে বিল প্রদান করা হচ্ছে। যা তৎকালীন বাজারদর। দরপত্রের শর্তাবলীতে উল্লেখ রয়েছে, নতুন ঠিকাদার নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত একই দরে মালামাল সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে পূর্বের ঠিকাদর। সেই আলোকে রোগীদের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মালামাল সরবরাহ করছেন ঠিকাদার নজরুল ইসলাম।

তিনি জানান, রোগীদের খাদ্য সরবরাহে রুই, কাতলের বদলে মাছ দেওয়া হয় পাঙ্গাস, ডায়বেটিস রোগীদের আটার রুটি দেওয়া হয় না, চাল, ডাল কম দেওয়া হয় যা কিছু লেখা হয়েছে সেগুলো আদৌ সঠিক নয়। হাসপাতালটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। সকল সময় বিশিষ্ট মানুষজনসহ সাংবাদিকরাও যাতায়াত করেন। কখনো কোন মানুষ বা রোগীরা খাদ্য সরবরাহ খারাপ হচ্ছে এমন কোন অভিযোগ দেয়নি। প্রকাশিত সংবাদটি দেখে হাসপাতালে অনেক সাংবাদিকও এসে সরেজমিন দেখেছেন। দেখে তারাও খাবারের মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রোগীদের সরবরাহকৃত খাবারের মান যথেষ্ট ভালো রয়েছে।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন সাফাফাত আরও বলেন, এখন কেউ যদি প্রপাগান্ডা ছড়ায় তবে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ এখানে শুধু ঠিকাদার নয় সদর হাসপাতাল একটি সরকারি প্রতিষ্ঠাণ। ঠিকাদারের কাছ থেকে মালপত্র যথানিয়মে বুঝে নেওয়ার পর সরকারি বাবুচ্চিরা সকালের নাস্তা বিলিবন্টন, রান্না করা দুপুর ও রাতের খাবার রোগীদের মাঝে বিতরণ করেন। আমি বলবো যে কেউ সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে ও সরেজমিন বাস্তবতা দেখে তারপর সংবাদ প্রকাশ করুন। কারো প্ররোচনায় পড়ে মিথ্যে প্রপাগান্ডা ছড়াবেন না।

হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহের ঠিকাদার এস.এম নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন সকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের খাদ্যের চাহিদাপত্র প্রদান করেন। চাহিদা অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ করা হয়। সেখানে তদারকি কমিটি রয়েছে। চাদিহা অনুযায়ী তদারকি কমিটি মাল গ্রহণ করে স্বাক্ষর করেন। তারপর সরকারি কর্তৃপক্ষ বাবুচ্চির কাছে সেগুলো হস্তান্তর করেন।

একটি রোগীকে তিন বেলা খাবার বাবদ সরকার ১২৫ টাকা বরাদ্দ দেয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী খুবই নগন্য। এছাড়া ১২৫ টাকা থেকে ১৪.৫% ভ্যাট ও আয়কর কর্তন করে সরকার। তাছাড়া ঠিকাদার প্রফিট ১০%। একজন রোগীর বরাদ্দের ১২৫ টাকা থেকে মোট ২৪.৫% মাইনাস থাকে অর্থাৎ ৩০.৬০ টাকা। এসব বাদ দিয়ে একজন রোগী ৯৪.৪০ টাকার তিনবেলা খাবার পায়।

তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি থাকলেও রোগীদের স্বার্থ বিবেচনা করে যথানিয়মেই খাদ্য সরবরাহ করা হয়। কখনো কোন অনিয়মের অভিযোগ নেই আমার বিরুদ্ধে। খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রতি সিভিল সার্জনই আমাকে গুড উইল সনদ প্রদান করে গেছেন। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের তৎকালীন বাজারদর অনুযায়ী অদ্যবদি খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে যার দাম বাজারে দ্বিগুণ।

পূর্বের মূল্য অনুযায়ী সরবরাহ অব্যহত থাকায় রোগী ও সরকার উভয়ই লাভবান হচ্ছে। একটি চক্রের হয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের পরিবর্তে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমি সরকারের সকল সেক্টরের গোপন ও প্রকাশ্য তদন্তের মাধ্যমে প্রতিকার দাবি করছি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)