কয়েক লাখ বছরের পথ ঘুরে পৃথিবীর কাছে আসছে এই ধূমকেতু
বিজ্ঞান ডেস্ক:
সৌরমণ্ডলে ঢোকার কয়েক লাখ বছর পর পৃথিবীর কাছাকাছি আসছে এক মহাজাগতিক আগন্তুক। হয়ত আর এক মাস পরেই আসবে সে।
এই প্রথম পৃথিবীর কাছাকাছি আসছে সে। আসছে শেষবারের মতোও। কারণ, সূর্যের প্রখর অভিকর্ষ বলের টানে তার আত্মাহুতি দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যদি তা শেষ পর্যন্ত নাও হয় তাহলে এবারের মতো সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে আবার সে ফিরে যাবে যেখান থেকে বেরিয়ে সে এই সৌরমণ্ডল পরিক্রমা শুরু করেছিল। তারপর আর সে ফিরেও আসবে না এই সৌরমণ্ডলে। থেকে যাবে আন্তর্নক্ষত্র মাধ্যমে (ইন্টারস্টেলার স্পেস)।
এই মহাজাগতিক আগন্তুক আদতে একটি ধূমকেতু। কয়েক লাখ বছর ধরে এই সৌরমণ্ডল পরিক্রমা করলেও জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নজরে যা প্রথম ধরা দিয়েছিল গত বছর জুলাইয়ে।
এর গতিপথ পরীক্ষা করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সৌরমণ্ডলকে চার পাশ থেকে ঘিরে রেখেছে গোলকের আকারে বরফের যে মহাসাম্রাজ্য, সেই ওরট ক্লাউড থেকে বেরিয়েই কয়েক লাখ বছর আগে এই মহাজাগতিক আগন্তুক ঢুকে পড়েছিল সৌরমণ্ডলে। তারপর সে কয়েক লাখ বছর ধরে সৌরমণ্ডল পরিক্রমা করেছে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে গিয়ে।
তাকে এতদিন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দেখতে পাননি তা সূর্যের পিছনে ছিল বলে। গত জুলাইয়ে এই ধূমকেতুটি বিজ্ঞানীদের নজরে পড়ে যখন তখন সে ছিল বৃহস্পতি থেকে কিছুটা দূরে।
২০২১-এ প্রথম নজরে পড়ে বলে জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই ধূমকেতুটির নাম— ‘সি/২০২১-০৩’। এর আরো একটি নাম রয়েছে, ‘প্যানস্টার্স’ ধূমকেতু। যেহেতু প্যানস্টার্স টেলিস্কোপেই প্রথম ধরা দিয়েছিল এই ধূমকেতু, গত জুলাইয়ে।
নাসা জানিয়েছে, আগামী ৮ মে এই ধূমকেতুটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি আসবে। ওই দিন পৃথিবী থেকে তার দূরত্ব থাকবে ৮ কোটি ২০ লক্ষ কিলোমিটার। এ মাসের ২১ তারিখে এই ধূমকেতুটি চলে যাবে সূর্যের সবচেয়ে কাছে। ০.২৯ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট অথবা ‘এইউ’ (এক এইউ বলতে বোঝায় সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব) দূরত্বে। বাইনোকুলারের সাহায্যে তা দেখাও যাবে।
নাসা জানিয়েছে, ওই দূরত্বে পৌঁছনোর পর সূর্যের যে জোরালো অভিকর্ষ বল থাকবে তার টানে প্যানস্টার্স ধূমকেতুর আত্মাহুতির সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। তবে সেই টান যদি শেষমেশ এড়াতেও পারে তা হলেও তার কক্ষপথ ধরে এই ধূমকেতুটি বেরিয়ে যাবে সৌরমণ্ডল ছেড়ে। তার আর সৌরমণ্ডলে ফেরার সম্ভাবনা থাকবে না। থেকে যাবে আন্তর্নক্ষত্র মাধ্যমেই।