আশাশুনিতে ব্লাস্ট রোগে কৃষকদের নাকানি চুপানি
জি এম মুজিবুর রহমান :
চলতি বোরো মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে কৃষকরা ধান চাষ করেছেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এখন ধান ধান ঘরে উঠার সময় আসতেই কৃষকদের মনে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে ব্লাস্ট রোগ। ফলে উপজেলার কৃষকদের মনে ব্লাস্ট আতঙ্ক বিরাজ করছে। আশাশুনি উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ৭ হাজার ৭ শত ৫০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। কৃষকদের বোরো ধান চাষের সময় ব্যাপক শ্রম, বেশী অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হয়। এজন্য কৃষকরা এ সময় আত্মীয় কুটম সম্পর্ক বজায় রাখতে বাইরে বেড়ানোর সুযোগ কমই পেয়ে থাকে। অনেক কষ্ট, অনেক সময়, অর্থ ও শ্রম ব্যয় করে বোরো ধান ক্ষেতের দৃশ্য সুখকর ছিল। মহান আল্লাহর কৃপায় বেশ ভালই ছিল কৃষকদের মনের তৃপ্তিবোধ।
উপজেলা কৃষি দপ্তরও বেশ তৎপরতার সাথে কৃষকদের সুবিধা অসুবিধা জানান দিতে মাঠেই কাজ করে আসছেন। কিন্তু সকল তোড়জোড় ও কার্যক্রমের মুখে ছাই দিয়ে হঠাৎ করে ধান ক্ষেতে নেমে আসে ‘ব্লাস্ট ’ নামে বিধ্বংসী রোগ। রোগের আক্রমন সম্পর্কে আগে থেকেই কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, নিয়মিত মাঠে থেকে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে কৃষকদের সজাগ করার কাজ করেছেন।
কিন্তু সবকিছুকে উপেক্ষা করে ব্লাস্ট এর প্রাদুর্ভাব আশাশুনির বোরো ধানের জমিতে শুরু হয়। এমন কোন ইউনিয়ন নেই যেখানে ব্লাস্ট এর আক্রমন হয়নি। কৃষি অফিসারদের সাথে যোগাযোগ, কীটনাশকের দোকানে ছোটাছুটি, প্রতিবেশী কৃষকদের সাথে শলাপরামর্শ কোন কিছু করতে বাদ রাখেনি কৃষকরা। যখন যে উপদেশ ভাল মনে হয়েছে তাই করেছে কৃষকরা। কিন্তু না ব্লাস্ট প্রতিরোধ পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। অনেক কৃষক শতচেষ্টা সত্বেও কিছু জমির ধান রক্ষা করতে পারেনি। বর্তমানে ব্লাস্ট এর আক্রমন কমে গেলেও কৃষকদের মনে শঙ্কা এখনো লেগেই আছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাজিবুল হাসান বলেন, ব্লাস্ট এর আক্রমন ও রোগ প্রতিরোধে করনীয়তা সম্পর্কে আমরা বাজার পর্যায়ে ভিডিও প্রদর্শনী, গ্রামে গ্রামে কৃষকদের কাছে লিফলেট বিতরন, উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা গ্রুপ মিটিং, কীটনাশক ডিলারদের মাধ্যমে ব্লাস্ট প্রতিরোধে ঔষধ সরবরাহ, মাঠ দিবসে ব্লাস্ট নিয়ে আলোচনাসহ কৃষকরা যখনই আমাদেরকে জানিয়েছে তখনই তাদের পাশে থেকে সহযোগিতা দিয়েছি। তাছাড়া প্রতিদিনই উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা স্ব স্ব ব্লকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এতকিছুর পরও ঔষধ বিক্রেতারা অচেনা অজানা ভিন্ন কোং ঔষধ কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া, কৃষকরা ডোজ ঠিক না রেখে ইচ্ছেমত ঔষধ ব্যবহার করা, প্রয়োগ বিধি গুরুত্ব সহকারে না মানা এবং কৃষকরা ভুলবসত ঘাস মারা ঔষধ ধানে ব্যবহার করাসহ নানাবিধ ত্রুটির কারনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্লাস্ট আক্রমন বেড়ে যায়। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে ব্লাস্ট আক্রমন নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। উপজেলার প্রায় ৩০ হেক্টর জমির ব্লাস্ট আক্রান্ত ক্ষেত থেকে ব্লাস্ট দমন করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে এলাকায় ব্লাস্ট আক্রমন নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। ইনশাল্লাহ এভাবে শেষ না নামলে আশানুরুপ ফসল উৎপাদিত হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।